শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


হোমিওপ্যাথিতে হেপাটাইটিস চিকিৎসা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হেপাটাইটিস বলতে যকৃতের প্রদাহ (ফুলে যাওয়া) বোঝায়। ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ বা অ্যালকোহলের মত ক্ষতিকারক পদার্থের কারণে ঘটা যকৃতের একটি রোগ। হেপাটাইটিস অল্প কিছু উপসর্গসহ বা কোনো উপসর্গ ছাড়াই ঘটতে পারে। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে জন্ডিস, এনরেক্সিয়া (ক্ষুধমান্দ্য) ও অসুস্থতাবোধ এর লক্ষণ বা উপসর্গ।

দুধরণের হেপাটাইটিস দেখা যায়, তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী। তীব্র হেপাটাইটিস ৬ মাসেরও কম স্থায়ী হয়, অন্য দিকে দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকে। মূলত হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে এই রোগটির সূত্রপাত, তাছাড়া অ্যালকোহল, নির্দিষ্ট কতগুলো ওষুধ, শিল্প-জৈব দ্রাবক এবং উদ্ভিদের টক্সিক জাতীয় পদার্থের কারণে এই রোগটি ঘটে। হেপাটাইটিস নিয়ে লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ।


বর্তমানে প্রায় ২৫৭ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও প্রায় ৭১ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ হেপাটাইটিস ‘বি’ আক্রান্ত লোকদের মধ্যে মাত্র ৯ ভাগ ও হেপাটাইটিস ‘সি’ আক্রান্ত লোকদের মধ্যে মাত্র ২০ভাগ লোকের পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় হয়েছে।

এছাড়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র ৮ ভাগ হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং মাত্র ৭ ভাগ হেপাটাইটিস ‘সি’ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাসের আক্রান্ত ৯০ শতাংশ রোগীই চিকিৎসার বাইরে থাকছে। শুরুতে হেপাটাইটিস চিকিৎসা না করলে তা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশে বেশ কয়েক লক্ষ মানুষ আজ হেপাটাইটিস-বি ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে আবার অনেকেই সংক্রামিত। যারা হেপাটাইটিস-বি দ্বারা আক্রান্ত তাদের ২৫ শতাংশ লিভারের দোষে ভোগেন। প্রতি বছর কয়েক হাজার বছর শিশু এই রোগে সংক্রমিত হয়। শরীরে এই ভাইরাস আসে কীভাবে? ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। ধরুণ মার শরীরে হেপাটাইটিস বির সংক্রমণ হয়েছে তা থেকে শিশুর শরীরে সংক্রামিত হয়। অধিকাংশ সময়ে শিশুর সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে।

দ্বিতীয় কারণ হল হরাইজন্টাল ট্রান্সমিশন অর্থাৎ এক শরীর থেকে অন্য শরীরে রোগের সংক্রমণ। যেমন ব্লাড ট্রান্সমিশন, যৌন সংসর্গ, ডায়ালিসিস, সূঁচ, সেলুনের ব্লেড ইত্যাদি।

হেপাটাইটিস শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রীক শব্দ হিপার যার অর্থ লিভার এবং ল্যাটিন শব্দ আইটিস যার অর্থ প্রদাহ, অর্থাৎ হেপাটাইটিস বলতে বুঝায় লিভার কোষের গঠনগত পরিবর্তন ও প্রদাহ । আমেরিকান হেরিটেইজ ডিকশনারী অনুসারে হেপাটাইটিস হল লিভারের প্রদাহ যার কারণ সংক্রামক বা বিষক্রিয়ার দ্বারা জন্ডিস, জ্বর, লিভার ইনলার্জ এবং পেটের বেদনা প্রভৃতি ।

হেপাটাইটিসের প্রকারভেদ: ১. হেপাটাইটিস 'এ ' ভাইরাস ২. হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাস ৩. হেপাটাইটিস 'সি' ভাইরাস ৪. হেপাটাইটিস 'ডি' ভাইরাস এবং ৫. হেপাটাইটিস 'ই ' ভাইরাস ।

হেপাটাইটিস এ: হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের কারণে হেপাটাইটিস এ রোগটি হয়। এটি সবচেয়ে পরিচিত হেপাটাইটিস রোগ। এটি সাধারণত সেইসব জায়গায় দেখা যায় যেখানে স্যানিটেশন ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুব খারাপ। সাধারণত দূষিত খাদ্য ও জল-আহারের মাধ্যমে এর সংক্রমণ ঘটে।

এটি স্বল্পমেয়াদি রোগ, যার উপসর্গগুলো সাধারণত তিন মাসের মধ্যে চলে যায়। হেপাটাইটিস এ রোগ হলে ইবুপ্রোফেন জাতীয় পেনকিলার দেয়া ছাড়া নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। টিকাকরনের মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ প্রতিরোধ করা যায়। সংক্রমণের সম্ভাব্য স্থানগুলোতে যেমন; ভারতীয় উপমহাদেশ, আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, দূরপ্রাচ্য এবং পূর্ব ইউরোপ যারা ভ্রমন করেন তাদেরকে হেপাটাইটিস রোগের টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।

হেপাটাইটিস বি: হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে হেপাটাইটিস বি রোগ হয়। রক্ত ও বীর্য এবং যোনি তরলের মত শরীরের তরলে এটি সংক্রমিত হয়। এটি সাধারণত অসুরক্ষিত যৌন মিলন বা ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্তের মধ্যে সংক্রমিত হয়। ড্রাগ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাধারানত এটি ঘটে। এই রোগটি সাধারণত ভারতবর্ষ ও চীন, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উপ-সাহারান আফ্রিকায় হয়ে থাকে।

হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজে থেকে এই সংক্রমণটিকে প্রতিরোধ করতে পারে ও প্রায় দু-মাসের মধ্যে সংক্রমণমুক্ত হয়ে যায়। তবে সংক্রমিত ব্যক্তি সংক্রমণের সময় অত্যন্ত অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে, কিন্তু এটি সাধারণত সুদূরপ্রসারী কোনো ক্ষতি করে না। অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে অবশ্য এর সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদী হয়, যাকে বলা হয় দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস বি। হেপাটাইটিস বি-র টিকা পাওয়া যায়। ড্রাগ ব্যবহারকারী ও উচ্চ ঝুকিসম্পন্ন অঞ্চলে যারা বসবাস করেন তাদের এ টিকাকরণের পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।

হেপাটাইটিস সি: হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের কারণে হেপাটাইটিস সি রোগটি হয়। এটি সাধারণত রক্তে ও খুব অল্প ক্ষেত্রে সংক্রামিত ব্যক্তির লালা, বীর্য বা যোনি তরলে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত যেহেতু রক্তে পাওয়া যায় তাই রক্ত থেকে রক্তের সংস্পর্শে এ রোগটি ছড়ায়।

এ রোগের লক্ষণগুলো অনেকটা ফ্লুয়ের মত, তাই অনেকে সাধারণ ফ্লুয়ের সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলেন। অনেক রোগীই নিজে থেকে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেন ও ভাইরাসমুক্ত হয়ে ওঠেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ভাইরাসটি দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর থেকে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে একে বলা হয় দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস সি। দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস সি'তে যারা ভুগছেন তারা এন্টিভাইরাল কতগুলো ওষুধ নিতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে কতগুলো অপ্রীতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও দিতে পারে। হেপাটাইটিস সি'র নির্দিষ্ট কোন টিকা এখনও পাওয়া যায় না।

অ্যালকোহলজনিত হেপাটাইটিস: প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করলে এটি দেখা যায়। প্রচুর পরিমাণে মদ্যপানে যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে এটি ক্রমশ হেপাটাইটিস রোগ ডেকে আনে। এটির সাধারণত কোনো উপসর্গ দেখা যায় না, একমাত্র রক্ত পরীক্ষা করলে ধরা পড়ে। অ্যালকোহলজনিত হেপাটাইটিসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি মদ্যপান চালিয়ে যায় তবে তা অত্যন্ত ঝুঁকির হতে পারে। সেক্ষেত্রে , অন্ত্রের কঠিনীভবন (সিরোসিস) ও যকৃতের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

হেপাটাইটিস ডি : হেপাটাইটিস ডি ভাইরাসের কারণে হেপাটাইটিস ডি রোগ হয়। একমাত্র যাদের হেপাটাইটিস বি হয়েছে তাদের মধ্যে এটি দেখা দিতে পারে। একমাত্র হেপাটাইটিস বি'র সঙ্গে হেপাটাইটিস ডি বাঁচতে পারে।

হেপাটাইটিস ই: হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের কারণে রোগটির কারণে হেপাটাইটিস ই রোগটি হয়। এটি হল স্বল্পস্থায়ী ও এর তীব্রতা কম। এক্ষেত্রে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির সংক্রমণ কম।

অটোইমিউন হেপাটাইটিস: এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদী রোগ নয়। এক্ষেত্রে শ্বেত রক্ত কণিকা যকৃতের মধ্যে আক্রমন করে। এর ফলে যকৃতের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত সাংঘাতিক কিছু ঘটতে পারে। এই রোগটির সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।

এর উপসর্গগুলো হলো- ক্লান্তি, তলপেটে ব্যথা, গাঁটের ব্যথা, জন্ডিস (চোখ ও চামড়ায় হলুদাভ বর্ণ) ও সিরোসিস। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ (প্রিডনিসোলন ) ক্রমশ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফোলা ভাব কমাতে পারে ও রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

মায়াজমেটিক কারণঃ *সোরা *সিফিলিস *সাইকোসিস *টিউবারকুলার।

কারণ: ভাইরাস- হেপাটাইটিস ' এ ' ভাইরাস; হেপাটাইটিস ' বি ' ভাইরাস ; হেপাটাইটিস ' সি' ভাইরাস ; হেপাটাইটিস ' ডি' ভাইরাস ; হেপাটাইটিস ' ই ' ভাইরাস

ছোঁয়াচে (একের থেকে অন্যের ) মল মূত্র থেকে হতে পারে । সরাসরি মুখ থেকে যেমন এক গ্লাসে পানি খাওয়া বা আক্রান্ত ব্যক্তির মুখে চুমু খাওয়া; পরোক্ষভাবে আসতে পারে যেমন কাপড় চোপড় থেকে আসতে পারে ।

ঘনবসতি এলাকায় যদি আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে তাহলে ছড়াতে পারে । অস্বাস্থ্যকর পরিবেশজনিত কারণে । রক্ত দেয়া ও নেয়ার মাধ্যমে । এ্যালকোহল।

★যেই সব লক্ষণ দেখা প্রকাশ পেতে পারে: জন্ডিস, বমি বমিভাব ও বমি, জন্ডিস থাকতে পারে, ডায়ারিয়া। পেশী ও গাঁটের ব্যথা, কম্পন, ক্ষুধামন্দা।  জ্বর থাকতে পারে, উচ্চ তাপমাত্রা (৩৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট অর্থাৎ ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশী।অসুস্থ বোধ, ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায় ।  মাথা ব্যথা, সমস্ত শরীরে ব্যথা,  মাঝেমধ্যে চোখ ও চামড়ার হলুদ হয়ে যাওয়া (যা জন্ডিস হতে পারে) দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিসের লক্ষণের মধ্যে পড়ে, সময় সময় ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, প্রসাবে হলুদ হয় ।  হতাশা বা বিষণ্নতা, ওজন হ্রাস পায় , সার্ভাইক্যাল লিস্ফনোড বৃদ্ধি পেতে পারে।  অসুস্থতার সাধারণ অনুভূতি, রক্ত স্বল্পতা, লিভার স্থান স্পর্শকাতর। শরীরে আমবাত, চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।

হোমিওসমাধান: রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয় এই জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক কে ডা.হানেমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে হেপাটাইটিস সহ যে কোন জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ভিওিক লক্ষণ সমষ্টি নির্ভর ও ধাতুগত ভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে চিরন্তন সত্য বলে কিছুই নেই । কেননা একসময় আমরা শুনতাম যক্ষা হলে রক্ষা নেই , বর্তমানে শুনতে পাই যক্ষা ভাল হয়। এ সবকিছু বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ফসল । হেপাটাইটিস চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি।

সামগ্রিক উপসর্গের ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হয়। এটিই একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে রোগীর কষ্টের সমস্ত চিহ্ন এবং উপসর্গগুলি দূর করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের অবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়। বিবিসি নিউজের ২০১৬ তথ্য মতে, দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করে আরোগ্য লাভ করে।

আবার ইদানিং অনেক নামদারি হোমিও চিকিৎসক বের হইছে,তারা হেপাটাইটিস রোগীকে কে পেটেন্ট টনিক, ,দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকে তাদের কে ডা.হানেমান শংকর জাতের হোমিওপ্যাথ বলে থাকেন, রোগীদের কে মনে রাখতে হবে, হেপাটাইটিস কোন সাধারণ রোগ না, তাই সঠিক চিকিৎসা পাইতে হইলে অভিজ্ঞ চিকিৎকের পরামর্শ নিন।

লেখক: স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি, কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ