বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলা: খ্রিস্টীয় মৌলবাদের উত্থান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোহাম্মদ ইমরান
শিক্ষার্থী ও লেখক

আধুনিক বাংলা অভিধান অনুসারে মৌলবাদ হল, গোঁড়াধর্ম। ইংরেজী অভিধান অনুসারে তার প্রতিশব্দ Fundamentalism (ফান্ড্যাম্যান্টালিজম), বাংলা প্রতিশব্দ মৌলবাদ।

এই শব্দ যেহেতু ইংরেজী শব্দের প্রতিশব্দ, তাই সহজে অনুমান করা যায়, এই শব্দের আবিস্কার বাংলাভাষাভাষী এলাকায় নয়, অন্যকোথাও।

প্রাচ্যবিদরা শব্দটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে রপ্তানি করেছে। তাই এ বিষয়ে ইতিহাস পর্যালোচনার প্রয়োজন।

এক. 

ঊনবিংশ শতাব্দিতে প্রায় একযুগ গীর্জার শাসন চলে, যে শাসনব্যবস্থায় ধর্মের নামে মানুষের ওপর মানবরচিত আইন চাপিয়ে দেওয়া হয়। মানবস্বভাবের উপযোগী না হওয়ার কারণে মানুষ তার নির্যাতন ও নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

এইসব কারণে ম্যাকয়াবেলী ও মারসিলি ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ স্লোগান নিয়ে আসেন। এবং মানুষ সেটা নির্যাতন থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ ধরে নেয়।

এদিকে গীর্জা থেকে উঠে আসা ধর্মের নামে একতরফা জুলুম নির্যাতনের দোষ ইসলামকেও কিছুটা নিতে হয়েছে।

তার একটি কারণ হলো, একদিকে জনগণের অতিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, সাধারণ মানুষ ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থাকে জুলুম অত্যাচারের মূলকারণ মনে করত।

অন্যদিকে সেকুল্যারিজম বা নিরেপেক্ষতাবাদ নীতিগত দিক থেকে ইসলামের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল । তাই কূটনৈতিকভাবে কিংবা হুজুগে ইসলামকেও নিতে হয়েছিল মৌলবাদের অপবাদ।

প্রকৃতপ্রস্তাবে পৃথিবীতে ধর্মভিত্তিক হুকুমত ও শাসনব্যবস্থার ডাক একমাত্র ইসলামের পক্ষ থেকেই এসেছিল। কারণ, ইসলাম একটি পূরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এর বাস্তবরূপ রাষ্ট্রীয়ভাবে আমলে না নিলে বুঝা যায় না। অন্যথায় ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মতোই একটি সীমাবদ্ধ ধর্ম।

এ কারণে যখন বিশ্বের আনাচে কানাচে ইসলামি খেলাফত ব্যবস্থার রব উঠেছিল তখন সেকুল্যাররা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ইসলামকে মৌলবাদি ও চরমপন্থী বলে বিশ্বমিডিয়ায় পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছিল। এতে মানুষ পূর্বের ধারণামতো ইসলামকেও জুলুম নির্যাতনের ধর্ম হিসেবে ধারণা শুরু করছিল।

ঊনবিংশ শতাব্দিতে ইউরোপে নতুন নতুন আবিস্কার শুরু হলে ইউরোপিয়ান বিজ্ঞান এবং খৃষ্টধর্মের একটা সংঘাত দেখা দেয়। কারণ, বিজ্ঞানীরা নতুন আবিস্কারকে সমর্থন করেন, ধর্মজাযকরা তা করে না।

কারণ, বিজ্ঞানের যুক্তিসংগত থিউরির কারণে বিকৃত বাইবেলের অসত্যতা ক্রমেই বাড়ছিল এবং গীর্জা ও ধর্মজাযকদের গোমরফাঁক হচ্ছিল।

তখন ধর্মজাযকগণ বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধাচরণ করে অনেক বিজ্ঞানীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় বিজ্ঞানীরা ধর্মজাযকদেরকে ‘মৌলবাদী’ নামে আখ্যায়িত করে।

দুই.

সম্প্রীতি নিউজিল্যান্ডের এক খৃষ্ট শ্বেতাঙ্গের আক্রমণের অর্ধশতাধিক মুসলিম শহীদ হয়েছে। এটি মূলত খৃষ্টবাদের বিশ্বব্যাপী মুসলিমনিধনের একটি চিত্র।

যেমন করে মধ্যযুগে বিজ্ঞানের যৌক্তিক বিশ্লেষণে খৃষ্টবাদের অসারতা ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছিল তখনই বিজ্ঞানের সাথে খৃষ্টবাদের সংঘাত বাধে। তেমনি বর্তমানে ইসলামের সৌন্দর্যতায় যখন ক্রমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মানুষ খৃষ্ট ধর্মে ছেড়ে মুসলমান হচ্ছে তখনই পরিকল্পিত বিশাল গোষ্ঠীর একক বীভৎসতা প্রকাশ পায়।

কারণ তাবৎ দুনিয়ার মুসলিম অভিবাসী ও নাগরিকদের আচরণে মুগ্ধ হয়ে মানুষ দিন দিন ইসলামের দিকে ঝুঁকছে। এতে তাদের সেই পুরনো মধ্যযুগীয় আচরণ প্রকাশ পাচ্ছে। এ কারণে ডোনাল্ট ট্রাম্প অভিবাসীনীতিতে পরিবর্তন আনতে নানা কূটকৌশল অবলম্বন করে চলেছে।

যে ধর্মের জুলুম থেকে বাঁচার জন্য ম্যাকয়াবিলি ও মারসিলি ধর্মনিরপেক্ষতার উদ্ভাবন করল, এবার খোদ খৃষ্টানরাই তাদের উদ্ভাবিত মতবাদকে বুড়ো আঙ্গুল দেখালো।

আজ ম্যাকিয়াবলি ও মারসিলি বেঁচে থাকলে ধর্মের নামে জুলুম নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য হয়ত নতুন কোনো স্লোগান হাজির করে ফেলত।

হায় ম্যাকিয়াবলি! হায় মারসিলি!

লেখক, হাদিস বিভাগের শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর