বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


করোনা প্রেক্ষাপট: আর্ত মানবতার সেবা, মৃতের গোসল ও কাফন-দাফন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মামুন আব্দুল্লাহ কাসেমী।।

এক.
করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে পুরো দেশ লকডাউন। সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দোকানপাট, রাস্তাঘাট সব কিছুই আজ বন্ধ। নেই কাজের কোন উৎস। করোনা আতংকে কার্যতই মানুষ আজ গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে রুজি রোজগার করতে না পেরে খেটে খাওয়া দিনমজুররা খাদ্য সংকটে অসহায় অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।

তাই করোনায় সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দূর্দশাগ্রস্থ পরিবারের পাশে খাদ্যদ্রব্য, নগদ অর্থসহ জরুরী সহায়তা নিয়ে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসতে হবে।

দুর্গত অসহায় মানবতার পাশে সহযোগিতার হাত নিয়ে দাঁড়ানো অনেক সওয়াবের কাজ। এটা অন্যতম একটি ইবাদতও বটে। পবিত্র কুরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে- وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا

তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে,(সূরা দাহর: ৮)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ। তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে,(সূরা জারিয়াত: ১৯)। রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ، يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِما سَتَرَهُ اللهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَاَللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ

যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের পার্থিব কোন কষ্ট লাঘব করতে সহায়তা করবে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের ময়দানে তার কষ্ট দূর করে দিবেন।যে ব্যক্তি কোন দরিদ্র ঋনিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সহজতা প্রদর্শন করবে আল্লাহ তাআলা ইহকালে ও পরকালে তার সবকিছু সহজ করে দিবেন।কোন ব্যক্তি যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ তা'আলা ততোক্ষণ ঐব্যক্তিকে সাহায্য করতে থাকেন,(সহীহ মুসলিম: ২৬৯৯)।

অন্য হাদীসে আছে - أيما مؤمن أطعم مؤمنا على جوع أطعمه الله يوم القيامة من ثمار الجنة وأيما مؤمن سقى مؤمنا على ظمإ سقاه الله يوم القيامة من الرحيق المختوم

যে ব্যক্তি কোন ক্ষুধার্ত মানুষের আহারের ব্যবস্থা করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতের ফল-মূল খাওয়াবেন। আর যে ব্যক্তি কোন তৃষ্ণার্ত মানুষকে পানি পান করাবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতের মোহরাঙ্কিত সুধা পান করাবেন, (জামে তিরমীযি:২৪৪৯)।

তাই এই করোনা ভাইরাসের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত উদ্যোগে দুঃস্থ ও অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

স্থানীয়প্রশাসন,সমাজের বিত্তবান,জনপ্রতিনিধি,সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনকে স্বতস্ফুর্তভাবে সাধ্যমত ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসা উচিৎ।সহযোগীতা নিয়ে অসহায় মানবতার পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।

দুই.
বিশেষভাবে সমাজের নীরব অসচ্ছল, সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন পরিস্থিতির শিকার ব্যক্তিবর্গ,দ্বীনদার শ্রেনীর লোকদেরকে খুজে খুজে গোপনীয়তা রক্ষা করে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।কারন তারাতো কারো কাছে চাইতে পারবেনা। কুরআনে এসেছে- لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُم بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا ۗ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ

আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত সেই সকল অসচ্ছল লোকজন যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে আবদ্ধ যে,অর্থের সন্ধানে তারা ভূমিতে চলাফেরা করতে পারেনা।তারা যেহেতু অতি সংযমী হওয়ার কারনে কারও কাছে চায়না তাই অনবগত লোকেরা তাদেরকে বিত্তবান মনে করে।তোমরা তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদেরকে চিনতে পারবে।কিন্তু তারা মানুষের কাছে পিড়াপিড়ি করে চায়না।তোমরা যা বয় করো আল্লাহ তা'আলা তা ভালো করেই জানেন-(বাকারা:২৭৩)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- لَيْسَ الْمِسْكِينُ الَّذِى يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ وَلَكِنِ الْمِسْكِينُ الَّذِى لاَ يَجِدُ غِنًى يُغْنِيهِ وَلاَ يُفْطَنُ بِهِ فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ وَلاَ يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ1479

মিসকিনতো কেবল সে নয় যে একমুঠো খাবারের জন্য মানুষের দারে দারে ঘুরে বেড়ায়, বরং প্রকৃমত মিসকিনতো ঐ ব্যক্তি যার জীবিকা নির্বাহের সাধ্য নেই আবার তাকে দেখে বুঝাও যায়না যে মানুষ তাকে দান করবে এবং সে মানুষের কাছে চাইতেও যায়না-(বুখারী:১৪৬৯)।

এমনকি ত্রান বা সাহায্য-সহযোগিতার কথাও না বলা।গোপনে দমনকারীদেরকে আল্লাহ তা'আলা কেয়ামতের ময়দানে আরশে আজীমের ছায়াতলে আশ্রয় দান করবেন।

হাদীসে এসেছে- سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لا ظِلَّ إلَّا ظِلُّهُ: إِمامٌ عادِلٌ، وشابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّه تَعالى، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌفي المَسَاجِدِ، وَرَجُلانِ تَحَابَّا في اللَّه: اجتَمَعا عَلَيهِ، وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ، وَجَمَالٍ فَقَالَ: إِنِّي أَخافُ اللَّه، ورَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فأَخْفَاها، حتَّى لا تَعْلَمَ شِمالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينهُ، ورَجُلٌ ذَكَرَ اللَّه خالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ

সাত শ্রেনীর মানুষ, যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা আপন ছায়তলে আশ্রয় দান করবেন যেদিন তার ছায়া ব্যতিত আর কোন ছায়া থাকবে না। তাদের অন্যতম হলো সে ব্যক্তি যে গোপনীয়তা রক্ষা করে এমনভাবে দান করে যে,ডান হাতের দানের কথা বাম হাত পর্যন্ত অবগত হতে পারেনা-(সহীহ বুখারী:৬৬০)

তিন.
বিত্তবানদের জন্য আর্ত মানবতার সেবার একটি সহজতম উপায় হচ্ছে তারা অগ্রীম যাকাত আদায় করার মাধ্যমে সহায়তা করতে পারেন।কারন- অগ্রীম যাকাত দেওয়া জায়েজ আছে ।

হাদীসে এসেছে,হযরত আব্বাস রা. হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট অগ্রিম যাকাত আদায় করার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি প্রদান করেন।
عن علي رضي الله عنه أن العباس سأل النبي صلى الله عليه وسلم في تعجيل زكاته قبل أن تحل فرخص له في ذلك

তাই যাদের উপর যাকাত ফরজ তারা করোনা ভাইরাসের এই নাজুক পরিস্থিতিতে আগামী রমযানের যাকাত গরীব-দুঃখীদের মাঝে প্রদান করতে পারেন।

চার.
চিকিৎসাসেবা একটি ইবাদত ও মহৎ কাজ।আর মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তি শহীদি কাফেলার যাত্রী।যদি মৃত্যু অবধারিত হয় তাহলে আল্লাহ তা'আলা তাকে শাহাদাতের উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। এমন একজন মানুষের সেবা শুশ্রূষা করা পরম সৌভাগ্যের বিষয়।

কোন চিকিৎসকের চিকিৎসা পরামর্শ ও সেবায় একজন মানুষও যাদি সুস্থ জীবন লাভ করে তাহলে সে তার নিয়তের পরিশুদ্ধতার কারনে গোটা মানবতার সেবার তাৎপর্য লাভ করবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন- وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا আর যে ব্যক্তি কারো জীব বাচালো সে যেনো সকলের জীবন বাচালো,(সূরা মায়েদা:৩৮)।

চিকিৎসা সেবা ও রুগ্ন ব্যক্তির সেবা-শুশ্রূষার অসংখ্য ফযিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আলী রা. এর বর্ননায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إلا صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِيَ , وَإِنْ عَادَهُ عَشِيَّةً إلا صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبِحَ ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الْجَنَّةِ

কোন মুসলমান যখন সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়,সত্তর হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করতে থাকে,(জামে তিরমীযি:৯৬৯)

হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন- إنَّ المسلِمَ إذا عادَ أخاه المسلِمَ، لم يَزَلْ في خُرْفَةِ الجَنَّةِ حتى يرجعَ। কোন মুসলমান যখন অপর মুসলমানের সেবা শুশ্রূষা করতে যায় তখন সে সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের বাগানে বিচরণ করতে থাকে,(সহীহ মুসলিম :৬৩১৯)।

অন্য হাদীসে আছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করে বলেন- عُودُوا المَرِيضَ، وَأَطْعِمُوا الجَائعَ، وفَكُّوا العَاني তোমরা রোগীদের সেবা করো,ক্ষুধার্তদেরকে অন্য দাও এবং বন্দিদের মুক্তি দাও, (সহীহ বুখারি:৮৯৭)

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে রোগীদেরকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা না দেওয়া হলে এটা হবে বড় দুঃখজনক। রোগীদেরকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া আমাদের সামাজিক নৈতিক দায়িত্ব,রাষ্ট্রীয় কর্তব্য এবং সর্বপরি একজন মুসলমান হিসেবে ঈমানী করনীয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- حق المسلم على المسلم خمس: رد السلام، وعيادة المريض، واتباع الجنائز، وإجابة الدعوة، وتشميت العاطس

একজন মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে,যথা-সালামের জবাব দেওয়া,রোগির সেবা শুশ্রূষা করা,জানাযার সাথে যাওয়া,দাওয়া গ্রহন এবং হাঁচির জবাব দেওয়া।

করোনায় আক্রান্ত কোন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিলে ডাক্তার ও নার্সরাও নিশ্চিত করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবে এমনটা মনে করা ঠিক নয়। এটা ইসলামের আকিদা বিশ্বাসের পরিপন্থী।

সহীহ হাদীসে আছে- لا عَدْوَى وَلا طِيَرَةَ وَلا هَامَةَ وَلا صَفَرَ ". অর্থ: রোগ আল্লাহ তায়া’লার হুকুম ছাড়া নিজস্ব ক্ষমতায় কাউকেই আক্রান্ত করতে পারে না,(সহীহ বুখারী:৫৩১৬)।

তাই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে সম্মানিত চিকিৎসকবৃন্দ আতংকিত না হয়ে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে পূর্ন প্রটেকশনসহ পরকালের উপার্জন হিসেবে সেবা করুন। আপনারাই বর্তমান জাতির সূর্য সন্তান।

একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রটেকশন হচ্ছে,রুগ্ন ব্যক্তির কাছে উপস্থিত হলে হাদীসে বর্নিত নিজের সংরক্ষণের জন্য নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়া-
الحمدُ للهِ الذي عافَانِي مِمَّا ابْتلاكَ به ، و فَضَّلَنِي على كَثيرٍ مِمَّنْ خلق تَفضِيلًا

সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি তোমার বিপদ আমাকে রক্ষা করেছেন এবং তার অনেক অনেক সৃষ্টির উপরে আমাকে প্রাধান্য দিয়ে রেখেছেন অর্থাৎ ভালো রেখেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- مَن رَأَى مُبتَلًى فقال : الحمدُ للهِ الذي عافَانِي مِمَّا ابْتلاكَ به ، و فَضَّلَنِي على كَثيرٍ مِمَّنْ خلق تَفضِيلًا ، لَمْ يُصِبْهُ ذلكَ البلاءُ অর্থ: যে ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখে উপরোক্ত দোয়াটি পড়বে সে ঐবিপদে আক্রান্ত হবেনা,(জামে তিরমীযি:)।

এছাড়া করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দ্রুত সুস্থতার জন্য ডাক্তার ও নার্স এবং সংশ্লিষ্ট কর্তব্যরত ব্যক্তিরা তার সামনে উপস্থিত হলে সাতবার করে পড়বে- أسأل الله العظيم رب العرش العظيم أن يشفيك মহান আরশের মহান অধিপতির নিকট আমার প্রার্থনা, তিনি যেন তোমাকে আরোগ্য দান করেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-من عاد مريضاً لم يحضر أجله فقال عنده سبع مرارٍ: أسأل الله العظيم رب العرش العظيم أن يشفيك، إلا عافاه الله من ذلك المرض কোন ব্যক্তি যাদি অন্তিম রোগে রুগ্ন নয় এমন অসুস্থ মানুষের সেবা শুশ্রূষা করার সময়ে উপরোক্ত দোয়াটি সাতবার পড়ে তাহলে আল্লাহ তা'আলা ঐ অসুস্থ ব্যক্তিকে উক্ত রোগ থেকে আরোগ্য দান করেন,(সুনানে আবু দাউদ:৩০০৬)।

পাঁচ.
পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তার প্রাথমিক চিকিৎসা ও দেখাশোনা পরিবারের অন্যান্যদের উপর বর্তায়। সুখে দুঃখে পাশে থাকার নামই মানবতা।জ্বর,সর্দি বা কাঁশি হলে করোনার ভয়ে তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া তথা উপযুক্ত দেখাশোনা না করা কিছুতেই মনুষ্যত্ব হতে পারেনা।এর কারনে আল্লাহ তা'আলার আদালতে কঠিন জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। হাদীসে এসেছে- إن الله عز وجل يقول يوم القيامة يا ابن آدم مرضت فلم تعدني قال يا رب كيف أعودك وأنت رب العالمين قال أما علمت أن عبدي فلانا مرض فلم تعده أما علمت أنك لو عدته لوجدتني عنده

কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তা'আলা একব্যক্তিকে ডেকে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি সেবা করোনি।সে আরজ করবে,আমি আপনার ক্ষুদ্র মাখলুক হয়ে আপনার কিভাবে সেবা করতে পারি,আপনিতো বিশ্বজাহানের মালিক!
আরে তোমার জানা ছিলোনা যে,আমার উমক বান্দা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো,তুমি তার সেবা শুশ্রূষা করোনি।তুমি সেদিন তার সেবা সেবা শুশ্রূষা করলে প্রকারান্তরে আমারই সেবা করা হতো,(সহীহ মুসলিম:৬৩২২)।

কারো মধ্যে প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে বাসা-বাড়িতে উপস্থিত লোকজনের দায়িত্ব তার সেবা করা এবং যথাসম্ভব তার মনোবল চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করা।
সেক্ষেত্রে তার সামনে বেশিবেশি পড়া-
لا بأس طهور إن شاء الله
অসুস্থ হয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই,সেরে উঠবেন এবং আল্লাহ চাহেন তো এর দ্বারা আপনার গুনাহ মাফ হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন রুগ্ন ব্যক্তি বিশেষত জরাক্রান্তকে দেখতে গেলে এই দোয়াটি পড়তেন,(সহীহ বুখারী:৩৬১৬)।

ছয়.
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাকে গোসল দিতে হবে।সর্বাবস্থায় তাকে গোসল করাতে হবে।চিকিৎসক যদি সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রটেকশন গ্রহণ করে চিকিৎসা করতে পারেন তাহলে সেভাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে গোসলও দেওয়া যাবে।এটা ফরযে কেফায়া তথা দু-তিন জন এমনকি একজন করলেও সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে।কিন্তু গোসল না করালে সমাজের এবং দেশের সবাই সম্মিলিতভাবে গুনাহগার হবে। এটা বড় মারাত্মক কথা। হাদীসে এসেছে,ইহরাম অবস্থায় উটের দ্বারা পদপিষ্ট হয়ে মারা গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ করলেন- اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ তোমরা পানি ও বরই পাতা দিয়ে তাকে গোসল করাও,(বুখারী:১২৬৫)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক মেয়ে ইন্তেকাল করলে মহিলাদেরকে লক্ষ করে তিনি বললেন- اغْسِلْنَهَا ثَلَاثًا، أَوْ خَمْسًا، أَوْ سَبْعًا، أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ إِنْ رَأَيْتُنَّ তোমরা তাকে তিনবার,পাঁচবার,সাতবার পানি ঢেলে গোসল করাও,প্রয়োজনে আরো বেশি পানি ব্যবহার করতে পারো,(বুখারী:১২৫৯)।

আলোচ্য হাদীসের আদেশ সূচক শব্দ ব্যবহারের তাৎপর্যের ভিত্তিতে বুঝা যায়,মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো সামাজিক আবশ্যকীয় কর্তব্য।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই মহামারিতে কোন মুসলমান মারা গেলে তাকে ইসলামী বিধানানুযায়ীই দাফন কাফন করতে হবে।
এ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْهِ এবং তোমরা তাকে তার ইহরামের দুই কাপড়ে কাফন দাও,(বুখারী:১২৬৫)।

সর্বশেষ শরীয়ত সম্মতভাবে তাকে দাফন তথা কবরস্থ করা।এটি ইসলামের একটি বড় সৌন্দর্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বিধান।জীবিতদের উপরে ফরজে কেফায়া। মৃত্যু পরবর্তি অন্তেষ্ক্রিয়া প্রক্রিয়া উল্লেখ করে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে বলেন- ثُمَّ أَمَاتَهُ فَأَقْبَرَهُ অত:পর তিনি মৃত্যু দেন এবং কবরস্থ করেন,(সূরা আবাসা:২১)।

তাই দাফন ও কবরস্থ করাও ফরজ।এর কোন বিকল্প নেই।
দুঃখজনকভাবে বলতে হয় আজ ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে টিভি টকশোতে করোনায় আক্রান্তদের লাশ আগুনে পুড়ে ফেলার কথা হচ্ছে। এমন কথা মেনে নেওয়া যায়না। মুসলমানের লাশ আগুনে পুড়ার কথা চরম ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়। লাশ আগুনে পুড়ে ফেলা হিন্দুয়ানী রীতি নীতি এবং মুসলমানদের জন্য ইহা হারাম।
ঢালাওভাবে করোনায় মৃতদের লাশ আগুনে পুড়ার কথা বলে ওরা মূলত এদেশকে হিন্দুয়ানী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে।এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।

সাত.
আজ সর্বত্রই শুধু আতংক আর আতংক।আতংকিত না হয়ে শরঈ বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার,স্বাস্থ্য বিভাগ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে,বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত মানুষের জীবনে আসতেই থাকে। মুসলিম-অমুসলিম সবার জীবনেই আসে। কিন্তু বিপদাপদে মুমিনের শানই আলাদা। হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ، إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ، وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ، فَكَانَ خَيْرًا لَهُ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ، صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ.

মুমিনের অবস্থা বড়ই বিস্ময়কর! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য, অন্য কারো নয়। সুখ-সচ্ছলতায় মুমিন শোকর আদায় করে ফলে তার কল্যাণ হয়। আবার দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদের সম্মুখীন হলে ধৈর্য্য ধারণ করে। ফলে এটিও তার জন্য কল্যাণকর হয়,( –সহীহ মুসলিম: ২৯৯৯; সহীহ ইবনে হিব্বান:২৮৬৯)।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ