শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


পূণ্যময় আরাফার দিন; মুমিনের করণীয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাফেজ মাওলানা ইউসুফ নূর
কাতার থেকে

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠদিন আরাফার দিন আর শ্রেষ্ঠরাত লাইলাতুল কদর। রমজানের শেষ দশকের রাজমুকুট হল কদর রজনী। আর জিলহজের প্রথম দশকের গৌরব হচ্ছে আরাফাতের দিন।

মানবজাতি ও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে ঘটনাবহুল আরাফাতের দিনের ফজিলত, বৈশিষ্ট্য ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে এ নিবন্ধের অবতারণা। করুণাময়ের তাওফীক একান্ত কাম্য।

আরাফাতের দিনের বৈশিষ্ট ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলী

মহা অঙ্গীকারের দিন
এ দিনে এ আরাফাতের প্রান্তরেই আল্লাহ সকল মানব সন্তান থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন। ইবনু আব্বাস রা. বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা আরাফাতের দিনে আদম আ. এর ঔরসে যত সন্তান-সন্ততি জন্ম নেয়ার কথা ছিল তাদের সবাইকে আরাফাতের না’মান উপত্যকায় একত্রিত করেন। তখন তারা সবাই ছিল পিঁপড়ের মত ক্ষুদ্রাকৃতির।

তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি কী তোমাদের প্রতিপালক নই? সবাই উত্তরে বলেছিল হ্যাঁ! আমরা সকলে এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি।’ সূরা আল আরাফ -১৭২ বর্ণনায়: আহমদ- ১ম খন্ড:২৭২

সত্যিই সৃষ্টিকর্তার সমীপে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দিনে মানব জাতির এটাই সেরা অঙ্গীকার। আসুন, আজ এ মহান দিনে সে অঙ্গীকার নবায়ন করি।

মহা ঘোষণার দিন
আরাফাতের দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য পরম গর্বের দিন। এদিন আল্লাহ ইসলামকে একমাত্র ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ঘোষণা করেন। এটি মুসলিম জাতির একক গৌরব।

হযরত উমর রা. বর্ণনা করেন, জনৈক ইহুদি তাঁকে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর অবতীর্ণ হত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করতাম।

উমর রা. জিজ্ঞেস করলেন সে আয়াতটি কী? সে বলল, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) মনোনীত করলাম।’  সূরা মায়েদা-৩

হযরত উমর বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে রাসুলুল্লাহ সা. এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল, তা আমরা জানি। তিনি সে দিন আরাফায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আর সেটা ছিল জুমার দিন। বুখারি: ৪৫

আসুন, এ স্মরণীয় দিনে সমাজের সর্বস্তরে ইসলাম কায়েমের শপথ গ্রহণ করি।

মহান দিন
আরাফার দিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, মহান আল্লাহ এই দিনের শপথের মাধ্যমে তাকে মহিমান্বিত করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘প্রতিশ্রুত দিবসের শপথ এবং দ্রষ্টা ও উপস্থিতির দিনের শপথ।’ সূরা আল বুরুজ: ২,৩

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘প্রতিশ্রুত দিবস’ অর্থ কিয়ামতের দিন; ‘উপস্থিতির দিন’ অর্থ আরাফাতে (উপস্থিত হওয়ার) দিন এবং ‘দ্রষ্টা’ অর্থ জুমার দিন। তিরমিযী- ৩২৭৬

আসুন, এ মর্যাদাবান দিনের তাৎপর্য অনুধাবনের চেষ্টা করি।

মহা পূণ্যের দিন
আবু কাতাদাহ রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. কে আরাফাতের দিনের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দিলেন, এতে বিগত বছরের ও আগামীর গুনাহর কাফ্ফারা হয়ে যায়। তিরমিযী-১২৫০

আসুন, এ রোযা নিজেও রাখি এবং পরিবারের সদস্যদেরও এ জন্য উদ্বুদ্ধ করি।

মহা মুক্তির দিন
আরাফাতের দিন হল মুমিনের জন্য মহা মুক্তির দিন। হযরত আয়েশা বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, আরাফাতের দিনে আল্লাহ এত বিপুল সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা আর কোন দিন দেন না।

তিনি এ দিন দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং আরাফাতে অবস্থানরত (হাজীদের) নিয়ে ফিরিশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, এরা কী চায়? মুসলিম-১৩৪৮

ইবনে ওমর বর্ণিত অপর হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, আরাফাতের দিন বিকেলে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং তোমাদের নিয়ে ফিরিশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, দেখো! আমার বান্দারা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জান্নাতের আশায় আমার কাছে ছুটে এসেছে।

তোমাদের গুনাহ যদি (মরভুমির) বালুকণা কিংবা বৃষ্টির ফোটা অথবা সমুদ্রের ফেনা সমানও হয় তাও আমি মাফ করে দিলাম। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যাও। তোমাদের এবং তোমরা যাদের জন্য সুপারিশ করেছ তাদেরও ক্ষমা করে দেওয়া হল। সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব- ১১০৬, ১১১২

আসুন, মার্জনার এ দিনে আল্লাহর কাছে অধিক হারে তাওবা ও ইস্তিগফার করি।

ব্যবসার হিসাব নিকাশ এখন হাতের মুঠোয়ক্লিক

মহা প্রার্থনার দিন
আরাফাতের দিনের সকল দোয়া কবুল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, শ্রেষ্ট দোয়া হচ্ছে আরাফাতের দোয়া। এ দিন আমিও আমার পূর্বেকার নবীদের বলা সর্বোত্তম বাক্য হচ্ছে لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কদির।’

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই। সার্বভৌমত্ব ও সমস্ত প্রশংসা তারই। তিনি সর্বশক্তিমান। তিরমিযী-৩৫৮৫

আসুন, দোয়া কবুল হওয়ার হওয়ার সর্বাধিক আশাপ্রদ এই দিনকে আল্লাহ প্রদত্ত সুবর্ণ সুযোগ মনে করে তা থেকে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করি।

লেখক: ইমাম-খতিব ও মুবাল্লিগ, ধর্মমন্ত্রণালয়, কাতার।

ঈদের সুন্নাতসমূহ ও জরুরি মাসআলা-মাসাইল

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ