শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


নতুন বিতর্ক 'হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক', কী বলছেন আলেমরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল্লাহ আফফান
সহ-সম্পাদক

দেশে ব্লাডব্যাংকের মত করে যাত্রা শুরু করেছে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’। যে মায়েদের সন্তান জন্মের পর মারা গেছে বা নিজের সন্তানকে খাওয়ানোর পরও মায়ের বুকে অতিরিক্ত দুধ আছে, সেই মায়েরা হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে দুধ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। যে নবজাতকের জন্মের পরই মা মারা গেছেন বা যাদের মা অসুস্থতার জন্য দুধ খাওয়াতে পারছেন না, সেই নবজাতকরা এ দুধ খেতে পারবে। এটি একটি বিনামূল্যের পরিসেবা।

হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের উদ্যোগটি ঢাকা জেলার মাতুয়াইলের শিশু মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো) এবং নবজাতক আইসিইউর (এনআইসিইউ) নিজস্ব উদ্যোগ। বেসরকারি আর্থিক সহায়তায় ব্যাংকটি স্থাপন করা হয়েছে।

আইসিএমএইচ ক্যাঙারু মাদার কেয়ারে মা ছাড়া খালা, নানি বা অন্যদের সঙ্গে যে নবজাতকদের রাখা হচ্ছে, তারাও এই দুধ খেতে পারবে। স্ক্যানো ও এনআইসিইউতে থাকা অপরিণত বয়সে জন্ম নেয়া ও অসুস্থ নবজাতকদের সংরক্ষণ করে রাখা দুধ খাওয়ানো হবে। এছাড়াও দত্তক নেয়া সন্তানের অভিভাবকরা এখান থেকে দুধ নিয়ে খাওয়াতে পারবেন।

মা হারা কিংবা অসুস্থ মায়েদের সন্তানের জীবন বাঁচানোর জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকে। আবার এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠেছে স্যোশাল মিডিয়ায়। জায়েজ নাজায়েজের প্রশ্নও দেখা দিয়েছে মানুষের মনে। এ নিয়ে দেশের বিজ্ঞ আলেমদের মতামত তুলে ধরা হলো-

এ বিষয়ে কথা হয় ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা মাদরাসার মহাপরিচালক, তানজিমুল মাদারিসিল আরাবিয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান মুফতি আরশাদ রাহমানীর সঙ্গে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’-এর বৈধতা আছে কিনা- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু এটা দুধ পানের বিষয়, এ নিয়ে ইসলামে নির্দিষ্ট মাসয়ালা রয়েছে। মৌলিকভাবে এক মায়ের দুধ অন্য মায়ের শিশু খাওয়া জায়েজ। মায়ের দুধ  যে কোনো প্রক্রিয়ায় বের করে অন্য শিশুকে খাওয়ানো জায়েজ।

‘তবে ইসলামে রক্তের সম্পর্ক এবং দুধ ভাই বোনের সম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপন ভাই বোনের মধ্যে যেমন বিয়ে করা যায় না তেমনি দুধ ভাই বোনের মধ্যেও বিয়ে করা ইসলামে নিষিদ্ধ।’

‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের’ দুধ প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাবে। এ ক্ষেত্রে কোন মায়ের দুধ কোন শিশু খাচ্ছে এটা জানা যাবে কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। যদি জানা না যায় তাহলে একদিকে যেমন ইসলামে দুধ মায়ের যে গুরুত্ব সেটা ক্ষুণ্ন হবে। অন্যদিকে এমন হতে পারে পরবর্তি সময়ে দুধ ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

‘কোন মায়ের দুধ কোন শিশু খাচ্ছে এটা যদি জানা যায় এবং দুই পরিবারের মধ্যে এ বিষয়ে সতর্ক থাকেন তাহলে সমস্যা নেই। তবে বাস্তবে সবাই কতটা সতর্ক থাকবে সেটা দেখার বিষয়। এটাকে নাজায়েজ বলেই গণ্য করা হবে।

চট্টগামের ওমর গনি এমইএস কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আ. ফ. ম খালিদ হোসাইন এক বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে কয়েকদিন আগে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক চালুু হয়েছে। এখানে যেসব মায়েদের বাচ্চা মারা দিয়েছে বা যেসব মায়েদের দুধ বেশি তারা এখানে দুধ জমা দিবে। আর যেসব শিশুর মা নেই তাদের কে এখান থেকে দুধ নিয়ে খাওয়ানো যাবে।

তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের কার্যক্রম ভাল মনে হয়। তবে এটা ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ। কেননা এখানে সব মায়ের দুধ একসাথে রাখা হবে। কোন মায়ের দুধ কোন শিশু খাবে তা জানা যাবে না। হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের দুধ পান করার কারণে দুধ ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে দুধ ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে হতে পারে না, এটা নাজায়েজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামিয়া কারীমিয়া আবারিয়া রামপুরার ইফতা বিভাগের প্রধান মুফতি জাবের হোসাইন বলেছেন, বিশ্বের বড় বড় আলেমগন মিল্ক ব্যাংককে নাজায়েজ বলেছেন। তার কারণ, এখানে কার দুধ কে খাচ্ছে এটা জানা যায় না। ইসলামে দুধ ভাইয়ের সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের মতো। কার দুধ কে খাচ্ছে এটা যদি না জানা কারণে দুধ ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই উদ্যোগের কারণে দেশের অসংখ্য মুসলিম ভবিষ্যতে হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে।

তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশে নতুন হলেও বহির্বিশ্বে বেশ পুরানো। সৌদি আরব, দুবাই, মিশরসহ বিশ্বের অনেক দেশে এ বিষয়ে আলেমদের কনফারেন্স হয়েছে। সেসব কনফারেন্সে বর্তমান যুগের বিদগ্ধ আলেম ও গবেষকরা মিল্ক ব্যাংক থেকে দুধ খাওয়ার বিষয়কে নিষেধ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া এর কারণে ইসলামে দুধ মায়ের মর্যাদা তা ক্ষুণ্ন হয়। কেননা এখানে দুধ দাতা এবং দুধ গ্রহিতার মধ্যে কোন সম্পর্ক বা কোন যোগাযোগ থাকে না। তবে যদি দুধ দাতা এবং দুধ গ্রহিতার মধ্যে কোন সম্পর্ক বা যোগাযোগ থাকে তাহলে সমস্যা নেই। কার দুধ কে খাচ্ছে এটা যদি এর তালিকা সংরক্ষণ করা যায় তাহলে তা জায়েজ। এটা শুধু ব্যক্তিগত ভাবেই সম্ভব, কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এটা করলে তালিকা সংরক্ষন করা সম্ভব হয় না।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ