শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


চারদিকে হত্যার উৎসব; মুক্তি কিভাবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবূ সাঈদ মুহাম্মদ সায়েম
আলেম ও লেখক

মানুষ জগতে বিদ্যমান সকল সৃষ্টি থেকে পৃথক, স্রষ্টার এক বিশেষ সৃষ্টি। সৃষ্টিজগতের বিপরীতে মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে, দেয়া হয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব সম্মান ও মর্যাদা। এই শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা মানুষ লাভ করেছে শুধু মানুষ হওয়ার কারণেই।

এখানে সাদাকালো, আরব অনারব, পূর্বপশ্চিম, উঁচু নীচু কিংবা ভিন্ন কোনো বৈশিষ্টের ভূমিকা নেই। না থাকার কারণও যৌক্তিক, সকল মানবীয়প্রাণের সৃষ্টির সূচনায় যে রয়েছেন একই ব্যক্তি।

যার দেহের রক্ত মাংস থেকে নিয়ে অন্যান্য সকল উপাদান তার থেকে সম্প্রসারিত প্রজন্মের মাঝেও সমানভাবেই বিদ্যমান।

মানুষের বিস্তার একই ব্যক্তি হওয়ার বিষয়টি যেমনি সত্য, তেমনি সকল মানুষের রক্ত ও তার বর্ণে ভিন্নতা না থাকার বিষয়টিও দীপ্যমান সূর্যের ন্যায় সুষ্পষ্ট। মানুষ সৃষ্টিকুলের মাঝে সবচে মর্যাদাবান, তাই মর্যাদা রয়েছে তার ধমনীতে বহমান রক্তেরও।

অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, কারো রক্ত ঝরানোসহ মানবীয় মূল্যবোধে আঘাত লাগে এমন কথা কাজ ও আচরণের প্রকাশ কোনোভাবেই কারো থেকে বৈধ ও কাম্য নয়।

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মর্যাদা অটুট রাখার জোর তাগিদ দিয়েছেন।

একবার তিনি তওয়ারত অবস্থায় কাবাঘরকে সম্বোধন করে বলেছেন, তুমি কতো না পবিত্র, কী চমৎকার তোমার পরিবেশ, তোমার সম্মান ও মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত সুমহান উচ্চতায়। কিন্তু ওই সত্তার শপথ! যার আয়ত্তে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রাণ, আল্লাহর নিকট একজন মুসলমানের জান মাল ও রক্তের মর্যাদা তোমার থেকেও অধিক।

এজন্যেই মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাপকভাবে মানবিক অধিকারগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। একত্ববাদের পর তার আলোচনায় সবচে বেশি উঠে এসেছে মানবতা সংরক্ষণের কথা।

হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি আমার হক ক্ষমা করে দিলেও বান্দার লঙ্ঘিত হক ক্ষমা করব না, যতক্ষণ না বান্দা ক্ষমা করে।

মানবীয় অধিকারের মাঝে প্রাণের নিরাপত্তার অবস্থান সবার উঁচুতে। মানুষ হত্যার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা, ইহকাল ও পরকালে এর ভয়ানক শাস্তি ও পরিণতি বর্ণনা করে একমাত্র ইসলামই সেই অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করেছে।

ইসলামই অন্যায়ভাবে নরহত্যাকে ঘোষণা করেছে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার নামান্তর।

পৃথিবীর অন্যান্য জীবনব্যবস্থার মতো ইসলামের এই বিধান কোনো চটকদার কথামাত্র নয়। প্রাণের নিরাপত্তার এই ঘোষণা প্রচার করেই আল্লাহর নবী দায় সারেননি, তা করে দেখিয়েছেন নিজের জীবনেও।

তিনি কখনো কাউকে কষ্ট দেননি; অন্যায়ভাবে কারো গায়ে হাত তুলেননি; অকারণে হত্যা করেননি, নির্দেশ দেননি হত্যারও। লড়াইয়ে প্রেরণকালে সাবাদের প্রতি তার নির্দেশনা থাকত এরূপ, বিরোধীপক্ষ হাতিয়ার রেখে দিয়ে তোমাদের আনুগত্য মেনে নিলে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না; লড়াই এড়িয়ে সন্ধিই হবে তোমাদের প্রথম প্রচেষ্টা; নারী শিশু বৃদ্ধদের অকারণে হত্যা করতে পারবে না।

দয়ার নবী মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে প্রদত্ত বিদায় হজের ভাষণেও মানুষের প্রাণের সুরক্ষার বিষয়টি স্বরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের রক্ত সম্পদ ও সম্মান এই দিন, এই শহর ও এই মাসের মতোই পবিত্র।

কিন্তু বর্তমানে পত্রিকার পাতায় নজর বুলালে মনে হবে চারদিকে যেন হত্যার উৎসব লেগে গেছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারণে একজন হত্যা করছে অপরজনকে। কেউ কারো কাছে নিরাপদ নয়।

মাবাবা সন্তানের কাছে, সন্তান মাবাবার কাছে হয়ে গছে অনিরাপদ। আমরা যেন আজ অবস্থান করছি জাহেলী যুগে। চারিদিকে একই বর্বরতা আর হিংস্রতা।

চৌদ্দশত বছর পূর্বের সেই হিংস্রতা যেমন একদা মমতায় রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল ইসলামের শিক্ষায়, তেমনি আজও ইসলামই পারে দূর করতে আমাদের মানুষ হত্যার এই বণ্যপ্রবনতা। প্রয়োজন শুধু ইসলামি আদর্শ ধারণ।

রকমারিতে বিজ্ঞানবক্স অর্ডার করলেই থাকবে নানা উপহার


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ