বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


সরেজমিন প্রতিবেদন: ইজতেমা ময়দান ঘুরে যা দেখলাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: তুরাগ নদীর তীরে চলছে আলমী শূরার তাবলীগি সাথীদের বিশ্ব ইজতেমা। এবারের ইজতেমায় দেশ বিদেশের মুসল্লির অংশগ্রহণ হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। গত ৯ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২ টার আগেই মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। নির্ধারিত খিত্তায় দূর দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা জায়গা না পেয়ে তবুতে আশ্রয় নিতে শুরু করে।

দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সাথে মুসল্লিদের আগমন আরও বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে বিভিন্ন রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে, মেইন রোডের পাশে, নদীর পাড়ে,কামার পাড়ায় ঝুপড়ির ভেতর, তুরাগ নদীতে থাকা ভাসমায় নৌকায়, এমনকি বিভিন্ন টয়লেটের ছাদেও মুসল্লিদেরকে অবস্থান করতে দেখা যায়৷

মুসল্লিদের সার্বিক অবস্থা জানাতে মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে সরেজমিন করেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডট কমের প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান আব্দুল্লাহ আল মবিন। ক্যামেরায় ছিলেন তানভির তানজিম


কনকনে শীত উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে মেইন রোডে বসে আছেন আব্দুল আলী মিয়া। তিনি এসেছেন ময়মনসিংহ থেকে। শীতের রাতেরাস্তায় কাটাতে  কষ্ট হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ২৫ জনের জামাত। মাঠে বৃহস্পতিবারে এসেও জায়গা পাইনি, তাই এখানে কোনরকম আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের এখানে দ্বিগুণ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আনন্দও হচ্ছে৷ কষ্ট করার জন্যই এসেছি৷ আমাদের শারীরিক কষ্ট হলেও মনে কোন কষ্ট নেই, কারণ আল্লাহর জন্য এসেছি।’

শেয়ারপুর থেকে এসেছেন ৭৫ বছর বয়সি গুল মাহমুদ মিয়া৷ তিনিও রাস্তার পাশে ময়লার স্তপের কাছে আশ্রিত। তার কাছে ইজতেমার  সার্বিক অবস্থা জানতে চাইলে বলেন, ‘এবারের ইজততেমায় বেশি মানুষের আগমনে আগের চেয়ে জায়গার সংকট একটু বেশি দেখা দিয়েছে। যে কারণে, আমরা এখানে এভাবে বসে আছি। দু’দিন হলো আসলাম। এখনো ভাত খাইতে পারি নাই, পাক করার মতো ব্যবস্থা নেই আমদের।’

তুরাগ পারে ঝুপড়ির ভেতর তাঁবু ফেলেছেন হাজারো মুসল্লি। ভালুকা থেকে আসা তাদের একজন আমিনুল ইসলাম। তিনি ইজতেমায়  প্রথম এসেছেন। আমিনুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের অন্যান্য ভাইয়েরা মাঠে বসে বসে রাত কাটান। আমরা দু’ চারজন এখানে থাকি; রান্না করি। তারা এসে এখান থেকে খেয়ে মাঠে চলে যান। বিভিন্ন জামাতের ফাঁকে ফাঁকে তারা বসে এবাদত বন্দিগী করেন ‘

এভাবে কষ্ট করে ইজতেমায় থাকা কেমন আনন্দ দিচ্ছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি আগে কখনো আসি নাই। এবার এসে মানুষের এত বড় জামাত দেখে  অবাক হয়েছি৷ আমি যতদিন বেঁচে থাকব ইজতেমায় আসব।’

তুরাগ পারে লেগে আছে বেশ কিছু নৌকা। সেখানেও অবস্থান করছেন মুসল্লিরা। রান্না, খাওয়া-দাওয়া সেখানেই তাদের। যেন ভাসমান ইজতেমা। তাদের অবস্থা সম্পর্কে মাওলানা সাইফুল ইসলাম জানান, ‘আমরা নৌকাতে ভালোভাবেই সব কিছু করতে পারতেছি। তবে মাঠে সবার সাথে থাকলে আরও ভালো লাগত।’

ইজতেমা ময়দানের টয়লেটের ছাদে অবস্থান রত চট্টগ্রাম থেকে আসা মোবারক নামে এক তরুন জানান, ‘খুব কষ্ট করে এতো দুর থেকে এসেছি, এসে দেখি জায়গা নেই। তাই সামিয়ানা টানিয়ে টয়লেটের ছাদে অবস্থান নিয়েছি। বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে তার অনুভূতি কি জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি এখানে আরো এসেছি তবে এবারের মতো এতো মানুষ হতে দেখিনি, একটু কষ্ট হলেও সার্বিক দিক থেকে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’

বিশ্ব ইজতেমায় সিলেট থেকে আসা আবু বকর নামে একজন বলেন, ময়দানের ভিতরে জায়গা না পেয়ে আমরা তুরাগ নদীর তীরে চাটাই বিছিয়ে খোলা আকাশের নিচে খুব কষ্টে অবস্থান করছি। আমাদের জন্য নির্ধারিত যে খিত্তা ছিলো, ওই স্থানে গিয়ে বসা বা শুয়া তো দূরের কথা দাঁড়ানোর জায়গাও পাইনি।  তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য এসেছি। আরো কোন কষ্ট হলে তাতেও প্রস্তুত আছি।’

আগামী বছর থেকে আলমী শুরার তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমাকে দুই পর্বে করার দাবি জানিয়ে বিশ্ব ইজতেমায় আগত আলি আহমদ নামে একজন বলেন, আমরা ময়মনসিংহ থেকে এসেছি, ময়দানে জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশে অবস্থান নিয়েছি। এক পর্বে হওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে এই ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হলে আমাদের কষ্ট কমে আসবে।

বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এখানে আসতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। এই কষ্ট কোন কষ্ট না, প্রকৃত কষ্ট হচ্ছে জাহান্নামের কষ্ট, সেই কষ্ট থেকে বাঁচার জন্যই এখানে এসেছি।’

শুক্রবার ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শুরায়ী নেজামের বিশ্ব ইজতেমা। তবে এর আগেই বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকেই শুরু হয় তালিমি বয়ান। রবিবার (১২ জানুয়ারি) মোনাজাতের মাধ্যমে আলমী শূরার তাবলিগ জামাতের সাথীদের ইজতেমা শেষ হবে।

জানা গেছে, ১২ জানুয়ারি রোববার মোনাজাতের মাধ্যমে ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমার শেষ হবে। এদিন সকাল সোয়া ৭ টায় মাওলানা রবিউল হকের হেদায়েতী বয়ান হবে এবং ১০ টার মধ্যে মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইল তাবলিগ জামাতের মুরুব্বি ও কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহমেদ।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর