শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


করোনা সংকটে মুহতামিমদের সমীপে কিছু নিবেদন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ এহসানুল হক ।।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে পৃথিবীর একশ কোটি মানুষ এখন গৃহবন্দি। থেমে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। স্থবির হয়ে গেছে মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য। পৃথিবী আবার কবে স্বমহিমায় জেগে উঠবে বলা যায় না। তবে এটা নিশ্চিত- পরিস্থিতি সহসাই উন্নতি হচ্ছে না। বিপদ শুধু করোনাই নয়, চলমান লকডাউন আর অঘোষিত কারফিউয়ের ফলে সামনে ধেয়ে আসছে অর্থনৈতিক সংকট। কওমি মাদরাসায় শিক্ষকতা করে যাদের জীবন চলে তাদের অনেকের জীবন এখন এই গভীর সংকটের মুখোমুখি।

ফেসবুকের কল্যাণে কিছু মাদরাসা শিক্ষকের অর্থ কষ্টের বেদনাদায়ক সংবাদও আসছে। চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কিছু মুহতামিমের ভুলের কারণে গোটা মুহতামিম সমাজকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়ার অবস্থা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার, কওমি মাদরাসাগুলোর এ পযর্ন্ত আসা, শিক্ষা কার্যক্রমের সাফল্য, আবাসন ব্যবস্থার উন্নতিসহ সবকিছুর পেছনেই সিংহভাগ অবদান মুহতামিমদের। মুহতামিমদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর সাধনার উপর দাঁড়িয়ে আছে মাদরাসাগুলোর অবকাঠামো।

মুহতামিমদের ঢালওভাবে সমালোচনা করা উচিত নয়। আশপাশে তাকালেই দেখবেন বেশিরভাগ মুহতামিম জীবন উৎসর্গ করেছে মাদরাসার কল্যাণে। কওমি মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি কম সময় হয়নি। আট নয় বছর হয়ে গেল। মুহতামিম হিসেবে পেয়েছি শাইখুল হাদিস রহ. এর সন্তান মাওলানা মাহফুজুল হকের মতো ব্যক্তিকে। কাছ থেকে দেখছি- মাদরাসার জন্য তিনি কী পরিমাণ পরিশ্রম করেন, প্রবীণ উস্তাদদের কতটা সম্মান করেন, ছোটদের কীভাবে স্নেহ করেন। দেখি আর মুগ্ধ হই।

আমরা যখন রাহমানিয়ার ছাত্র, আমাদের উস্তাদ আব্দুর রহিম সাহেব (বর্তমান মুহাদ্দিস, দারুল উলুম সাহাবানিয়া) বলতেন, সেরা মুহতামিমদের পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা থাকলে সেটা মাহফুজ সাহেব পেতেন।

এভাবেই প্রতিটি মাদরাসার মুহতামিমগণ নিজেদের সবোর্চ্চ মেধা ও শ্রম ব্যয় করে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন প্রতিষ্ঠানগুলো। আমি বিশ্বাস করি করোনাকালীন এই সংকটকালেও মুহতামিমরাই হাল ধরবেন ইনশাআল্লাহ। করোনা ভাইরাসের এই সংকট সামনের দিনগুলোতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। সে জন্য আমাদের এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।

বর্তমান এই সংকটে কী করতে হবে মুহতামিমরা ভালো বুঝবেন, তবুও কিছু ভাবনা বিনিময় করি। দু'একটি কথা কারো কাজে লাগতেও পারে।
এক. কওমি মাদরাসার সবোর্চ্চ অভিভাবক সংগঠন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া। বেফাকের পক্ষ থেকে মাদরাসা বন্ধের ঘোষণা ছাড়া এখন পযর্ন্ত আর কোনো দিক-নিদের্শনা আসেনি। কিন্তু আসা দরকার ছিল। ঢাকার বড় মাদরাসার মুহতামিমগণ অনেকেই বেফাকের দায়িত্বশীল। এহেন পরিস্থিতিতে আপনারা আলোচনা করে করণীয় ঠিক করুন। অসহায় মাদরাসাগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করুন। ইমেল বা হোয়াটআপের মাধ্যমে সকল মাদরাসায় দিকনির্দেশনামূলক বার্তা পাঠিয়ে দিন।

দুই. ঢাকার বড় মাদরাসাগুলোতে অর্থ সংকট নেই বললেই চলে। অনেক মাদরাসা কমিটি কর্তৃক পরিচালিত। প্রায় সকল মাদরাসারই বিত্তশালী শুভাকাঙ্ক্ষী মহল আছে। ঢাকার মুহতামিমগণ চাইলে তাদের সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বিপদগ্রস্ত মাদরাসাগুলোর সহায়তার লক্ষ্যে কল্যাণ ফান্ড গঠন করতে পারেন।

তিন. গ্রামের অধিকাংশ ছোট মাদরাসা ঢাকার কোনো মুহতামিম/মুরুব্বির এর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়ে থাকে। সেই মাদরাসাগুলোর দিকে একটু নজর দিন। কল্যাণ ফান্ড থেকে তাদের দুই বা তিন মাসের বেতনের ব্যবস্থা করা গেলে আশা করা যায় কিছু আলেম পরিবারের মুখে হাসি ফুটবে।

চার. সব মাদরাসাই এখন বন্ধ। শিক্ষকরা বাড়িতে। মাদরাসা ফান্ডে অর্থ থাকলে বেতন বাকি রাখা ঠিক হবে না। কোনো শিক্ষকের বেশি প্রয়োজন সেটা মুহতামিমরা অবশ্যই জানেন। ফোন করে একটু তাদের খোঁজ নিন। সম্ভব হলে কিছু টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিন। মাদরাসার এই অবদান সে আজীবন স্মরণ রাখবে। আর যাদের প্রয়োজন তুলনামূলক কম তাদের উচিত হবে মুহতামিমদের সহযোগিতা করা।

পাঁচ. ঢাকার বাইরে প্রায় সব জেলাতেই বিভিন্ন নামে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ ফোরাম আছে, ইত্তেফাক, উলামা পরিষদ ইত্যাদি নামে। এই বিপদের মুহূর্তে সংগঠনগুলো যদি তাদের পাশে না দাড়াঁয় তাহলে এসব সংগঠনের সার্থকতা কী? তাদের উচিত দরিদ্র মাদরাসাগুলোর সহায়তার জন্য বিশেষ ফান্ড গঠন করা। আর্থিকভাবে দুর্বল প্রতিষ্ঠান গুলোর যদি সহযোগিতা করা যায়, তাহলে তাদের কষ্টের ভার অনেকটাই লাঘব হবে।

ছয়. গ্রাম অঞ্চলের যেসব মাদরাসার সংকট এরপরেও কাটবে না। ওই সকল মাদরাসার মুহতামিমদের উচিত হবে স্থানীয় দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে বেফাকের সাথে যোগাযোগ করা। এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিতান্তই কম হবে। শুধু এই শ্রেণির মাদরাসাগুলো পাশে দাঁড়ানোর জন্য বেফাকের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে। তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।

এসব পদ্ধতি অবলম্বন শুধুই উসিলা মাত্র। আমাদের একমাত্র ভরসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর। করোনাভাইরাসের এই ভয়বহ বিপর্যয় থেকেই তিনি আমাদের রক্ষা করতে পারেন। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, এই মহামারি থেকে তিনি আমাদের মুক্তি দেন। আমাদের মাদরাসাগুলোকে যাবতীয় সংকট থেকে হেফাজত করেন। আমিন।

লেখক: শিক্ষক, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ