শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

খতিব তাজুল ইসলাম
লেখক ও গবেষক

বিগত আড়াইশত বছর থেকে চলেআাসা ঐতিহাসকি একটি ধারাকে মুল ধারার সাথে যুক্তকরে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন ও স্বীকৃতি প্রদানকে আমরা শত বছরের সেরা একটি সিদ্ধান্ত হিসাবেই দেখছি। গোটা পুথিবীব্যাপী ইসলামী শিক্ষা ও আক্বীদার সুস্থধারার প্রবর্তক দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসরনে পরিচালিত কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার স্বীকৃতি শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা বিশ্বব্যাপী এর সুফল ছড়িয়ে পড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।

পাকিস্তান ভারতসহ অন্যান্য দেশে পরিচালিত কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারি স্বীকৃতি লাভের একটা উদাহরণ হতে পারে এই সিদ্ধান্ত। বর্তমান সরকার বিশেষ করে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী মহুদয়ার কঠিন দিকনির্দেশনা ও আল্লামা আহমদ শফি দামাত বারাকাতুহুমের সঠিক রাহবরি এবং কওমি উলামা সরেতাজগণের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফসল হলো এই অনুমোদন।

আমরা আশাকরবো আগামি সংসদেও বিলটি নিরাপদে পাশহয়ে পুর্ণ আইনে রূপান্তরীত হবে। দেশ ও জাতির খেদমতে কওমি মাদরাসা অসামান্য খেদমাত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সুস্থ ও সঠিক শিক্ষা বিস্তারে কওমি শিক্ষা যে অবদান রাখছে তা অপরিসীম।

খোদ সরকার যেখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রজেক্ট নিয়ে নানা দুশ্চিন্তা সহ টানা পোড়নে আছে সেখানে বেসরকারি ভাবে কওমি উলামাদের এই পরিশ্রম অসাধারণই বলতে হবে। দেরীতে হলেও এই স্বীকৃতি তাদের প্রাপ্য ছিলো যা দেয়া হয়েছে।

এখানে রাজনীতিকে টেনে না এনে পক্ষ প্রতিপক্ষ তৈরি না করে হাইয়াতুল উলিয়াকে কিভাবে আরো উন্নত করা যায় সেদিকে এখন আমাদের নজর দেয়া প্রয়োজন। নীচ কাঁচা হলে উপরের মাস্টার্সের কোন মুল্য থাকবেনা বা সেখানে গিয়ে তারা ভাল পারফরমেন্স দেখাতে পারবেনা।

অতএব ইসলামের স্বার্থে উম্মাহর কল্যাণের জন্য বাংলাদেশের ভবিষ্যত উজ্জল করার নিমিত্তে সঠিক ইসলামী শিক্ষা সমাজে বিস্তার ঘটানোর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিভাগকে আমাদের ঢেলে সাজানোর দরকার।

সরকার আমাদের যে সুযোগ এনে দিয়েছে এই সুযোগের সত ব্যবহার প্রয়োজন। যোগ্য মেধাবী বিচক্ষণ চৌকস আলেম মুফতি মুহাদ্দিস মুফাস্সির ওয়াইজ ও ইমাম খতীব আমাদের প্রয়োজন।

আশা করা যায় যারা যোগ্যতার স¦াক্ষার রাখতে সক্ষম হবে তারাই কেবল হাইয়াতুল উলিয়ায় যোগদান করে ইসলামী শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পৌছে সফল ভাবে বেরিয়ে আসবে।

দেশের সরকারি ও বেসরকারি যেসব পদে হাইয়াতুল উলিয়ায় উত্তীর্ণকারীগণ আবেদন করতে পারবেন তার সম্ভাব্য তালিকা হলো:

১) সরকারি মসজিদের ইমাম ও খতীব। ২) সরকারি মাদরাসার আরবি প্রভাষক ও মুহাদ্দিস।

৩) সরকারি-বেসরকারি বিশ্ব বিদ্যালয়ে আরবি ভাষা বিভাগের সহকারী শিক্ষক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান।

৪) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী শিক্ষক অধ্যাপক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান। ৫) ধর্মমন্ত্রণালয়ের সচিব।

৬) আরব দেশসমূহের দুতাবাসে ডেলিগেশন লিয়াঁজো অফিসার। ৭) বিভিন্ন বাহিনীতে ধর্মীয় শিক্ষক ও ইমাম।

৮) স্কুল-কলেজে ধর্মশিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক হিসাবে। ৯) ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অনুবাদক, মুহাদ্দিস ও মুফাস্সির পদে।

এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কোম্পানি ও আরব দেশীয় এনজিও গুলোতে কাজ করার সুযোগ হবে কওমি শিক্ষার্থীদের।

উপরোল্লিখিত বিভাগে আলেম উলাদের সুযোগ তৈরি হওয়ায় দেশে ব্যাপক ভাবে আদর্শিক চিন্তা চেতনার বিপ্লব ঘটবে বলে আমি দৃড়ভাবে বিশ্বাসী। এখানে থেমে না গিয়ে সরকারকে আরো সদিচ্ছা দেখানোর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।

কোন প্রকার শর্ত ও শরায়িত না লাগিয়ে স্বচ্ছতার আলোকে কওমি প্রতিষ্ঠান গুলোর কারিগরি ও বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজে সরকারি অনুদানের দরকার আছে। যাতে করে প্রতিষ্ঠান গুলো আরো ভাল খেদমাত আঞ্জাম দিতে সক্ষম হয়।

আমাদের কওমি হজরাতদের বলবো যে স্বীকৃতি যেমন আমাদের জন্য সম্ভাবনার দোয়ার খুলে দিয়েছে তেমনি দায়িত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বিভাগকে দয়া করে রাজনীতি মুক্ত রাখবেন। আমরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হতে পারি কিন্তু শিক্ষাংগনে যেন এর ছায়া না ঢালি। যে বা যারা যোগ্য তার হাতেই হউক বোর্ডের কান্ডারি।

দাওরায়ে হাদীসের ক্লাস যাতে মান সম্মত হয় সে দিকে নজর রাখা দরকার। অলিতে গলিতে দাওরার ক্লাস খুলে প্রকৃত মান বজায় রাখা যাবেনা। যে সমস্ত মাদরাসায় এই সুযোগ আছে যাদের সামর্থ আছে, যেখানে ভাল ও উঁচু মানের মুহাদ্দিস বিরাজমান সেখানে দাওরায়ে হাদীসের ক্লাস নেয়া হোক এটাই আমাদের কামনা। বহু প্রতীক্ষার পর যে সম্মান অর্জিত হয়েছে সেই সম্মান যে কোন মুল্যে আমরা চাই তা রক্ষা হোক।

মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী মহুদয় গণের প্রতি আবারও অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

আরএম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ