শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


ব্যাচেলররা কি বাংলাদেশের নাগরিক না?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

basavara

পলাশ রহমান; অতিথি লেখক, আওয়ার ইসলাম

ঢাকায় ব্যচেলরদের বাসা ভাড়া দেয়া হয় না। বাসা ভাড়া পেতে অনেক বেগ পেতে হয়। বাড়িওয়ালারা অধিক ভাড়া হাকায়। এসব অভিযোগ অনেক পুরনো। এখন আবার মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে নাজিল হয়েছে 'জঙ্গি সমস্যা'। গুটি কয়েক বিপথি ছেলে-ছোকড়ার কারণে দেশের সরকার, প্রশাসন এবং মিডিয়াগুলো এমনভাবে প্রচার অভিযানে নেমেছে যেন কথিত জঙ্গি বাদ দিলে দেশে আর কোনো যুবক নেই। এতে যেমন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশে এবং দেশের তরুণ প্রজন্মের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, তেমনি দেশের মধ্যেও যুবক ব্যাসেলররা পড়েছে মহা বিপাকে।

কেউ তাদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না। যারা আগে থেকে বাসা ভাড়া নিয়ে আছে তাদের বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে, দিচ্ছে বাড়িওয়ালারা। বাসা ছাড়তে না চাইলে বাড়িওয়ালারা পোষ্য মাস্তান দিয়ে নাজেহাল করে। জঙ্গি বলে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। আমি কোনো ভাবেই বুঝতে পারি না, একটা দেশের সরকার তার দেশের তরুণ যুবক প্রজন্মের বিরুদ্ধে এমন হঠকারি সিদ্ধান্ত নেয় কি করে? কেনো বাড়িওয়ালারা ব্যচেলরদের কাছে বাসা ভাড়া দেবে না? কেনো স্বল্প সময়ে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেবে? কেনো বেশি ভাড়া হাকাবে? গুটি কয়েক কথিত জঙ্গির অযুহাতে দেশের লাখ লাখ মানুষকে বিপদে ফেলা, হয়রানি করা, নাজেহাল করা কোন বিবেচনায় ঠিক হতে পারে?

কাল বিবিসি বাংলার খবরে শুনলাম একজন বাড়িওয়ালা মহিলা বলছেন, তার বাসার একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে ক'জন ব্যচেলর থাকে। তিনি তাদের উপর নজরদারি বাড়িয়েছেন। প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও তিনি ব্যচেলরদের ঘরে যান। তারা কি করছে না করছে, কোথায় কি রেখেছে, কে কে আছে, কি খাচ্ছে সব কিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেন। আমি ওই মহিলার কথা শুনে বড্ড অবাক হয়েছি! এ আবার কেমন তরো কথা! বাড়িওয়ালা কেনো প্রতিদিন ভাড়াটিয়ার ঘরে ঢুকবে? কেনো তাদের সব কিছু তদারকি করবে? হোক ব্যচেলর, তাই বলে কি তাদের 'প্রাইভেসি' বলে কিছু নেই? বাড়িওয়ালা কি পুলিশ প্রশাসন? এতে কি মানুষের অধিকার খর্ব হয় না? মানুষকে হয়রানি, নির্যাতন করা হয় না?

প্রশাসন নাকি বাড়িওয়ালাদের বাসা ভাড়া দেয়ার আগে ভাড়াটিয়ার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দিয়েছে! এ আবার কেমন কথা! বাড়িওয়ালা কেনো ভাড়াটিয়ার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করবে? কিভাবে করবে? ভাড়াটিয়ার সব তথ্য কেনো বাড়িওয়ালার কাছে থাকবে? এর যৌক্তিকতা কি? একজন নাগরিকের তথ্য আরেকজন সাধারণ নাগরিক কেনো সংগ্রহ করবে? এর কোনো অপব্যবহার হলে সে দায় কে নেবে? প্রশাসন কিভাবে এমন অবান্তর এবং মানুষের অধিকার বিরোধী নির্দেশ দিতে পারে!? বাড়িওয়ালা কেনো ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করে প্রশাসনের কাছে জমা দেবে? বাড়িওয়ালা কি হোটেল মালিক? ভাড়াটিয়া কি দু'দিনের হোটেল গেষ্ট? বাড়িওয়ালারা ব্যসেলরদের কাছে বাসা ভাড়া দেয় না, দিতে চায় না। কেউ কেউ এসব কথা সাইবোর্ডে লিখে রাখে। আমি অবাক হই, একটা স্বাধীন দেশে কিভাবে এমন অনিয়ম, অত্যাচার এবং প্রকাশ্য অসম্মান চলতে পারে? একজন যাত্রি যেখানে যেতে আগ্রহী একজন সিএনজি বা ট্যাক্সিওয়ালা যদি যাত্রিকে সেখানে নিয়ে যেতে বাধ্য থাকে, এর পক্ষে আইন থাকে, বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে কেনো থাকবে না? যারা বাসা ভাড়া দেয়ার ব্যবসা করে তারা কেনো এমন আইনের অাওতায় পড়বে না? একজন বাড়িওয়ালা কিভাবে প্রকাশ্যে লিখে রাখতে পারে ব্যচেলরদের বাসা ভাড়া দেয়া হয় না! ব্যচেলররা কি বাংলাদেশের নাগরিক না? একজন নাগরিকের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অধিকার কি তাদের নেই? তাছাড়া এটাতো সরাসরি একজন নাগরিক দ্বারা অন্য একজন বা এক শ্রেণীর নাগরিককে অসম্মান করা, মানসিক নির্যাতন করা। একটা দেশের প্রশাসন কি ভাবে তা করতে দিতে পারে?

যারা সাইবোর্ডে এসব কথা লেখে তাদের বিরুদ্ধে কেনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না? কেনো ব্যবস্থা নেয়ার মতো আইন করা হয় না? বাড়িওয়ালারা ইচ্ছা মতো ভাড়া হাকায়। বছর বছর ভাড়া বাড়ায়। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, বাংলাদেশ কি কোনো সভ্য মানুষের দেশ, নাকি মগের মুল্লুক? বাসা ভাড়ার বিষয়ে সরকারের পরিস্কার নীতিমালা থাকা দরকার। এতে ভাড়াসহ সকল বিষয় উল্লেখ থাকবে। অমান্যকারীদের কি শান্তি হবে তাও উল্লেখ থাকতে হবে। বাসার স্কয়ার মিটার অনুযায়ী ভাড়ার সরকারি নির্দেশনা থাকতে হবে। যারা বাসা ভাড়া দেয়ার ব্যবসা করে তারা যে কোনো নাগরিককে বাসা ভাড়া দিতে আইনগত বাধ্য থাকবে। যদি কেউ ভাড়া দিতে না চায় তার বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ করার সুযোগ থাকতে হবে। বাসা ছাড়ার নোটিশের ক্ষেত্রে পরিস্কার নির্দেশনা থাকবে। অন্তত তিন মাস আগে ভাড়াটিয়াকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে।

bacholor2

একই ভাবে ভাড়াটিয়াও নূন্যতম একমাস আগে জানাবে। বাড়িওয়ারা বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিলে গ্রহণযোগ্য কারন থাকতে হবে। বাড়িওয়ালা বা ভাড়াটিয়া কেউ কারো 'প্রাইভেসি' নষ্ট করতে পারবে না। কোনো বিষয়ে অযাচিত নাক গলাতে পারবে না। ফ্লাট বাসায় থাকার আদব কায়দা এবং নিয়ম নীতি মানতে সবাই বাধ্য থাকবে। না মানাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করতে হবে। বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালার মধ্যে আইনি ধারাসহ একটা লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। সরকারকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সেই চুক্তি নির্দিষ্ট দপ্তর থেকে রেজিট্রেশন করতে হবে।

রেজিট্রেশনের সময় ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা উভর উপস্থিত থাকতে হবে। দু'জনেরই বৈধ ডকুমেন্ট এবং ছবি জমা দিতে হবে। চুক্তিতে উল্লেখিত ভাড়া অনুযায়ী বাড়িওয়ালা বছর বছর সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করবে। যদি কোনো বাড়িওয়ালা রেজিট্রেশন ছাড়া ভাড়াটিয়া রাখে তবে বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়া উভয়ের শাস্তির বিধান থাকতে হবে। বাসায় কোনো অঘটন ঘটলে বা কোনো অপরাধী সন্ত্রাসী থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। প্রশাসন বাসা ভাড়ার চুক্তি থেকে ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করে আইনি ব্যবস্থা নেবে। কোনো বিষয়ে বাড়িওয়ালার সন্দেহ হলে প্রশাসনকে জানাতে পারবে অথবা অন্তত তিন মাসের সময় দিয়ে বাসা ছাড়ার নোটিশ দিতে পারবে এর বেশি কিছু নয়। মিথ্যা সন্দেহমূলক অভিযোগ করে কাউকে হয়রানি করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকতে হবে। ম্যাসের ক্ষেত্রেও একই ভাবে বাড়িওয়ালা এবং ম্যাস মালিকের মধ্যে ভাড়ার চুক্তি থাকতে হবে। ম্যাসে ক'জন সদস্য থাকে, কেনো থাকে, কতো দিন বা মাস বা বছরের জন্য থাকে তা ম্যাস মালিক নির্দিষ্ট ফর্ম পুরনের মাধ্যমে সদস্যের বৈধ ডকুমেন্টসহ থানার নির্দিষ্ট ডেস্কে জমা দেবে। থানা থেকে ম্যাস মালিককে জমাদেয়ার রশিদ প্রদান করবে।

বাসা সংক্রান্ত মামলা/অভিযোগ দ্রুতো নিস্পত্তির জন্য প্রয়োজনে আলাদা আদালত গঠন করতে হবে। জঙ্গি ধরার ধোয়ায় দেশের নাগরিকদের সাথে যা করা হচ্ছে তা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না, হওয়া উচিৎ না।

লেখক: ইতালি প্রবাসী

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ