শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বাবা হিসেবে শায়খ ছিলেন অতুলনীয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জাতির আধ্যাত্মিক রাহবার উলামায়ে কেরামকে আমরা শুধু একজন দাঈ হিসেবেই চিনি। তাদের বিস্তৃত জীবনের বাইরের অংশটুকুই আমরা জানি। কিন্তু একজন বাবা হিসেবেও তারা যে ছিলেন অতুলনীয় এবং পরিবার গঠনেও যে তারা আমাদের আদর্শ হতে পারেন তা হয়তো কখনো ভেবে দেখিনি। আমাদের ভাবনার আড়ালে থাকা সেসব শ্রেষ্ঠ বাবাদের একজন  উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.। প্রিয় বাবাকে নিয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন তার সুযোগ্য সন্তান মাওলানা মাহফুজুল হক। তার স্মৃতি, আবেগ ও অনুভূতিগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন আতাউর রহমান খসরু


বাবা হিসেবে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. ছিলেন অতুলনীয়। শত ব্যস্ততার মধ্যে আব্বা আমাদের যথেষ্ট সময় দিতেন। আমরা ১৩ ভাই-বোন। ৫ ভাই ও ৮ বোন। আমাদের আমাদের নিজে পড়াতেন। আমি নিজেই আব্বার কাছেই আরবি অক্ষর জ্ঞান লাভ করেছি। আব্বা নিজের সন্তান এবং সন্তানের সন্তানদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখতেন। সরাসরি পড়ালেখার জন্য সময় দিতেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ারও খবর নিতেন।তত্ত্বাবধান করতেন।

আব্বা ছিলেন খুবই হাসি-খুশি মানুষ। পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে তিনি সরল একটা সম্পর্ক বজায় রাখতেন। বড়দের সঙ্গে কিছুটা গাম্ভীয বজায় রেখে চললেও ছোটদের ব্যাপারে ছিলেন সরল। ছোটদের মতো করেই তিনি তাদের সঙ্গে মিশতেন।

আব্বা আদর ও শাসন কোনোটার চেয়ে কোনো কম ছিলো না। আদরের সময়ও সর্বোচ্চ আদর করতেন এবং শাসনের সময়ও সর্বোচ্চ শাসন করতেন। যেমন আমার যখন দুই বছর বয়স তখন আমি বাসার দোতালা থেকে জানালা দিয়ে রাস্তায় পড়ে যাই। আমাদের প্রতি আব্বা এতোটা স্নেহশীল ছিলেন যে, আব্বা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে পারেন নি। সিঁড়িতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। একইভাবে আমাদের সবার বড় ভাই –তখন তার বয়স খুব কম- এক সময় শরিয়তের বিধান মানার ক্ষেত্রে আব্বার অবাধ্য হলে তাকে ঘর থেকে বের করে দেন। শাসনের ক্ষেত্রে এতোটাও করেছেন।

পরিবারের ব্যাপারে আব্বার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিলো পরিবারের সব সদস্য হাফেজ হবেন। আব্বা এটা করেও গেছেন। তিনি চাইতেন সন্তানরা আলেম হবেন। সাধারণত বড়দের সন্তানরা বাবার মাদরাসায় পড়ে। মাদরাসা অন্য শিক্ষকগণ তখন তাদের শাসন করতে সংকোচ করেন। মাদরাসায় পড়ার সময় আমরা তখন বুঝতে পারি নি যে আমরা বিশেষ কারো সন্তান। তিনি চাইতেন আমরা যেনো সাধারণ দশটা ছেলের মতো পড়ালেখার স্বাভাবিক লেখাপড়াটা করতে পারি। অগ্রসর হতে পারি।

আমরা যখন কোনো শ্রেণিতে উঠতাম তখন আব্বা আমাদের লক্ষ্য করে ওই শ্রেণির গুরুত্ব কিতাবগুলো নিজে পড়ানোর দায়িত্ব নিতেন। যেমন আমরা বেশ কয়েকজন আব্বার কাছে তাফসিরে জালালাইন পড়েছি। মেশকাত পড়েছি। শুধু তাই নয়; মাদরাসার সেরা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধান যেনো আমরা পাই সে চেষ্টাও আব্বার ছিলো।

লেখাপড়ার শেষ করার পর শিক্ষকতার জীবনে আমরা কিভাবে সফল হবো, কাদের অনুসরণ করলে, তাদের পরামর্শ নিলে ভালো করবো সেভাবেই তিনি আমাদের প্রতিপালন করেছেন। পথচলার নির্দেশনা দিয়েছেন। লেখালেখির জন্য উৎসাহিত করেছেন।

উৎসব আনন্দের দিনগুলো আব্বা আমাদের সাথে পুরোপুরি মিশে যেতেন। সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতেন। আব্বাসহ আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম। আমাদের ঘুরতে নিয়ে যেতেন। যেমন, আব্বা-আম্মাসহ আমরা সবাই মিলে সাভার স্মৃতি সৌধে গিয়েছি।

আব্বার জীবনের বড় একটা দিক ছিলো কঠিন থেকে কঠিন মুহূর্তেও দীনের প্রশ্নে কোনো আপস না করা। আব্বা তিন সরকারের আমলে তিনবার জেলে গেছেন কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে পিছুপা হন নি। আব্বা যখন কোনো রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতেন, জেল-জুলুমের শিকার হতেন আমরা ভয় পেলে, ভেঙ্গে পড়লেও আব্বা ভয় পেতেন না, ভেঙ্গে পড়তেন না। তিনি আমাদেরকে সাহস যোগাতেন। বলতেন, আমি তো দীনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করছি। তোমরা চিন্তা কইরো না, আমার কিছু না হবে।

সব শেষে বলবো, শত ব্যস্ততার মধ্যেও আব্বা পরিবারকে সময় দিয়ে, ছেলে-মেয়ে সন্তান-সন্তুতিদের শিক্ষা-দীক্ষার তত্ত্বাবধান করে একটি আদর্শ পরিবার গঠনে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। আব্বা আমাদের গর্ব, জাতির জন্য উত্তম দৃষ্টান্ত।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ