শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


মিয়ানমারের বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছে গাম্বিয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার অভিযোগ তোলা নিয়ে শুনানিতে প্রশ্ন তুলেছিল মিয়ানমার। এর উত্তরে গাম্বিয়া জানায়, আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে অভিযোগ তোলার অধিকার আছে গাম্বিয়ার।

আজ বৃহস্পতিবার শুনানির শেষ ও তৃতীয় দিনে নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরে গাম্বিয়া।

মিয়ানমার দাবি জানায়, রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে সংক্ষুব্ধ হওয়ার কথা বাংলাদেশের, গাম্বিয়ার নয়। এ ছাড়া গণহত্যা নিয়ে যেসব দেশ মামলা করেছিল তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল, গাম্বিয়া সেরকম কিছুর ভুক্তভোগী নয়।

জবাবে গাম্বিয়ার প্রতিনিধি অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস জানান, ১৯৪৮-এর গণহত্যা সনদের বাধ্যবাধকতা পূরণ নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন তোলার অধিকার রয়েছে গাম্বিয়ার।

এ বিষয়ে অতীতের রায়ের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সনদের অংশীদার হিসেবে অন্তর্বর্তী আদেশের আবেদন করার অধিকারও গাম্বিয়ার রয়েছে।’

গাম্বিয়ার আরেক প্রতিনিধি পিয়েঁর দ্য আর্জেন আদালতকে বলেন, ‘মিয়ানমারের আইনজীবী ক্রিস্টোফার স্টকারের দাবি, কোনো অপরাধ ঘটে থাকলেও সে বিষয়ে গাম্বিয়ার মামলা করার অধিকার নেই। তারা কূটনৈতিক জায়গা থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন কিন্তু আদালতে আসতে পারেন না। স্টকারের এমন বক্তব্য সঠিক নয়।’

পিয়েঁর দ্য আর্জেন আরো বলেন, ‘জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী হিসেবে কনভেনশনের লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রাখে গাম্বিয়া।’

গতকাল বুধবার গাম্বিয়ার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল, গণহত্যার বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলার পেছনে আছে মূলত ওআইসি। তাদের অর্থায়নেই আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ এনেছে গাম্বিয়া।

স্টকারের দাবি, কনভেনশন অনুযায়ী গাম্বিয়া এই মামলার অধিকার রাখে, কোনো সংস্থা বা জোট নয়। ওআইসি এই মামলাটি করায় এই অভিযোগ আন্তর্জাতিক আদালতে টিকে না।

স্টকার আরও বলেন, গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বক্তব্যেও রোহিঙ্গা গণহত্যার কথা বলেননি গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট। সেখানে ওআইসির মন্ত্রীপর্যায়ের কমিটিতেও এই মামলার অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। যে কমিটির সভাপতি গাম্বিয়া। স্টকারের বক্তব্য খণ্ডন করে পিয়েঁর দ্য আর্জেন বলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বক্তব্যে গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গণহত্যার কথা বলেননি, মিয়ানমারের এমন যুক্তি টিকে না। কারণ গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘে বক্তব্য দেওয়ার পর জাতিসংঘ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে প্রতিবেদনটির তথ্যের ভিত্তিতেই গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে এই মামলা করা সিদ্ধান্ত নেয় গাম্বিয়া।’

তিনি এ বিষয়ে জানান, কোনো সংস্থা বা জোটের পক্ষে নয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গাম্বিয়া এই মামলা করেছে। ওআইসির হয়ে এই মামলা করেননি তারা। গাম্বিয়া ওআইসির সহায়তা চাইতেই পারে। কিন্তু সেই সহায়তা চাওয়ায় ওআইসিকে এই মামলার মূল আবেদনকারী হিসেবে বলা যায় না।

উল্লেখ্য,  গত মঙ্গলবার আইসিজে-এ ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে তিন দিন ব্যাপী এই শুনানি শুরু হয়। শুনানির প্রথমদিন মিয়ানমারের শীর্ষ নেতা সু চির উপস্থিতিতে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী নৃশংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগগুলো তুলে ধরেন গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।

এর মাঝে গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানির শুরুতে মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি। এতে তিনি গাম্বিয়ার আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনায় পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। গণহত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ। এই ঘটনায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নভেম্বরে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই কনভেনশন শুধু দেশগুলোতে গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয়; বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য বিচার করতে বাধ্য করে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর