শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


করোনা আতঙ্কে সাময়িক বন্ধ পবিত্র ওমরা : আলেমদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক>

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে মহামারী করোনা ভাইরাস। প্রতিদিন বাড়ছে আশঙ্কা, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। শুরুর দিকে ভাইরাসটি  চীনে সনাক্ত হলেও এখন পৃথিবীর ৭৩ টি দেশে নিশ্চিত ভাবে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি বিদ্যমান। যার ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্র বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চীনের সঙ্গে সারা বিশ্বের যোগাযোগ প্রায় বন্ধ।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের দাবি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন প্রিন্স করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। যদিও বিষয়টি সম্পর্কে আরব আমিরাত এখন পর্যন্ত কোন কিছু বলেনি। গত জুমার নামাজ ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন আমিরাত সরকার।

এক্ষেত্রে সৌদি সরকার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আরো একটু কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যা নিয়ে মুসলিম বিশ্ব শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

শুরুতে বহির্বিশ্বের মানুষদের জন্য  পবিত্র ওমরা পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তারপর নিরাপত্তা আরো জোরদার করার লক্ষ্যে সৌদি নাগরিকদের জন্যও উমরাহ পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন মুসলিম বিশ্বের নেতারা। কেউ বলছেন পবিত্র মক্কা ও মদীনায় প্রবেশে সৌদি সরকার যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তা উচিত হয়নি। মানুষ ও আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় এই মক্কায় আসলে। মক্কায় আগন্তুকরা আল্লাহর মেহমান। এতে সৌদি সরকারের বাধা দেয়া উচিত হয়নি।

ওমরার সফর বাতিল হয়েছে এরকম দুজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, দীর্ঘদিন চেষ্টার পরে আল্লাহর তৌফিকে পবিত্র ওমরার জন্য প্রস্তুতি পরিপূর্ণ হয়েছিল। স্বপ্নে ও জাগরণে বাইতুল্লাহর কথা ভাবছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের মন ভেঙে দিয়েছে। আমাদের দেশেতো করোনাভাইরাস এখনো শনাক্ত হয়নি। আমাদের উপরও এরকম নিষেধাজ্ঞা কেন?

পরিস্থিতি বিবেচনায় সৌদি সরকার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মুসলিম বিশ্বের বিশিষ্ট দুই আলেম। তারা হলেন হারামাইন শরীফাইনের প্রধান ড. আব্দুর রহমান আস সুদাইসি ও পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও জামেয়া করাচির মুফতি তকী উসমানী।

মহামারী থেকে জনগণের জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের প্রথম দায়িত্ব: শায়েখ আবদুর রহমান সুদাইসি

বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসের হুমকির মোকাবেলায় পবিত্র ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে সৌদি সরকার সতর্কতামূলক সাময়িক যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা শরিয়তের আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে মত দিয়েছেন হারামাইন শরিফাইনের প্রধান শায়েখ আবদুর রহমান সুদাইসি।

যেকোনো মহামারি থেকে জনগণের জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের প্রথম দায়িত্ব। এজন্য করোনা ইস্যুতে সৌদি আরব যেসকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেগুলো শরিয়তের আইনের সীমানা ও ইসলামি নীতিমালা অনুযায়ী করা হয়েছে।

সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া উচিত: মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী

ওমরা ফরজ বা ওয়াজিব কোন বিধান নয়। তাই বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে সৌদি সরকারের এ পদক্ষেপের বিরোধিতা না করে তা মেনে নেওয়া উচিত। হজের সময় পরিস্থিতি উন্নতি হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, হজের জন্য এখনো অনেক সময় বাকি রয়েছে। আশা করি ততদিনে আল্লাহ তাআলা পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাবেন।

কী বলছেন বাংলাদেশের আলেমরা!

যারা করোনা ভাইরাস মুক্ত তাদের ওমরা পালনে বাধা না দেয়া উচিত: মুফতি দেলোয়ার হোসাইন

যে সকল রাষ্ট্রের মুসলমানদের মাঝে এখনো করো না ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি, সে সকল রাষ্ট্রের মুসলমানদেরকে ওমরার ভিসা দেয়া উচিত। বাইতুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর ঘর। সেখানে আল্লাহর বান্দারা যাবে। বিনা কারণে এতে বাধা দেয়া যায় না বলে মত ব্যক্ত করেছেন মিরপুর আকবর কমপ্লেক্সের মুহতামিম মুফতি দেলোয়ার হোসাইন। তবে সৌদি সরকার যেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সেটি শরীয়ত পরিপন্থী নয়। ওমরা কোন ফরজ বিধান নয়। সাময়িক বিভিন্ন জটিলতায় এটি বন্ধ করা হয়েছে। এটাকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলা যাবে না।

যতদিন বাইতুল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক থাকবে ততদিন ভালো থাকবে বিশ্ববাসী: মুফতি রফিকুল ইসলাম সরদার

আমরা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আমরা বস্তুবাদে বিশ্বাসী নই। যেই মহামারী আকারে ভাইরাসটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, এই পরিস্থিতিতে তওবা এবং আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি পরিবেশ কায়েম করা জরুরি।  এই ভাইরাস বন্ধ করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর । মুসলিমরা সকলেই একথা স্বীকার করছে। সকল সমস্যার সমাধান তার কাছে।

যদি এই বিশ্বাসটি সকলের মনে থাকে, হলে এই বিশ্বাসের দাবি হচ্ছে বায়তুল্লাহ খুলে দেয়া। বাইতুল্লাহ থেকে মানুষ যত বিচ্ছিন্ন হবে মানুষের মাঝে নানারকম সমস্যা তৈরি হবে। এই মহামারি'র সময় বাইতুল্লাহ কে আরও উম্মুক্ত করে দেয়া উচিত ছিল। যে, তোমরা বাইতুল্লায় আসো আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করো এবং তোমাদের কৃতকার্যের প্রতি অনুতপ্ত হও। এটাই হত সর্বোত্তম পদ্ধতি। অবশ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ