শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


ডিআইজি মিজানের কাছে গাড়িও চেয়েছিলেন বাছির

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ঘুষ দেয়া ও নেয়ার মামলায় পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রে দাখিল করেছে দুদক।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুদকের পরিচালক শেখ মুহা. ফানাফিল্লা ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যা আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে উপস্থাপিত হবে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি দুদক ওই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলের অনুমোদন দেয়। ডিআইজি মিজানের দুর্নীতি তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন খন্দকার এনামুল বাছির। তিনি মিজানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া ছাড়াও ছেলের স্কুলের যাতায়াতের জন্য একটি গাড়িও দাবি করেছিলেন বলে দুদকের দেয়া অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ডিআইজি মিজানের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান করছিলেন। অনুসন্ধানচলাকালে ২০১৯ সালের ৯ জুন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সাংবাদ প্রকাশিত হয়, ডিআইজি মিজান অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টে এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন। দুদক তাৎক্ষণিক একটি তদন্ত কমিটি করে তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পায়। এরপর এ সংক্রান্তে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিও ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মামলাটি রজু করা হয়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, মামলার তদন্তকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সাক্ষীদের বক্তব্য গ্রহণ এবং এনটিএমসি থেকে প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়, ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি মিজান একটি বাজারের ব্যাগে কিছু বইসহ যথাক্রমে ২৫ লাখ টাকা ও ১৫ লাখ টাকা রমনা পার্কে এনামুল বাছিরকে দুই দফায় প্রদান করেন। যার চাক্ষুস সাক্ষী আসামি মিজানের দেহরক্ষী হৃদয় হাসান ও অর্ডারলি মুহা. সাদ্দাম হোসেন।

এছাড়াও মিজান ও বাছিরের মুঠোফোনের কথোপকথন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাছির তার ছেলেকে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে আনা নেওয়ার জন্য মিজানের কাছে একটি গাড়িও দাবি করেন, যা তিনি দুদকের বিভাগীয় তদন্ত টিমের কাছে স্বীকারও করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আসামি মিজান ও বাছির অবৈধভাবে দুটি পৃধক সিম ব্যবহার করে একে অপরের মধ্যে কথোপকথনসহ ক্ষুদেবার্তা আদান-প্রদান করেছেন। সিম দুটি দেহরক্ষী হৃদয় হাসান ও অর্ডারলি সাদ্দামের নামে ক্রয় করা। হৃদয়ের নামে কেনা সিমটি বাছিরকে একটি সামসাং মোবাইলসহ প্রদান করেন মিজান। আর সাদ্দামের নামে কেনা সিমটি নিজে বাছিরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গোপনে ব্যবহার করেন মিজান। নম্বরগুলো থেকে মিজান বিভিন্ন সময় ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে বাছিরের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন মর্মে তথ্য-প্রমান পাওয়া গেছে।

তদন্তে আরও প্রমাণিত হয় যে, মিজান অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে বাছিরের সঙ্গে ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে সংরক্ষণ করেন এবং পরবর্তীতে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। মিজান নিজে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্যই অসৎ উদ্দেশ্যে বাছিরকে ঘুষ প্রদান করে প্রভাবিত করেন। আর বাছির সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ঘুষ গ্রহণ করে গোপন করেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের পরিচালক শেখ মুহা. ফানাফিল্লা আসামি মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ২২ জুলাই রাতে রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালাম এলাকা থেকে এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে একই আদালতে হাজির করা হলে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

তারও আগে ঘুষ প্রদানের তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশ করে আত্মগোপনে থাকা ডিআইজি মিজানকে একই বছর ১ জুলাই হাইকোর্ট পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরদিন নিম্ন আদালতে হাজির করা হলে তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ