শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


ইসরায়েলি হামলায় পিতামাতা শহিদ: লায়ানের জন্মদিনে শুধুই কান্না!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় পিতামাতাকে হারিয়ে ভেঙেপড়েছে ছোট্ট ফিলিস্তিনি কন্যা শিশু লায়ান। বুধবার তার ১১ তম জন্মদিনের আনন্দটুকুও কেড়ে নিয়েছে দখলদার বাহিনী।

গত মঙ্গলবার গাজায় লায়ানদের ঘরের ওপর বোমাবর্ষণ করে ইহুদি বাহিনী তার পিতামাতাকে শহীদ করেছে-যার পরদিন বুধবার ভোরেই ছিল তার একাদশতম জন্মদিন।

আমার বাবা বেশ কিছুদিন ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়ে বাড়ির বাহিরে ঘুমাতেন,গাজার ওপর ইহুদিদের ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হবার পরে আমাদের ঘরটা একরকম বিরান পড়ে ছিল,বুধবার আমার জন্মদিন-এজন্য মঙ্গলবার আমার পিতামাতা বাড়িতে থাকবেন বলে স্থির করেন,আমি তখন আমার ফুফুর বাড়িতে অবস্থান করছিলাম,আগামীকাল আমার জন্মদিন উপলক্ষে আমরা সবাই একত্র হবো এবং আনন্দ করবো-এজন্য মা আমাকে ফুফুর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে আসার খবর পাঠালেন,কিন্তু যখন আমি আসলাম তখন আমার পিতামাতা আর পৃথিবীতে নেই; আল্লাহর নিকট চলে গেছেন আমাকে রেখে,জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের দেখা হবে ভেবেছিলাম কিন্তু হলোনা।

আমার পিতা আমাকে অনেক ভালবাসতেন আর আমিও তাকে ভালবাসতাম-আমি এই ভেবে খুশি হচ্ছিলাম যে,কাল আমি অনেক আদর পাবো বাবা-মার কাছ থেকে,কিন্তু আমার সব আনন্দ ইহুদিরা কেড়ে নিয়ে গেল! মা-বাবার সঙ্গে দেখা এবং কথা কোনটাই হলনা!’ কেঁদেকেঁদে বলছিল শিশু আয়ান।

লায়ান একটি প্রাইমারি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সে-সহ তার আরও ৩ টি ভাই ও ১টি বোনকে রেখে তাদের মাতাপিতা শাহাদাত বরণ করলেন। তার বোন ফাতেমা (১৪) হামলার সময় ঘরে ঘুমাচ্ছিলো, তবে আল্লাহর রহমতে সৌভাগ্যক্রমে সে অল্পের জন্য বেঁচে যায়। হামলায় লায়ানের দাদিমা আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।

প্রসঙ্গত,গাজা উপত্যকায় গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া দেড় দিনব্যাপী ইহুদি বাহিনীর ধারাবাহিক হামলায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কমপক্ষে ২৩ ফিলিস্তিনি শাহাদাত বরণ করেছেন।

বুধবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে, এছাড়াও আহত হয়েছেন ৭১ জনের বেশি ফিলিস্তিনি। যাদের মধ্যে ৩০ শিশু ও ১৩ নারী রয়েছেন।

সোমবার মধ্যরাতে নিজের বাড়িতে হামলা চালিয়ে প্রতিরোধ আন্দোলন ইসলামি জিহাদের এক কমান্ডারকে ইসরাইলি হানাদার বাহিনী হত্যার পর নতুন করে উত্তেজনা চলছে।

মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দখলদার বাহিনীর হামলায় ইসলামিক যোদ্ধারাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। হামলার জবাবে গাজা থেকেও অবৈধ ইসরাইলে বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে।

তেল আবিবের দাবি, ইসরাইলের ওপর রকেট হামলার প্রস্তুতি নেয়ার সময় এসব হামলা চালানো হয়েছে। যদিও ধারাবাহিক হামলায় হতাহত অধিকাংশই বেসামরিক ফিলিস্তিনি।

ইসলামিক জিহাদ নেতা খাদির হাবিব বলেন, ‘ইসরাইলের অস্তিত্ব মুছে দিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করব। সে পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত থাকবে। উন্মাদ নেতানিয়াহুকে মাথা নত করতে বাধ্য করব। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া এই লড়াই তখনই শেষ হবে, যখন অপরাধীরা পরাজিত হবে।’

বুধবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ইসলামি জিহাদ যদি রকেট নিক্ষেপ বন্ধ না করে, তবে তাদের আরও বড় আঘাত সইতে হবে। প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলছে, উত্তেজনার পরিণতির সম্পূর্ণ দায় ইসরাইলকে বহন করতে হবে। ইসলামি জিহাদের কমান্ডার আবু আল-আত্তার হত্যাকাণ্ড বিনাবিচারে ছেড়ে দেয়া হবে না।

এদিকে গাজা উপত্যকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরবর্তী নোটিশ না দেয়ার আগ পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
জাতিসংঘ পরিচালিত ফিলিস্তিনিদের শরণার্থী শিবিরের স্কুলও বন্ধ থাকবে বলে দেশটির শিক্ষামন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

ওয়াফা নিউজ এজেন্সি ও আল কুদস অবলম্বনে বেলায়েত হুসাইন

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ