শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


কওমি শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে কীভাবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বেলায়েত হুসাইন
কন্ট্রিবিউটর

২০১৮ সালে আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীন কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান স্বীকৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু কাগজে-কলমের এই স্বীকৃতি কতটা কাজে আসছে সেটাই প্রশ্ন। মাস্টার্স সমমান সনদের মাধ্যমে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে কওমি শিক্ষার্থীদের সুদিন এখনো আসেনি।

সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ুয়া একজন বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার জন্য খুব অনায়াসে যেতে পারে। আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও পৃথিবীর নানাপ্রান্তে পড়ছে। পক্ষান্তরে দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান দেওয়া হলেও আরবি সাহিত্য কিংবা ইসলামিক স্টাডিজ নিয়েও বিদেশে পড়তে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।

তবে প্রতিকূলতা ও বাধ্যবাধকতা অনেক কওমি শিক্ষার্থীদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি।বাংলাদেশের অসংখ্য কওমি পড়ুয়া উদ্যমী তরুণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের অভিলাষে গমন করেছে। তারা নিজ উদ্যোগে, নানা উপায় অবলম্বন করে পড়াশোনা করছে তুরস্ক, মিসর, সৌদি আরব ও ভারত প্রভৃতি দেশে।

এখনো বিদেশে পড়াশোনা করছে কিংবা কিছুদিন আগে পড়াশোনা শেষ করে এসেছে- এমন কয়েকজন কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষার্জনের জন্য বিদেশযাত্রার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। জানিয়েছেন, কওমি পড়ুয়া হয়েও কীভাবে তারা দেশের বাইরে গিয়েছেন?

‘আল আজহারে আসতে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে’
আব্দুল আজিজ, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর।

আমি যখন শৈশবে বুঝতে শুরু করি তখন থেকেই অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। ভালো একজন আলেম হওয়ার অভ্রিপ্রায়ে ভর্তি হই কওমি মাদরাসায়। বয়স বাড়ার সঙ্গেসঙ্গে আমার ইচ্ছার পরিধিও বাড়তে থাকে। উচ্চশিক্ষার জন্য মাদরাসার পড়াশোনা শেষ করে দেশের বাইরে আন্তর্জতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার ইচ্ছাটা প্রবল হতে থাকে।

কিন্তু এ সময় আমার সামনে অন্ধকারের মতো একটি দুঃসংবাদ আসে। জানতে পারি, কওমির সনদ দিয়ে দেশের বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা করা যায় না। তবে আমি থেমে থাকিনি, ইচ্ছা পূরণের জন্য ভর্তি হই আলিয়া মাদরাসায়। অনেক প্রতিকূলতার পথ পাড়ি দিয়ে আলিম পাশ করি।

আলহামদুলিল্লাহ!  আলিমের সার্টিফিকেট ব্যবহার করে গত বছরের মাঝামাঝিতে স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান মিসরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ পেয়ে যাই। এখানে ‘উসুলুদ দীন’ বিষয়ক চার বছরের কুল্যিয়াত (অনার্স সমমান) বিভাগে পড়তে এসেছি।

এখন ১০ মাসের বাধ্যতামূলক আরবিভাষা শিক্ষা কোর্স সম্পন্ন করছি। আল আযহারে পড়তে আসা বাংলাদেশের অধিকাংশ কওমি শিক্ষার্থী আমার মতো উপায় অবলম্বন করেছে। আসলে তাছাড়া কোন রাস্তা ছিল না। এজন্য বলতে পারি- আমাদের মতো যেসব কওমি পড়ুয়া তরুণ আল আযহারে আসে তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।

তবে কওমি শিক্ষার্থীরাও সরাসরি আল আজহারে ভর্তি হতে পারে। কিন্তু তাদের জন্য প্রক্রিয়াটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ ও কঠিন। শুরুতে আল আযহারের মা'হাদে ( এইচএসসি সমমান) দুই বছর মেয়াদি কোর্সে ভর্তি হতে হয়। অতঃপর জামিয়ার নিয়মানুযায়ী তারা উপরের ক্লাসগুলো অতিক্রম করতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার কওমি সনদের স্বীকৃতি দিলেও আল আযহারের সঙ্গে এই সনদের মুয়াদালা ( দ্বিপাক্ষিক শিক্ষা চুক্তি) হয়নি। এর ফলে কওমি সনদের মান থাকার পরও মিসরে সেটা কাজে লাগছেনা। তবে আশা করি, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সরকার দ্রুতই বিষয়টি নিয়ে ভাববে।

‘মক্কা-মদিনায় জ্ঞানার্জনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা হোক’
আবদুল কারিম,মদিনা ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।

ইসলামের প্রাণভূমি মক্কা-মদিনার দেশে জ্ঞানার্জন করবো- এটা ছিল হৃদয়ের গহীনে লালিত একটি স্বপ্ন। শৈশব থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকি। আমি জানতাম, কওমি মাদরাসার সার্টিফিকেট ব্যবহার করে আমি সৌদিতে আসতে পারব না।

এ কারণে কওমিতে পড়াশোনার পাশাপাশি আলিয়াতেও ভর্তি হই এবং আলিম পাশ করি। অনেক প্রচেষ্টার পরে স্কলারশিপ নিয়ে মদিনা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। এখন প্রতিষ্ঠানটির ইসলামিক আইন ও বিচার বিভাগ নিয়ে পড়ছি। আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি ছাড়া সৌদি আরবের উল্লেখযোগ্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কওমি সনদের মুয়াদালা বা শিক্ষা চুক্তি হয়নি। ফলে আলিয়ার সার্টিফিকেট দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া গেলেও কওমির সার্টিফিকেট এখনো কাজে আসছে না। অথচ আলিয়ার শিক্ষার্থীদের তুলনায় কওমি শিক্ষার্থীদের মক্কা-মদিনায় পড়াশোনার আগ্রহ কয়েকগুণ বেশি।

সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা যে, তারা কওমি-সনদের স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে তারা যদি মক্কা-মদিনাসহ বিশ্বের বড়বড় ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে জ্ঞানার্জনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে তাহলে তারা আরো প্রশংসা কুড়াবে। এতে করে মক্কা-মদিনার ইলমি ও ঈমানি পরিবেশে ইলম অর্জন করে বাংলাদেশের কওমি পড়ুয়ারা আরো বেশি যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে এবং বিশ্বব্যাপী দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।

‘দেশের বাইরে পড়াশোনা করলে চিন্তার বিস্তৃতি ঘটে’
ইমামুদ্দিন, প্রাক্তন শিক্ষার্থী নদওয়াতুল উলামা, ভারত।

শৈশবে যখন আরবি শিখতে কষ্ট হতো তখনই ভাবতাম; আহ! আমি যদি আরব হতাম তাহলে আজ এতো কষ্ট করে আরবি শিখতে হতো না। কিন্তু এই অবস্থায়ও আরবির প্রতি আমার বিরক্তিভাব আসেনি; বরং কুরআন ও সুন্নাহর এই ভাষার প্রতি আমার দিনদিন প্রচন্ড আগ্রহ জন্মে।

আমি ঢাকার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বাইতুস সালাম মাদরাসায় ভর্তি হই এবং খুব আগ্রহ নিয়ে কয়েক বছর নিবিড়ভাবে আরবি ভাষা শিখি। এতে আরো গভীরভাবে আরবি শিখার প্রতি আমার আগ্রহ তীব্রতর হয়ে ওঠে। সিদ্ধান্ত নেই, দাওরা হাদিস সমাপ্ত করে নদওয়াতুল ওলামায় উচ্চতর আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করবো।

অন্যান্য আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে কওমি শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে অনেক কষ্ট হলেও নদওয়া এর ব্যতিক্রম। ২০১৭ সালে আমি যখন সেখানে যাই তখন আমার হাতে দাওরা হাদিসের সরকারি সনদ ছিল না, বেফাকের সার্টিফিকেট ব্যবহার করেই সেখানে এডমিশন নেয়ার সুযোগ পাই। ফলশ্রুতিতে দারুল উলুম নদওয়াতুল ওলামার উচ্চতর আরবি সাহিত্য বিভাগের একজন গর্বিত ছাত্র হতে পারি।

যুগশ্রেষ্ঠ ও সমকালীন অনেক ইসলামি স্কলারদের সান্নিধ্যে আরবিভাষার ইলম অর্জন করতে থাকি। নদওয়ার সুযোগ সুবিধা ও পরিবেশ পরিস্থিতি বাংলাদেশের কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য খুব অনুকূল ও চমৎকার। এখানে পড়তে এসে আমার চোখ খুলে যায়, বুঝতে পারি,দেশের বাইরে পড়াশোনা করা মানে নিজের জীবনকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আরো সমৃদ্ধ করা। এজন্য এদেশের কওমি শিক্ষার্থীদের সেখা নে পড়তে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেওবন্দ পড়াশোনার প্রক্রিয়াটা সহজ করা উচিত’
মুহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত।

আমি দারুল উলুম দেওবন্দে আসতে যতো বাধাবিপত্তি মাড়িয়েছি আল আযহার কিংবা মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও কেউ এরকম বাধার মুখে পড়েনি। ২০১২ সাল থেকে কয়েক বছর অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে ২০১৬ তে এসে দেওবন্দ আসার ইচ্ছাটা সম্পূর্ণ হয়।

আরব বিশ্বের ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে পড়াশোনার জন্য যেতে কোন বাধা নেই, কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের কওমি সনদ দিয়ে ভর্তি হওয়া যায় না। আর ঘরের পাশে দেওবন্দে আমাদের সনদ ঠিকই গ্রহণযোগ্য কিন্তু দু দেশের অসম্পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে স্টুডেন্ট ভিসায় কোন কওমি শিক্ষার্থী সরাসরি দেওবন্দ আসতে পারে না।

মোটকথা, কওমি শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রটা নিতান্তই সীমাবদ্ধ। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখের যে, আমরা দেওবন্দি আদর্শ ও সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানে পড়েও উচ্চশিক্ষার জন্য দেওবন্দে আসার যথাযথ সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

হাটহাজারীতে উপরের জামাতগুলো পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন বৈধ পন্থা অবলম্বন করে একাধিকবার দেওবন্দ আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই।

এভাবে কয়েকবছর কেটে গেলে একজনের পরামর্শে ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌর এশিয়ান একাডেমিতে এক বছরের স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ভর্তি হই। কোর্চ সম্পন্ন করার পর দারুল উলুম দেওবন্দের ভর্তির মৌসুম চলে আসে। এসময় আমি এশিয়ান একাডেমি থেকে আইনি প্রক্রিয়া মেনে নয় মাসের মাথায় 'ট্রান্সফার' সুবিধা গ্রহণ করি এবং দারুল উলুম দেওবন্দে দাওরায়ে হাদিসে ভর্তি হই।

সাথেসাথে আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সেটির নবায়ন করি। ফলে ২০১৭/১৮ শিক্ষাবর্ষে দেওবন্দে দাওরা হাদিস ও ২০১৮/১৯ শিক্ষাবর্ষে তাকমীলে ইফতার ওপর ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হই।

তবে আমার দেওবন্দে আসার কাজটা খুব সহজ ছিল না আগেই উল্লেখ করেছি। আমি যে পদ্ধতি অনুসরণ করে ভারতে এসেছি- এজন্য আমার অনেক পরিশ্রম, মানসিক চাপ ও বড় একটা অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। অথচ আমার ব্যয়কৃত টাকা দিয়ে অনায়াসে দূরে ভাল কোন দেশে গিয়ে পড়াশোনা করা যেতো। যাইহোক আল্লাহর শুকরিয়া আমি দারুল উলুম দেওবন্দে পড়তে পেরেছি তার বিশেষ অনুগ্রহে।

তবে যে বিষয়টা আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের কওমি শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে সবচে’ দেওবন্দেই বেশি আসতে চায়। এজন্য কওমি শিক্ষার্থীদের দেওবন্দসহ ভারতের অন্যসব জামিয়ায় পড়াশোনার সুযোগটা আরো সহজতর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের মৈত্রী দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো দরকার।

এর সঙ্গে আরও একটি কথা যুক্ত করতে চাই, যেসব মুহতারাম আকাবিরগণ এ বিষয়ে কাজ করছেন তাদের কাজের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন এবং দারুল উলুম দেওবন্দ কতৃপক্ষের চেষ্টা ও আন্তরিকতা খুবই জরুরি। যাতে দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা করে প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজের দীন ও দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেওবন্দ পড়াশোনার প্রক্রিয়াটা আরো সহজ করা সময়ের দাবি।

‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেওবন্দ-করাচির বিকল্প হতে পারে’
সাঈদ আব্দুল্লাহ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, দারুল উলুম আযাদভিল-দক্ষিণ আফ্রিকা।

দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একটি দেশের ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় এতো সমৃদ্ধ হবে ধারণায়ও আনেননি তিনি। দেশটির প্রসিদ্ধ দু’টি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় দেখলে শুধু তিনি কেন, যে কেউ আরব দেশের বড় কোন বিদ্যাপীঠ ভেবে ভুল করতে পারেন।

আমি আমার পিতার কথা বলছি। তাবলিগের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে তার সফর। দক্ষিণ আফ্রিকাও গিয়েছেন। দেশটির জোহানের্সবার্গে অবস্থিত দারুল উলুম আযাদভিল ও দারুল উলুম জাকারিয়া বিশ্ববিদ্যালয় দেখে তিনি দারুণ অভিভূত হন। আফ্রিকায়ও দীনী ইলমের এমন বিস্তৃত খেদমত দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন আমাকে দারুল উলুম আযাদভিলে ভর্তি করাবেন।

প্রতিষ্ঠানটিতে ছয় মহাদেশ থেকে অন্তত ৭০ টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। উপমহাদেশের দেওবন্দি শিক্ষাধারার কাছাকাছি সিলেবাসের এই প্রতিষ্ঠানের ভিতর-বাহির সব কিছুই আমার পিতার দারুণ পছন্দ হয়। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, বাংলাদেশের কওমি শিক্ষার্থীরা খুব অনায়াসেই এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে। আফ্রিকা থেকে ফেরার পরে আমাকে সব বিষয়ে অবহিত করেন এবং ভিসা সংক্রান্ত সমস্ত জটিলতা আব্বুই সমাধান করেন।

সে সময় আমি ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে জালালাইন জামাত সবে শেষ করেছি। মাদরাসা থেকে শরহে বেকায়া ও জালালাইন জামাতের সনদ উঠাই  এবং আমাকে সঙ্গে নিয়ে আব্বু শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত দক্ষিণ আফ্রিকান দূতাবাস থেকে ভিসার জন্য আবেদন করেন। পরে দেশে ফিরে আসার কিছুদিন পর দূতাবাস থেকে আমার দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার ভিসা নিশ্চিত করে।

২০১৭ সালের শেষের দিকে আমি বাংলাদেশ থেকে আফ্রিকা গমন করি। এবং দারুল উলুম আযাদভিলে অনেকটা আমাদের দেশের মেশকাত জামাতে ভর্তি হই। দুই বছর সেখানে পড়ে গত বছর দাওরা শেষ করে বাংলাদেশে এসেছি। সেখানে আমার পড়াশোনার বিষয় ছিল ইসলামিক ট্র‌্যাডিশোনাল থিওলোজি।

এখানের শিক্ষা সিলেবাস দেওবন্দের সঙ্গে অনেকক্ষেত্রেই মিল থাকায় কওমি শিক্ষার্থীরা খুব সহজে এখানে ভর্তি হতে পারে। তবে এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী ওইসব শিক্ষার্থী যারা মক্তব কিংবা হিফজ সমাপ্ত করে জামাত বিভাগে পড়তে চায়।

দারুল উলুম আযাদভিলে ছয় বছরের কোর্সে দাওরা পর্যন্ত পড়ানো হয়। তাছাড়া জেনারেল পড়াশোনা করা যেসব শিক্ষার্থী ইসলাম নিয়ে পড়তে চায় তারাও ও-লেভেল কিংবা এ-লেভেল শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় আসতে পারে। কিন্তু আমার নিকট দেশটির এ জাতীয় শিক্ষাকেন্দ্র সমূহকে বাংলাদেশের কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য অধিক উপযুক্ত মনে হয়।

এখানে ভর্তি হওয়া একজন শিক্ষার্থী খুব ভাল করে অন্তত তিনটি একাডেমিক ভাষা ( আরবি, উর্দু ও ইংরেজি) খুব ভাল করে আয়ত্ম করতে পারে। এখানে পড়তে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দাওয়াতের ক্ষেত্রটা তার জন্য বিস্তৃত হয়। ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ অথবা পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচির যোগ্য বিকল্প ইসলামি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ আফ্রিকার দারুল উলুম আযাদভিল কিংবা দারুল উলুম জাকারিয়া।

সুতরাং যেসব আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়াশোনা করতে চায় তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে পারে। এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্য ফলপ্রসূ হবে ইনশাআল্লাহ!

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ