শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘স্ত্রী হারিয়েছে, তবু আমি হত্যাকারীকে ঘৃণা করি না’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্টকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন ওই ঘটনায় নিহত হোসনে আরা আহমেদের (৪৪) স্বামী ফরিদ আহমেদ। বিবিসি ও নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছে। কিন্তু আমি হত্যাকারীকে ঘৃণা করি না। ব্যক্তি হিসেবে আমি তাকে (হামলাকারী) ভালোবাসি। কিন্তু আমি দুঃখিত, তিনি যা করেছেন, তা আমি সমর্থন করতে পারছি না। আমার মনে হয়, জীবনের কোনো একসময়ে তিনি হয়তো আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু তিনি সেই আঘাতকে ইতিবাচক উপায়ে প্রকাশ করতে পারেননি। এ কারণে তিনি ভুল কাজ করেছেন। তার (হত্যাকারী) জন্য প্রার্থনা করি, আল্লাহ তাকে সঠিক পথ দেখাবেন।’

ফরিদ আহমেদ আরও বলেন, ‘যারা সন্ত্রাসী হামলা চালায়, তারা চায় লোকজন ভয় পাক। তারা এক গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর উত্তেজনা তৈরি করতে চায়। হয়তো তারা ভাবে, যদি তারা মুসলমানদের আঘাত করে, তাহলে মুসলমানেরা নিশ্চয়ই প্রতিশোধ নেবে। কিন্তু আমরা মুসলিম নেতারা বলছি, এমনটা হবে না। এই সব হামলার কারণে আমরা কাউকে ভীত হতে বা অন্যদের ঘৃণা করতে দেব না।’

তিনি বলেন, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে হামলার এই উদ্দেশ্য সফল হবে না। মুসলিম নেতারা এসব হামলার কারণে কাউকে ভয় পেতে বা ঘৃণা করতে দেবেন না।

ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তার জন্য প্রার্থনা করি যে, আল্লাহ তাকে সঠিক পথ দেখাবেন, একদিন তিনি ত্রাণকর্তা হবেন।’

ফরিদ আহমেদ বলেন, সে এক ভয়াবহ দৃশ্য ছিল। চারপাশে রক্ত। আহত লোকজন পড়ে আছে। লাশ পড়ে রয়েছে। লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক। একজন অন্যজনকে ধাক্কা দিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করছেন। তিনি ভাবছিলেন, তিনি কীভাবে বের হবেন।

ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘মানসিকভাবে আমি প্রস্তুত ছিলাম। নিজেকে বলছিলাম, শান্ত হও। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, যা ঘটার ঘটবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ধীরে বেরিয়ে আসছিলাম। প্রতিমুহূর্তে মনে হচ্ছিল মাথায় বা পিঠে গুলি এসে লাগবে। আমি ধীরে বেরিয়ে এলাম। মসজিদের বাইরে আমার গাড়ি পার্ক করা ছিল। আমি গাড়ির পেছনে গিয়ে থামলাম এবং সেখানেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’

ফরিদ বলেন, ‘বন্দুকধারীকে আমি দেখিনি। আমি শুধু গুলির শব্দ পাচ্ছিলাম। একবার কয়েক সেকেন্ডের জন্য গুলিবর্ষণ থেমেছিল। তারপর আবার শুরু হয়। আমি বুঝলাম, বন্দুকধারী ম্যাগাজিন পরিবর্তন করছেন। এমন করে সাতবার বন্দুকধারী ম্যাগাজিন পরিবর্তন করেছেন। তিনি গুলি করেই যাচ্ছিলেন। আর লোকজন ছুটছিলেন।’

ফরিদ বলেন, একজন ইথিওপিয়ান লোক তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে বললেন, তিনি নিশ্বাস নিতে পারছেন না। আরেকজন এমনভাবে শ্বাস টানছিলেন যে বোঝা যাচ্ছিল, তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘দুজনকে জীবিত পেলাম। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশি। তাকে আগে থেকে চিনতাম। সেদিন সন্ধ্যায় দুই শিশুসন্তান ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে দেশে যাওয়ার কথা ছিল।’

স্ত্রীকে নিয়ে অনেক গর্ব ফরিদের। তার স্ত্রী কমিউনিটিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেন। মসজিদে শিশুদের পড়াতেন। স্ত্রী অন্যদের বাঁচাতে নিজের জীবন দিয়েছেন এবং এটাই ছিল তার শেষ কাজ। ফরিদ বলেন, ‘তাকে নিয়ে আমি গর্ব করি। লাখ লাখ মানুষের হৃদয় জয় করেছেন তিনি। আমি মেয়েকে বলেছি, এই স্মৃতি নিয়েই আমাদের বাঁচা উচিত। তার জন্য কান্নার চেয়ে সুখী হওয়া উচিত আমাদের।’

কেপি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ