শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


মাওলানা আসআদ মাদানী’র একনিষ্ট ভক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ
অতিথি লেখক

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে যে সব বিশ্ব নেতা অবস্মরনীয় অবদান রেখে ইতিহাসে দ্বীপ্তিমান হয়ে আছেন তাদের অন্যতম বিশ্বের অবিসাংবাদিত মুসলিম নেতা, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারতের প্রেসিডেন্ট, প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন, ওলীয়ে কামেল আওলাদে রাসুল সৈয়দ আসআদ আল মাদানী রহ-এর ভূমিকা অবিস্মরণীয়।

বঙ্গবন্ধু ৭২ সালে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তিনি যে সকল বিশ্ব নেতাদের সাথে প্রথমে ফোনালাপ করেন ফেদায়ে মিল্লাত সৈয়দ আসআদ আল মাদানী তাদের অন্যতম। বঙ্গবন্ধুর আসআদ মাদানীর একনিষ্ট ভক্ত অনুরাগী ছিলেন।

মাদানী রহ. এর প্রস্তাবেই তিনি ৭৩ সালে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামকে একত্র করে "সিরাত মজলিস" প্রতিষ্টা করেছিলেন। তিনি ৭৪সালের দিকে সৈয়দ আসআদ আল মাদানীকে রাষ্টীয়ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।

তখন হযরতের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে, পীর মুহসেন উদ্দীন দুদু মিয়া, মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, খতিব উবায়দুল হক জালালাবাদীসহ আলেমদের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তখন বঙ্গবন্ধু পরামর্শ করেন, আসআদ মদনীকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কি উপহার দেয়া যায় এবং কিভাবে সম্মান জানানো যায়।

অনেকে অনেক প্রস্তাব তুলে ধরলে বঙ্গবন্ধু বলেন সৈয়দ আসআদ মাদানীর মতো বিশ্ব বরেন্য আলেমকে আমরা কি উপহার দিতে পারি? তবে হযরতের বাংলাদেশ আগামান উপলক্ষে তাকে দিয়ে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি প্রস্তার স্থাপন করা যেতে পারে যাতে আজীবন তাঁর স্মৃতি বহন করে।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আপনারা চিন্তা করুন, আমি উনার স্মৃতি রক্ষায় এদেশে এমন কিছু করতে চাই যা থেকে হাজারো আসআদ মদনীর মতো মহান আলেম তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সকল আলেম খুশি হয়ে একমত পোষণ করেন। পরে প্রাথমিক পক্রিয়ায় তৎকানিক বঙ্গবন্ধু যাত্রাবাড়িতে কওমি মাদরাসার জায়গা বরাদ্দ দেন এবং আসআদ মদনী বাংলাদেশে এলে তাঁর দ্বারা এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। (সূত্রঃ অগ্রপথিক ইসলামিক ফাউন্ডেশন২০১১)

যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে যায় এবং দেশের নিরীহ মানুষের ওপর বর্বোরোচিত হামলা চালায় তাৎক্ষণিক বাংলাদেশের অকৃতিম বন্ধু সৈয়দ আসআদ আল মাদানী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সিংহের মতো গর্জে উঠে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।

তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও নিরীহ বাঙালিদের পক্ষে জোরালো বক্তব্যেরর মাধ্যমে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আর্কষণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় আলেমদের সর্ববৃহৎ সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ১৯৭১ সালের ১৮ই আগস্ট মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে (কলকাতা) আয়োজিত সভায় বাংলাদেশের পক্ষে এবং পাক বাহিনীর হামলার একটি প্রতিবাদ প্রস্তাব পাশ করে।

রেজুলেশনটির কিয়াদংশ নিচে উল্লেখ করা হলো : Resolution : 1 - whereas this convention of the jamiat -e - ulema is of the considered view that the freedom movement of the people of east Bengal. eighty five percent of whom are Muslim is a fight against economic exploitation and suppression of their Democratic rights by the west Pakistan military regime, And whereas this convention is satisfied that this movement is for upholding the principles of democracy, equally and social justice which Islam has contributed to mankind. the jamiat -e - ulema extends the whole hearted support to this freedom movement. ( সূত্র : শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী, ড.মুশতাক আহমদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

দিল্লিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে ভারতের উলামায়ে কেরাম তার নেতৃত্বে বিশাল জনসমাবেশ সহ প্রায় ৩০০টি প্রতিবাদ সভা করেন । এসমাবেশ থেকেই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিদেশ থেকে আওয়াজ তুলা হয়। সীমানা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে ভারতের আলেমরাই সর্ব প্রথম গন আন্দোলন তৈরি করে আন্তর্জাকিক বিশ্বের দৃষ্টি আর্কষন করেন। (সূত্রঃ আযাদী আন্দোলনে আলেম সমাজ, সৈয়দ আব্দুল্লাহ)

এ সমস্ত তথ্যাদি দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় তদানীন্তন পাক ভারতের আলেম সমাজ বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা নয় বরং পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। কিন্তু আজ নতুন প্রজন্ম এ সম্পর্কে কিছুই জানেনা। অবশ্য গত ১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা অনুষ্ঠানে' মাওলানা সৈয়দ আসআদ আল মাদানীকে মরণোত্তর সম্মাননা তুলে দেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা । তিনি তাঁর পিতার শ্রদ্ধেয় মানুষটিকে মৃত্যুর পরে হলেও সম্মান জানানোর জন্য মোবারকবাদ পাতে পারেন মাদানী ভক্তদের পক্ষ থেকে। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক হলো বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলো তাকে সম্মাননা প্রদান প্রসঙ্গে ছিল নীরব। এমনকি কি এক অজানা কারণে এ মহান ব্যক্তিত্বের নামটুকু অধিকাংশ মিডিয়া উল্ল্যেখ করেনি ।

মুক্তিযোদ্ধের প্রবাসী বন্ধুদের নিয়ে অনেক জাতীয় দৈনিক অনেক স্টরি তৈরি করলেও বাংলাদেশের অকৃতিম বন্ধু, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ব্যক্তিত্ব আসআদ মাদানী রহ এর ব্যাপারে আমাদের দেশের মিডিয়া সবসময় রহস্য জনক নীরবতা পালন করে আসছে। কোন অপরাধে? কাদের অবহেলায়?

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ