শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

'মিডিয়ার মিথ্যা সংবাদ মানুষকে ইসলাম গ্রহণে অনুৎসাহিত করে'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বেলায়েত হুসাইন।।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্যামুয়েল গ্যব্রিয়েল। তার পরিচয় ছিল একজন খৃষ্টান ধর্মযাজক হিসেবে। কোন একটি কাজে তিনি সৌদি আরবের জেদ্দায় আসেন এবং কিছুদিন এখানে অতিবাহিত করেন। আর যাপিত দিনগুলো জেদ্দার মুসলিমদের সঙ্গেই তার ওঠাবসা করতে হয়। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন তার কল্পনার জগতের মুসলিম আর জেদ্দার মুসলিমদের মাঝে বিস্তর ফারাক; মুসলিমরা গোঁড়া ও উগ্র টাইপের হয়-স্যামুয়েলের ধারণা ছিল অনেকটাই এরকম।

বস্তুত তার কল্পনার জগতটায় মুসলিমদের প্রতি এই অনীহা ও ভুল ধারণা সৃষ্টি হয় পত্রপত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ ও তথ্যের উপর ভিত্তি করে। মুসলিমদের প্রতি এ ধরণের নেতিবাচক ধারণা থাকা সত্ত্বেও খৃষ্টান ধর্মযাজক স্যামুয়েল ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এই প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে কীভাবে তিনি মুসলিম হলেন আরবি গণমাধ্যম সাবক ডট ও আরজি থেকে বাংলায় অনুবাদকৃত সেই কথাগুলো তার মুখ থেকেই শোনা যাক:-


আমি গ্যাব্রিয়েল, কখনোই আমি ভাবিনি যে সৌদি আরব বিশেষকরে জেদ্দায় আসাটা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিবে এবং নিজ সত্তাকে আমূল পরিবর্তন করে ছাড়বে। আর জেদ্দায় কাটানো দিনগুলো যে,আমাকে খৃষ্টধর্ম থেকে সরাসরি ইসলামের আলোতে নিয়ে আসবে-এটা ছিল আমার কল্পনার অতীত! বাস্তব কথা হল, সৌদির মুসলিমদের পারস্পরিক আচার-ব্যবহার আমাকে ইসলামধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে।

অমুসলিম হওয়ায় আমি জেদ্দায় প্রবেশের আগে একটু আত্মসংশয়ে ভুগছিলাম; কল্পনার মুসলিমদের কথা ভেবে ভয়ভয় লাগছিল আমার যে, কিভাবে আমি তাদের সঙ্গে চলাফেরা এবং ওঠাবসা করব? আর আমাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাইয়ে দিচ্ছিল বিগত দিনে আমার পড়া পত্রপত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিউজ ও তথ্যগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন মানুষের মুখেও মুসলিমদের ব্যাপারে অনেক বদনাম শুনেছি, বিশেষকরে সৌদি আরবের মুসলিমরা খুবই জঘন্য সেটাই আমাদের সমাজে প্রসিদ্ধ ছিল। সারকথা, এসব বিষয়ই মূলত ইসলাম ধর্ম ও সৌদি-সমাজ ব্যবস্থার প্রতি আমার কল্পনার জগতে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে ।

তবে জেদ্দায় এসে সবকিছু স্বচক্ষে দেখার পরে আমার কল্পনা জগতের ভুল ভাঙতে শুরু করে। পূর্বে পঠিত পত্রপত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিউজ ও তথ্যগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। এসময় আমি ইংরেজিতে অনুবাদকৃত কিছু সৌদি বইপত্র ও ইসলামি ম্যাগাজিন পড়া আরম্ভ করি ; আলহামদুলিল্লাহ! একসময় মহান আল্লাহ আমার অন্তরে হেদায়াতের নূর ও আলো প্রবেশ করান এবং সবকিছু স্বচক্ষে দেখে, বুঝেশুনে আমি ইসলাম গ্রহণ করি।

ইসলাম গ্রহণের পরে আমি নতুন করে কোরআনে কারিমের ইংরেজি অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি; কারণ, ইংরেজিতে আগের অনুবাদ করা অডিশনগুলোর ভাষা ছিল প্রাচীন। এজন্য আমি আধুনিক ইংরেজিতে পবিত্র এই গ্রন্থ অনুবাদের কাজে হাত লাগাই।জেদ্দায় কাটানো দিনগুলোয় সৌদি সামাজিক অবস্থাকে কোরআন অনুগামী পাই এবং আমিও তাদের পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিই।

এর আগে যখন আমি জেদ্দায় থাকা শুরু করি, তখনই স্থানীয় মুসলমানদের অসাধারণ অতিথিপরায়ণতা এবং অন্যের প্রতি সম্মানবোধ দেখি; আমি অমুসলিম হওয়ার পরও আমার সঙ্গে তাদের সদাচার ছিল অত্যন্ত প্রশংসা যোগ্য। এখান থেকেই মূলত আমার মনে সৌদি আরব ও ইসলামধর্মের প্রতি ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টির সূচনা হয়।

তবে এর আগেও শৈশবে আমি আমার মায়ের থেকে শুনেছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই। আর সৌদিয়ানরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে। আর আরবরা খুব উত্তম চরিত্রের হয়। আমার মায়ের এসব কথা আমার অন্তরে গেঁথে ছিল তবে পারিপার্শ্বিকতা আমাকে এদিকে আগাতে দেয়নি বরং জোর করে আমাকে উল্টো পথে নিয়ে গেছে। তবে জেদ্দায় এসে মুসলমানদের দেখে মায়ের কথার মিল পাই।

এসব ব্যাপার আমার মনে খুব প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়,আমি ইসলাম সম্পর্কে আরো প্রচুর গবেষণা অব্যাহত রাখি। ইসলামে উদারতা ও ইনসাফের ব্যাপারে সম্যক ধারণা পাই। আর এটাও জানতে পারি যে,আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট সবাই সমান; তাকওয়া ব্যাতিত আজমের উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সৌদি আরবের মানবসমাজে প্রতিষ্ঠিত এসব নীতিনৈতিকতা ও উত্তম গুণাবলি ইসলাম গ্রহণে আমাকে প্রচন্ডভাবে আকর্ষণ করে ফেলে এবং এই অনুপ্রেরণার ফলশ্রুতিতে আমি নিজেকে একজন মুসলিম হিসেবে ভাবতে আরম্ভ করি।

আর আমি যখন ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেই, তারপরে যে সমস্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নিয়েছি, সবজায়গায়ই সৌদি আরব এবং দেশটির মানুষের কথা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছি। আর আমার ইসলাম গ্রহণে তাদের অবদানকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি বিশ্বময়। আমি সবসময় সৌদি নাগরিকদের ব্যাপারে বলি, তারাই সত্য ভাই-যারা আমার ইসলাম গ্রহণের মূল প্রভাবক।

[সৌদি আরবের ধর্মমন্ত্রণালয়ের একটি দল অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। সিডনির মুসলিম ঐক্য কেন্দ্রে এদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় গ্যাব্রিয়েলের। এ সময়ই অশ্রুসজল চোখে অত্যন্ত আবেগ নিয়ে তাদেরকে নিজ আত্মকাহিনী শুনান খৃষ্টান ধর্ম যাজক থেকে ইসলাম গ্রহণ করা নওমুসলিম গ্যাব্রিয়েল। ইসলাম পরবর্তী তার কি নাম রাখা হয়েছে সেটা জানা যায়নি]

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ