শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


যে চিঠি লিখে ওমরাহ যাচ্ছেন পটিয়ার আমজাদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষে আওয়ার ইসলাম আয়োজন করেছিল নবীজিকে চিঠি লেখার প্রতিযোগিতা। এতে ‘নবীজিকে চিঠি লিখে ঘুরে এসো মদিনায়’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী কয়েক শ’ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ২০ জন সৌভাগ্যবান পুরস্কার পান। ১ম পুরস্কার বিজয়ী আল জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়ার ছাত্র আমজাদ ইউনুস পান ওমরাহ পালনের সুযোগ। আওয়ার ইসলাম পাঠকদের জন্য ১ম পুরস্কার বিজয়ীর চিঠি প্রকাশ করা হলো-


হে জ্যোতিষ্মান চির মহিয়ান মহামানব !

স্নিগ্ধ এই ভোরে নিষ্পাপ নবজাতক শব্দ সুগন্ধি ভরে তোমায় চিঠি লিখতে বসেছি। তোমার শানে স্নিগ্ধ অনুরণিত শব্দে রসালো-মিঠেল বাক্যে মনের অনুভূতিগুলো কলমের আঁচড়ে আঁকার জন্য কিছু হীরা-পান্না শব্দ বাছাই করেছি। কলকল ধ্বনিময় তরঙ্গিত শব্দাবলীর ছন্দের দোলাচলে দোদুল দোলায় দুলেছি বহুদিন। থরে-থরে শব্দের কাকলি তুলে তোমায় নিয়ে কথার বীথিকুঞ্জ সাজাব বলে কত প্রতীক্ষার প্রহর গুনেছি।রহমতের শিশিরবিন্দুর মতো আমার অস্তিত্বমুখর শব্দরাজি পরমাবেগে তোমার নামে ঝরার জন্য রবের দরবারে কত অশ্রুর নাযরানা পেশ করেছি। আমার হৃদয়ে-অস্থিতে, স্বভাবে-অস্তিত্বে মিশে যাওয়া তোমার ভালোবাসা প্রাণের ভাষায় ও শব্দের শামিয়ানায় পেশ করছি।

হে হৃদয়াকাশের সূর্য !

মায়াবী জ্যোৎস্নায় সিরাতপাঠে বিভোর হয়ে আমার ভাব ও আবেগের তরঙ্গ -উচ্ছ্বাসে এবং হৃদয় ও আত্মার আলোক-উদ্ভাসে কত বার তোমার পূর্ণ অবয়ব অঙ্কন করেছি। আমার চোখের তারায় কতবার ভেসে ওঠেছে তোমার পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো সুঠাম, সুন্দর ও দীর্ঘ দেহ, উজ্জ্বল রক্তিমাভ গোলাপী গায়ের রং, সুগঠিত চওড়া কাঁধ,সুদীর্ঘ ও বাঁকানো ভ্রু,মুখভর্তি পৌরুষদীপ্ত শ্মশ্রু, ঝকঝকে সাদা বাঁকানো দাঁত, প্রশস্ত বুক,সুদৃঢ় পেশী, স্মিত হাসি লেগে থাকা ঠোঁট, কাঁধ ছুঁয়ে থাকা কোঁকড়ানো ঘন কালো চুল ।

হে মানবতার অন্তিম প্রতীক !

অযুত শব্দের উপমা তোমার নামে জুড়ে নিযুত শব্দের কলরবে আমি ব্যর্থ হয়েছি । কখনো ফুলের সাথে মিলিয়েছি তোমায়। নাহ্! তুমি ফুলের উপমেয় না। পৃথিবীর সব ফুল বেটে যদি তার নির্যাস জড়ো করি, তোমার শুভ্র স্বেদবিন্দুর আবেশী সৌরভ শুঁকে ফুলগুলো মুখ ঢাকবে পাপড়িতে। নীলাকাশে নীল সরোবরে হীরক পদ্মের মত জ্বলতে থাকা অসংখ্য সমুজ্জ্বল নক্ষত্রের জ্যোতি জড়ো করি তোমার পাশে। লক্ষ তারার সব কিছুই ক্ষীণ ও ম্লান হবে তোমার মধুমাখা অমলিন মুচকি হাসির কাছে।তুৃমি নক্ষত্রের উপমেয় নয়।

অনুপম চরিত্র অতুলন সৌন্দর্যে মণ্ডিত শ্রেষ্ঠ রূপময় ও সর্বশ্রেষ্ঠ মধুময় তুমি। তুমিই শ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম চির রূপকল্পের একমাত্র উদ্ভাদক। তোমার রূপের অতুল শোভা তোমার অনুপম চরিত্রের উজ্জ্বল আভা খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে পরিপূর্ণরূপে ফুটিয়ে তুলবে এমন সাধ্য কার?

হে বিশ্বশ্রুত প্রেমিকদের প্রিয়তম প্রেমাস্পদ!

কত প্রেমিক পুরুষ ভালোবাসা-মুগ্ধ, আবেগের স্নিগ্ধ -কোমল মিশেলে তাঁদের ভালোবাসার নাযরানা তোমার সমীপে পেশ করেছেন। তোমার ভালোবাসার সুবাসসিক্ত কত আশেক বিগলিত চিত্তে তোমার প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন অন্তর নিংড়ানো ভক্তি ও শ্রদ্ধায়। তোমার শানে কাব্য লিখে কতো কবি অমরতার সৌধ নির্মাণ করেছেন। ভাষার বাঁধন শিথিল হয়ে তোমার নামে ঝরেছে কত উপমা, উৎপ্রেক্ষা শব্দ, গন্ধ, ও অন্ত্যমিল । তোমার প্রেমে সিক্ত সেইসব কাব্যের অমৃত রস ফোঁটায় ফোঁটায় চুইয়ে পড়েছে আমার মনের চৌহদ্দি জুড়ে।

হৃদয়ের সঞ্চিত-পুঞ্জীভূত ভালবাসা কাব্যের চরণে তোমাকে নিবেদন করে তোমার মখমল কোমল হাতের আলতো ছোঁয়ায় আরোগ্য লাভ করেছেন বুসিরী। তোমার পবিত্র গায়ের নকশাদার ইয়ামেনী চাদরটি দিয়ে ঢেকে দিলে তার সমগ্র বদন। হৃদয়ের তপ্ত প্রেম নিবেদন করে পেয়ে গেলেন গভীর প্রেমের শ্রেষ্ঠ উপহার।
তোমার অনন্য প্রেমিক আহমদ রেফাঈ। হৃদয়ে আবেগের ঢেউ নিয়ে তোমার রওজার পাশে দাড়িয়ে তাঁর ওষ্ঠযুগল তোমার পবিত্র হাতে চুমু আঁকার আরজি পেশ করেছিল কাব্যে- কাব্যে। তুমি তোমার পবিত্র হাত বাড়িয়ে দিলে। তোমার পবিত্র হাতে কবির কম্পিত ঠোঁট চুম্বন চিহ্ন এঁকে দিয়ে কবি প্রেমতপ্ত জ্বালা প্রশমিত করলেন।

হে রাসুলে আরবি! আমি তো কবি নই। তোমার শানে স্নিগ্ধ ও লাবণ্যমণ্ডিত উপমায়, চিত্রকল্পে,রূপকে ও প্রতীকে আবেগের শিহরণ তুলে এমন কাব্য রচনা করতে আমি যে অক্ষম। তোমার সমীপে মনের অনুভূতি বর্ণনার জন্যে যে রক্তিম ও সজীব শব্দের সম্ভার দরকার যে জ্বলন্ত আবেগ আর প্রাণের বৈভব প্রয়োজন তা তো আমার নেই। যে সাদীর ডাকে স্বর্গীয় চৈতন্য গেরবাজ শুভ্র কপোতের মতো ছুটে এসে শব্দের দানা কুড়িয়ে এনে হৃদয়ের গোলা ভরিয়ে দেয় সে কবিও তোমার শানে লিখতে গিয়ে শব্দ, ছন্দ ও ভাব হারিয়ে ফেলেন। আমি তো তোমার গরীব এক আশেক।নেই আমার ভাণ্ডারে অর্থের ঐশ্বর্য ও ভাবের প্রাচুর্য । তাই বলে তোমার দর্শনলাভে ধন্য হব না? হৃদয়ের পুঞ্জীভূত ভালোবাসায় উদ্বেলিত এ প্রেমিকের স্বপ্নে হলেও একবার দর্শন দাও হে প্রিয়তম ।

হে দু'জাহানের শাহানশাহ!

ভাবনার বোরাকে চড়ে মাঝে-মাঝে আমি রুহানি সফরের মুসাফির হয়ে কল্পনায় সাওয়ারি হাঁকাই সবুজ গম্বুজের পথে।বিগলিত চিত্তে তোমার নামে দরুদ পড়ি। তোমার দরুদের গুঞ্জরণ মধুর অনুরণন তোলে আমার কানের পর্দায়। ফোঁটা-ফোঁটা নোনা জলে ভিজে যায় আমার কারুকাজমণ্ডিত জায়নামায।তোমার নামে বেলি ফুল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে তসবির একেকটি দানা। তোমার অপার্থিব প্রেমের স্বচ্ছ সরোবরে নির্মল আনন্দে অবাধ সাঁতার কাটি। লাল সাদা সোনালি বালুর সরোবরে চিকিমিকি ঢেউয়ের মাঝে আমি শুনতে পাই হাজার বছরের কারাভাঁর কলগান। আমি ঘুরি তোমার কলরব- স্পন্দিত প্রেমের উদ্যানে। আলোর স্রোতনাদে তৃপ্ত এক অনন্য আকাশে। তোমার উজ্জ্বল স্মৃতি ও নিদর্শন ধারণ করে ঠাঁই দাড়িয়ে থাকা প্রাচীনকালের সেই ইয়াসরিবের অলিগলিতে আমি উঁকি দিই। সে জমির প্রতিটি রেণুতে আমি মুক্তির স্বপ্ন বুনি। প্রতিটি ধূলিকণায় শুনি মুক্তি ও কল্যাণের বিরামহীন জিকির।

আমার ভাবনার ক্যানভাসে অঙ্কন হয় তোমার মদীনা আগমনের সেই মধুময় ক্ষণ। বালক-বালিকাদের উজ্জ্বল আদুরে মুখ। সাগ্রহে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করলে কারো চিবুক। স্নেহভরে চুম্বন এঁকে দিলে কারো কপালে। আমি নিজেকে দাড় করাই তাদের কাতারে। এসব ভাবনার রেণু যখন আমার মস্তিষ্কের কোষে-কোষে মিশে যায় দিগন্তের ঘন আঁধার ঠেলে অষ্টাদশীর স্নিগ্ধ বিচ্ছুরণের মত একটি খুশির আমেজ আমার বুকের গভীরে উজ্জ্বল হতে থাকে। হঠাৎ আমার ভাবনার ছেঁদ পড়ে। ফিরে আসি বর্তমান সময়ে। দেখতে পাই তোমার আর আমার মাঝে চৌদ্দশ বছরের সময়ের মহাপ্রাচীর।

মুহূর্তেই তোমার বিরহ বেদনার শাদা -শাদা ফুলে আমার হৃদাকাশ নিবিড় হয়। বুকের জমাট কান্না বরফ গলা স্রোতের মত আছড়ে নামে। আত্মার উচ্ছ্বাসে কূলপ্লাবী ঢেউয়ে আমি ভেসে যাই। তলিয়ে যাই। আমার ভেতর ভয়, ভালোবাসা ও বেদনা বিদ্যুৎ চমকায়। অজানা তরঙ্গ প্রবাহে শরীর কাঁপে। ডুবে যাই নিবিড়ে নিমগ্ন বৃষ্টিরেণুর মতো। আমার হৃদয়ের অনুভূতি, মস্তিষ্কের চিন্তারাশি, ধমনীর প্রবাহ আর হৃদপিণ্ডের ধুকধুকানিতে বয়ে যায় বেদনার মরু সাইমুম। বিরহের প্রতিটি অনুভব বিষাক্ত তীরের মত বিদ্ধ হতে থাকে আমার হৃদয়ের নরম গতরে।

হে আলোর ফুুল মুহাম্মদ রাসুল!

যে পথে তোমার সুকোমল পা চিহ্ন এঁকে গিয়েছে, যে পথে চলতে গিয়ে কণ্টক-কঙ্করে,প্রাষাণে-প্রস্তরে তোমার কদম মুবারক রক্তের রক্তিম গোলাপ ফুটিয়েছে, যে পথের ধূলিকণায় তোমার উজ্জ্বল ললাট মহান রবের সিজদায় নত হয়েছে আমার দেহমন শুভ্র কপোতের মতো সে পথের ধূলি হয়ে উড়তে ডানা মেলে । আমার পিপাসার্ত ওষ্ঠ দুটি চাতকের মতো সে পথে চুম্বনদানে প্রতীক্ষার প্রহর গুনে । সে পথের ধূলিবালির সুরমা মাখতে আমার চোখ মেঘের মতো অশ্রু ঝরায় । তোমার কণ্ঠের যে মধুর সুরলহরী চারপাশের তৃণলতায় ধূলিমাটিতে আবেশ ছড়িয়ে দিত, শারাবান তহুরাসিক্ত সেই অলৌকিক মধুর ধ্বনি শুনতে আমার কান নীড়-হারা পাখির মতো অস্থিরতার বুলি আওড়ায় ।

হে সাকীয়ে কাউসার!

দিন-দিন হৃদয়ের উঠোনে লকলক করে বেড়ে উঠছে তোমার দর্শনের পিপাসা। দিনরাত তোমার দর্শন লাভের প্রতীক্ষার প্রহর গুনি।আশায় আশায় বুক বাঁধি আমার স্বপ্নের গোলাপ পাপড়ি মেলবে একদিন।ক্ষণিকের জন্য হলেও একদিন তুমি আসবে আমার স্বপ্নের অলিন্দে। একবার হলেও ডেকে নিবে তোমার পবিত্র রওজায়। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে হৃদয়ের ঝাঁপি খুলে মনের অব্যক্ত কথাগুলো তোমায় শোনাব। তোমার হিরন্ময় দীপ্তির শাণিত দেদীপ্যমান প্রভা প্রাণে মেখে, হৃদয়ের সবটুকু আবেগ, ভালোবাসা, ভক্তি ও শ্রদ্ধার মিশেলে তোমায় বলব, আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ ।

ইতি

তোমার
কিশোর আশেক
আমজাদ

নাম : আমজাদ, পিতা: ইউনুস, ঠিকানা: হরিণখাইন,বুধপুরা,পটিয়া,চট্টগ্রাম, শ্রেণি: হেদায়া, প্রতিষ্ঠান : আল জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর