শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


আল আযহার থেকে দুর্লভ বিষয়ে পিএইচডি; উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় এক বাংলাদেশি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ লুৎফেরাব্বি
আল আযহার থেকে

মিসরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদ থেকে উলুমুল হাদিস বিভাগের অধীনে কৃতিত্বের সাথে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন বাংলাদেশী গবেষক ড. মুহাম্মাদ নুরুল আবছার। তার গবেষণার বিষয় ছিল- ইমাম ইবনে আবী হাতিম আল-রাযী রা. (ইন্তিকাল ৩২৭ হিঃ)।

রচিত ‘ইলালুল হাদীস’ গ্রন্থের মতানৈক্যপূর্ণ সূত্রের হাদীসসমুহের মধ্যে ইমাম আবু হাতিম আল-রাযী রা. (ইন্তিকাল ২৭৭ হিঃ) এবং ইমাম আবু যুরআ আল-রাযী র. (ইন্তিকাল ২৬৪ হি.) কর্তৃক অগ্রাধিকার প্রধান কিংবা সামঞ্জস্য বিধানের সুক্ষ কারণগুলোর উদঘাটন এবং সেগুলোর তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক গবেষণা।

গত ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ইং ধর্মতত্ত্ব বিভাগের ড. আবদুল হালিম মাহমুদ কনফারেন্স হলে মিসরের স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে নিয়ে বিকেল ৫-৩০ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী ডিসকাশন চলে। চার খণ্ডে ২০০০ পৃষ্ঠার বিশাল গবেষণাপত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর পর্যালোচনার পর ২ জন সুপারভাইজার এবং ২ জন বিচারকের সর্বসম্মতিক্রমে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ অভিসন্দর্ভের জন্য তাকে আল আযহারের ধর্মতত্ত্ব বিভাগ থেকে হাদীস শাস্ত্রে ফার্স্টক্লাস এক্সিলেন্ট গ্রেডে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয় এবং এর পাশাপাশি গবেষণাকর্মটির সাফল্য ও গুরুত্ব বিবেচনা করে এটির প্রকাশ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কপি প্রেরণের অনুরোধ করা হয়।

(awarded his phd. with excellence and recommendation of priting the thesis to exchange between universities).

ড. মুহাম্মাদ নুরুল আবছার একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে এমফিল ডিগ্রী লাভ করেন। এর পূর্বে তিনি ধর্মতত্ত্ব অনুষদ থেকে উলুমুল হাদিস বিভাগের অধীনে বি.এ অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।

উল্লেখ্য, তার গবেষণাটি ছিল হাদীস শাস্ত্রের সবচেয়ে জটিল বিষয় ‘ইলালুল হাদীস’ বিষয়ে। হাদীস শাস্ত্রে এ কথা প্রসিদ্ধ, দুনিয়ায় মুহাদ্দিসের অভাব কোন দিন ছিল না। কিন্তু ‘ইলাল’ বিষয়ে অভিজ্ঞ মুহাদ্দিস হাদিস শাস্ত্রের স্বর্ণযুগেও খুবই অপ্রতুল ছিল।

যদি এমনটাই হয় তাহলে বর্তমানে ইসলামি জ্ঞানের এই খরার যুগে তা কোথায় গিয়ে ঠেকছে তা বলাই বাহুল্য। এই কথাটির পুনরাবৃত্তি করে থিসিসের মূল সুপারভাইজার হাদীস শাস্ত্রের বিখ্যাত মণীষী প্রফেসর ড. আহমাদ মা’বাদ আব্দুল করিম বলেন, ‘এ অনন্য গবেষণাকর্মের তাৎপর্য হলো, আপনি এমন একটি জটিল বিষয়ের গবেষণায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন যে বিষয়ে লেখার মতো কিংবা বোঝার মতো পাণ্ডিত্য হাদিস শাস্ত্রের স্বর্ণ যুগেও বিরল ছিল।’

থিসিসের ২ জন বিচারক প্রফেসর ড. সুবহি আবদুল ফাত্তাহ এবং প্রফেসর ড. রিদা জাকারিয়া দু’জনেই এক বাক্যে স্বীকার করেন, এ বিষয়ে এই গবেষণাটিই তাদের দেখা সেরা গবেষণা এবং ডিসকাশন ছাড়া যদি কোন অভিসন্দর্ভের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়ার বিধান থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই এই অভিসন্দর্ভটি সেগুলোর অন্যতম একটি হতো।

ড. রিদা তার ডিসকাশনের শুরুতে থিসিসটির বিভিন্ন ইতিবাচক দিক এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন এবং গবেষকের দক্ষতা ও ইলমি গভীরতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ডিসকাশনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি গবেষককে ‘আল্লামা’ বলে সম্বোধন করেন।

কোন বিদেশি ছাত্রের গবেষণা কর্মের উপর বিচারক প্যানেলের এতোটা সন্তুষ্টি ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার ঘটনা খুবই বিরল। আরব বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোন থিসিসের প্রকাশের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রিকমান্ডেশন প্রদান করাকে সর্বোচ্চ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়।

আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ৫/৬ বছরে হাদিস বিভাগের অধীনে কোন গবেষণার ক্ষেত্রে এ-ধরনের রিকমান্ডেশন আর করা হয়নি বলে জানা গেছে।

ড. নুরুল আবছারের এই গবেষণাকর্মটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, তিনি প্রফেসর ড. আহমাদ মা’বাদ আবদুল কারীমের অধীনে তার গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেন।

প্রফেসর ড. আহমাদ মা’বাদকে ইলমে হাদিসের, বিশেষত ইলালুল হাদিসের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ আলিম হিসেবে গণ্য করা হয়। তার মতো একজন মানুষের সান্নিধ্য, সর্বোপরি গবেষকের সুদীর্ঘ পাঁচ বছরের অক্লান্ত শ্রমের ফলে এমন একটি সফল অভিসন্দর্ভ পেশ করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ড. মুহাম্মাদ নুরুল আবছারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মুহাম্মাদ নুরুল আবছারের বাবার নাম মুহাম্মদ জামাল। গ্রাম মধ্য মাদার্শা। মাহছুমা পাড়া। থানা হাটহাজারি। জেলা চট্টগ্রাম।

তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন চট্টগ্রামের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্টান, মোজাদ্দিদে মিল্লাত মুফতী ফয়জুল্লাহ রহ. প্রতিষ্ঠিত মেখল হামিউস সুন্নাহ মাদরাসা থেকে। এরপর এশিয়ার ২য় বৃহত্তম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস শেষ করেন।

বাংলাদেশের বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমাদ শফীর কাছে বুখারি শরিফ পাঠ করার পাশাপাশি হজরতের কাছ থেকে হাদিস এবং তাসাউফের ইজাযাত লাভ করেন।

এরপর উচ্চ শিক্ষা লাভ করার জন্য ভারতের দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় গমন করেন। সেখানে ২ বৎসর আরবী সাহিত্যর উপর পড়াশোনা করার পর পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি বিদ্যাপীঠ মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে গমণ করেন।

সেখানে দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি উলুমুল হাদীসের উপর অনার্স, মাস্টার্স এবং এমফিল সমাপ্ত করার পর সর্বশেষ সম্প্রতি ১৮/১/২০১৮ ইং বৃহস্পতিবার পিএইচডি সমাপ্ত করার মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ সম্মান ও রেজাল্টের সাথে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

কারাবন্দী মেয়ের প্রতি আল্লামা কারজাভির হৃদয়স্পর্ষী চিঠি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ