শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

মার্কিন মুলুকে ইসলামের অগ্রযাত্রা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

MUSLIMS-IN-AMERICA-ourislam24ফারুক ফেরদৌস : আমেরিকান নও মুসলিম আমিনা এসলিমি মুসলমানদের সহপাঠী হয়েছিলেন ভুল করে। অনলাইনে নতুন টার্মের ক্লাসে ভর্তি নিবন্ধন করতে গিয়ে তিনি বিষয় নির্বাচনে ভুল করেন। পরে ভুল বুঝতে পেরে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, ভুল সংশোধনের কোনো উপায় নেই।

ওই বিভাগের বেশিরভাগ ছাত্রই ছিলো আরব মুসলমান। পছন্দের বিষয়ে পড়তে না পারার চেয়ে তার বেশি মন খারাপ হয়েছিলো এই কারণে। স্বামী বলেছিলেন, স্রষ্টা মনে হয় তোমাকে আরব মুসলমানদের কাছে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারের জন্য মনোনীত করেছেন। মুসলমানদের কাছে ইসলামের ভুল ত্রুটি তুলে ধরার জন্য তিনি ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করেন। এই পড়াশোনা তাকে একটু একটু করে বদলে দিতে থাকে। দেড় বছরের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে কালিমা পড়ে মুসলমান হন আমিনা এসলিমি। স্বামীর সাথে তার বিচ্ছেদ হলো। আদালত দুই সন্তানকেও তার কাছ থেকে কেড়ে নিলো। অম্লান বদনে সব সহ্য করে তিনি ইসলামের ওপর অবিচল থাকলেন।

আমিনা এসলিমি এখন ইসলামের একজন একনিষ্ঠ প্রচারক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ইসলাম সম্পর্কে তার অনুভূতি তুলে ধরে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। তার দাওয়াতে তার দাদি, মা, বাবা, ভাই, বোন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তার সাবেক স্বামী জানিয়েছেন তিনি চান তাদের মেয়েরা মায়ের ধর্মই অনুসরণ করুক। এভাবেই ইসলামের আওয়াজ উচ্চকিত হচ্ছে আমেরিকায়। একজন মুসলমান হয়ে আরো দশজনের ইসলাম গ্রহণের কারণ হচ্ছেন। নও মুসলিমরা হয়ে যাচ্ছেন ইসলাম প্রচারক। মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। বাড়ছে মসজিদের সংখ্যা।

সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকায় মুসলমানদের সংখ্যা গত এক দশকে বেড়েছে প্রায় দশ লক্ষ। ২০০০ সনে আমেরিকায় মুসলমান ছিলো ১০ লক্ষ। সংখ্যাটি বেড়ে এখন ২৬ লাখে পৌঁছেছে। ২০০০ সনে আমেরিকায় মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স ছিলো ১২০৯ টি। সেই সংখ্যা বেড়ে ২০১১ সনে হয়েছে ২১০৬। এখন সংখ্যাটি প্রায় তিন হাজার। নিউইয়র্কে ২৫৭টি, ক্যালিফোর্নিয়ায় ২৪৬টি, টেক্সাসে ১৬৬টি মসজিদ আছে।

ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠ ম্যারিল্যান্ডে ১০ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে একটি নতুন মসজিদ। দিয়ানাত ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নামের এই মসজিদটি তুর্কি অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। এ বছর এপ্রিলের শুরুতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান মসজিদটি উদ্বোধন করেন। আমেরিকান মুসলমানদের চল্লিশ ভাগ মসজিদে নামাজ পড়েন। জুমার মুসল্লির সংখ্যা প্রায় ২.৬ মিলিয়ন।

আমেরিকায় মুসলমানদের সংখ্যা গত এক দশকে বেড়েছে প্রায় দশ লক্ষ। ২০০০ সনে আমেরিকায় মুসলমান ছিলো ১০ লক্ষ। সংখ্যাটি বেড়ে এখন ২৬ লাখে পৌঁছেছে। ২০০০ সনে আমেরিকায় মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স ছিলো ১২০৯ টি। সেই সংখ্যা বেড়ে ২০১১ সনে হয়েছে ২১০৬।

ইসলাম প্রচারে আমেরিকায় মসজিদ ভিত্তিক ওয়াজ মাহফিল, সেমিনার, বক্তৃতা, বিতর্ক ইত্যাদির ধারাবাহিকতা বহু দিনের। বিরাট হলঘর ভাড়া নিয়ে তাবলিগ জামাতের ইজতেমাও হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। পাশাপাশি নতুন নতুন পদ্ধতিরও উদ্ভাবন ঘটছে। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েব সাইট ভিত্তিক দাওয়াতি কার্যক্রম জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি ‘ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা’ নামের একটি সংস্থা সেখানে ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যবহার করেছে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড। ব্যয়বহুল বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড ভাড়া নিয়ে কুরআনের আয়াত, রাসুল সা. এর হাদিস লেখা হয়েছে। সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে সংস্থাটির ওয়েবসাইটের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার। সংস্থাটির সাথে জড়িতরা মিডিয়াকে জানিয়েছেন তারা বেশ ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন। লোকজন বিরক্ত করার জন্য ফোন দিলেও কিছুক্ষণ কথা বলে সুর নরম করছে। ইসলাম বিষয়ে তাদের যে কোনো প্রশ্নের জন্য কথা বলতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। বিনামূল্যে অর্থসহ কুরআন সংগ্রহেরও সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এই বিলবোর্ডগুলোর প্রতিটির জন্য মাসে প্রায় তিন হাজার মার্কিন ডলার ভাড়া গুণতে হয়। এই বিপুল অর্থের যোগান আসে আমেরিকান মুসলমানদের দানের টাকা থেকে।

TEANECK, NJ - OCTOBER 26: Muslim-American men greet each other at the annual Eid al-Adha prayer held at the Teaneck Armory in Teaneck, New Jersey. Eid al-Adha, also known as the Feast of the Sacrifice, commemorates Abraham's willingness to sacrifice his son as an act of obedience to God, who in accordance with tradition then provided a lamb in the boy's place. (Photo by Robert Nickelsberg/Getty Images)

আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ^জুড়ে মানুষের ব্যাপকহারে ইসলাম গ্রহণ পশ্চিমা মিডিয়ায়ও একটি আলোচিত বিষয়। ২০১৩র ২৯ সেপ্টেম্বর ইকোনমিস্ট তাদের অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো, ‘হোয়াই পিপল কনভার্ট টু ইসলাম।’ সেই প্রতিবেদনে ইকোনমিস্ট পশ্চিমাদের ইসলাম গ্রহণের কারণ হিসেবে দেখিয়েছে পশ্চিমা সমাজের অনিয়ন্ত্রিত জীবন, পাপাচার, বেহায়াপনা এবং মুসলমানদের নিয়ন্ত্রিত শালীন জীবনযাপন ও সামাজিক বন্ধনকে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে ইসলাম গ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ নারী যাদের অনেকেই মুসলমান ছেলে বিয়ে করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছেন। জীবনসঙ্গী হিসেবে খৃষ্টান ছেলেকে তারা বিশ^স্ত মনে করেননি।

সম্প্রতি তেহরানে পবিত্র কুরআনের একুশ তম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নিতে এসে মার্কিন নও মুসলিম নারী মিসেস গ্লেন্ডা ওরবিনও একইরকম বক্তব্য দিয়েছেন। আমেরিকার সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, অধঃপতন যত বাড়ছে, ইসলাম সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ ততই বেড়ে যাচ্ছে।

আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকম / আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ