শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


হোসেন মাহমুদের উপন্যাস : সমর্পণ-২

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দুই.
মক্কার সেই অদ্ভুত মানুষটির কথা ওয়াদিউল কুরাতেও পৌঁছেছে। এটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ইহুদি পল্লি। মক্কা থেকে সিরিয়াগামী পথটি এ পল্লির প্রায় গা ছুঁয়ে গেছে। অনেক প্রাচীন এই পথ। উটের কাফেলা নিয়ে যাওয়া-আসার পথে মক্কার বণিকরা এক রাত এখানে জিরিয়ে নেয়। বনি মোস্তালিকের কুয়ার কাছাকাছি তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটায়। এখান থেকে মক্কা মাত্র দুদিনের পথ। বাণিজ্যের জন্য প্রায়ই আসা-যাওয়া করতে হয়। তাই ওয়াদিউল কুরার লোকজনের সাথে মক্কার বণিকদের ভালো স¤ণ্ঠর্ক গড়ে উঠেছে। এই বণিকদের কাছেই ওয়াদিউল কুরাবাসীরা শুনেছে মক্কার সেই মানুষটির কথা। তার নাম মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ। কুরাইশ বংশের বনি হাশিম গোত্রের সন্তান। তার দাদা আবদুল মুত্তালিব ছিলেন খুব বিখ্যাত মানুষ, কাবা ঘরের সেবক ও রক্ষণাবেক্ষণকারী। তার জন্মের আগেই বাবা আবদুল্লাহ মারা যান।

শিশু বয়সে তাকে রেখে তার মা-ও মারা যান। তারপর তার চাচা তাকে সন্তান হিসেবে লালন-পালন করেন। ভদ্র, বিনয়ী, সচ্চরিত্র, অত্যন্ত বিশ^াসী বলে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। মক্কার লোকেরা তার কাছে মূল্যবান জিনিস আমানত রাখত। তার সবই ভালো ছিল। কিন্তু চল্লিশ বছর বয়সের পর তার মাথা বিগড়াতে শুরু করে। সে এখন নিজেকে আল্লাহর নবী বলে দাবি করছে। আর নানা রকম কথা বলছে। সে বলছে, মূর্তিপূজা হারাম। বিশ^-জগত ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। সেই আল্লার ইবাদত-বন্দেগি করতে হবে। আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা যাবে না। তার এসব কথায় প্রথম দিকে কেউ কান না দিলেও এখন বহু নারী-পুরুষ তার অনুসারী হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার অনুসারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

হরদিয়ার বাবা শামাউন ওয়াদিউল কুরার ইহুদি গোত্রের প্রধান। বাবার কাছেই প্রথম সে জানতে পারে সেই মানুষটির কথা। সে যা প্রচার করছে সেটা নাকি ইসলাম ধর্ম। যে ইসলাম গ্রহণ করে তাকে ঈমান আনতে হয় এ বলে যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। এ পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে সু¯ণ্ঠষ্ট যে, এ ব্যক্তি ইহুদিদের জন্য বিপজ্জনক।

Image result for arabian women art

খ্রিস্টানদের সাথে ইহুদিদের রয়েছে জাত শত্রুতা। খ্রিস্টানরা যেমন ইহুদিদের সহ্য করতে পারে না, তেমনি ইহুদিরাও তাদের দুচোখে দেখতে পারে না। এমনিতেই ইহুদি ধর্ম গতি হারিয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে। নতুন কেউ এ ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে না। এর মধ্যে আবার ইসলাম নামের এ নতুন ধর্মের প্রচারক যে ইহুদি ধর্মের জন্য এক বড় ধরনের বিপদ বয়ে আনছে, তাতে কারোরই কোনো সন্দেহ নেই।

পল্লির গণ্যমান্য লোকদের নিয়ে ইতোমধ্যেই শামাউনের বাড়িতে কয়েকবার সভা হয়ে গেছে। সর্বশেষ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এই মুহাম্মাদ স¤ণ্ঠর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নেয়া হবে। যদি তার ধর্ম সত্যই ইহুদি ধর্মের বিরোধী হয়ে থাকে, যেমনটি শোনা যাচ্ছে, তাহলে যেকোনো মূল্যে তাকে হত্যা করতে হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে তিনজনের একটি পর্যবেক্ষক দলকে মক্কায় পাঠানো হয়েছে ভালো করে খোঁজ নেয়ার জন্য। তারা ফিরে এসে কি বলে তা শোনার পর তদনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ