শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


'বেফাকের অধীনে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু। বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) সহ-সভাপতি। জামেয়া হুসাইনিয়া গওহরপুর মাদরাসার মুহতামিম। কওমি মাদরাসা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সবসময় ভাবেন এবং চিন্তা করেন। তরুণ আলেমদের কর্মসংস্থান নিয়ে ভাবনা বিনিময় করেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলেছেন নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ। 


আওয়ার ইসলাম : তরুণ আলেমদের কর্মসংস্থান নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু : একসময় কওমি মাদরাসা ফারেগ নবীন আলেমদের কর্মসংস্থান বলতে সাধারণ মানুষ বুঝতো, তারা শুধু মাদরাসায় পড়াবে। না হয় মসজিদে ইমামতি করবে। এ দুটো ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোনো লাইনে যাওয়াকে অভিশাপ মনে করতো।

কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং এখন তাকমিল সমাপণীর পর অনেকেই ব্যবসা করছেন। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণে যোগদান করছেন। অনেকেই যোগ্যতাভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের চাকুরিতে যোগ দিচ্ছেন। অনেকে লেখালেখি করছেন।

প্রকাশনালয়ে কাজ বেছে নিচ্ছেন অনেকে। এর যথাযথ কারণও আছে। যেমন ধরুন, আগে একটা সময় ছিলো কওমি মাদরাসায় শুধু ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হতো। অন্য শিক্ষাকে অবৈধ মনে করা হতো।

কিন্তু বর্তমানে কওমি মাদরাসায় শুধু ধর্মীয় শিক্ষায় সীমাবদ্ধ নেই। বরং এখন সব ধরনের শিক্ষাই কওমি মাদরাসায় দেয়া হয়। কওমি মাদরাসার ছেলেরা এখন সব বিষয়ে পারদর্শী।

তথ্য-প্রযুক্তি, সাহিত্য-সাংবাদিকতা, কম্পিউটার জ্ঞানসহ সব বিষয়ে সমান পাণ্ডিত্য রয়েছে তাদের। অতএব এসব কিছুর বিবেচনায় একথা নির্বিঘ্নে বলা চলে, কওমি মাদরাসার ছাত্রদের কর্মসংস্থান দিন দিন বাড়ছে।

আওয়ার ইসলাম : তরুণ আলেমদের কর্মসংস্থান তৈরিতে মাদরাসা বোর্ডগুলোর কোনো ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করেন কি?

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু : অবশ্যই ভূমিকা রাখা উচিত। অন্যান্য বোর্ডের কথা আমি বলতে পারবো না। তবে বেফাক বোর্ডের অধীনে এ ব্যাপারে ফিকির করা হচ্ছে। বিভিন্ন কারিগরী প্রশিক্ষণ দেয়া ও ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ প্রশিক্ষণগুলো চালু হলে আরো ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

আওয়ার ইসলাম : মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগের বেলায় মেধাকে প্রাধান্য দেয়া জরুরি নাকি ব্যক্তি পরিচয়কে?

মুসলেহুদ্দীন রাজু : এক্ষেত্রে অবশ্যই মেধাকে প্রাধান্য দেয়া দরকার। যে পোস্টে যাকে নেয়া হচ্ছে সে পোস্টের জন্য তার মেধা আছে কি না- এটা যাচাই করে তাকে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। মেধার সাথে সাথে যদি পরিচিত হয় তাহলেতো আরো ভালো। অর্থাৎ মেধাটা এক নম্বর। তারপর মেধাবী পরিচিত কাউকে পাওয়া গেলে তিনি বেশি প্রাধান্য পাবেন।

আর কওমি মাদরাসায় পরিচিত কাউকে নেয়া হয় যে কারণে সেটা হলো যাতে খেয়ানাত না হয়। অর্থাৎ তার সম্পর্কে জানাশোনা থাকলে সেটা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্র উভয়ের জন্য উপকারী।

কেননা মেধা আছে অনেকেরই। কিন্তু আমানতদারীর বিষয়টা সবার মাঝে নেই। অর্থাৎ মেধাটা প্রথমে। তারপর পরিচিতির বিষয়টি বিবেচনায় আসতে পারে।

আওয়ার ইসলাম : কর্মসংস্থানের জন্য ফারেগীন ছাত্ররা কিভাবে প্রস্তুতি নিবে?

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু : এক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক কিংবা ষান্মাসিক কোর্সের আয়োজন করা যেতে পারে। যেখানে বিভিন্ন জায়গায় যোগদানের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যোগদান পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা। প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাজ শিখানো হবে। কাজের ক্ষেত্রগুলোর সন্ধান দেয়া হবে। আরো অনেক কিছুই থাকতে পারে সেসব প্রশিক্ষণে। প্রশিক্ষণের কথা বলছি; কারণ, আমরা দেখা যায় কোনো ধরনের কোর্স বা প্রশিক্ষণ না নিয়ে কর্মসংস্থানে চলে যাই। এতে করে চাহিদানুপাতে কাজ করা করা হয়ে উঠে না।

এজন্য অবশ্যই কাজে যোগদানের পূর্বে কাজ সম্পর্কে একটি কোর্স করে নেয়া জরুরি।

আওয়ার ইসলাম : ছাত্ররা ফারেগ হয়ে কি শুধু চাকুরি খোঁজবে নাকি উদ্যোক্তও হবে? আপনার মতামত কী?

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু : কেউ যদি ফারেগ হওয়ার পর কোনো প্রতিষ্ঠান করতে চায় তাহলে তাঁদের ব্যাপারে আমার মন্তব্য হলো, প্রতিষ্ঠান তারাই করতে পারবেন যাদের প্রতিষ্ঠান চালানোর যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা আছে।

শুধু দাওরা শেষ করেই প্রতিষ্ঠান করে ফেলবেন আমি মনে করি এটা উচিত হবে না। কারণ প্রতিষ্ঠান চালানোর মতো অভিজ্ঞতা এখনো তার ঝুড়িতে জমা হয়নি।

আওয়ার ইসলাম : মসজিদ মাদরাসার বাইরে আর কোন ধরণের কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু : আমি মনে করি কওমি ফারেগীন তরুণ আলেমদের ব্যবসাতে অগ্রসর হওয়া দরকার। এখানে আমাদের যথেষ্ঠ সুযোগও রয়েছে। ব্যবসার মাঝে সততাপূর্ণ মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। এখানে মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে দীনদারী উঠে গেছে। সবাই এখন পেরেশান।

মানুষকে সৎ ও সঠিক ব্যবসা উপহার দিতে কওমি আলেমদের বিকল্প নেই। তাছাড়া আমাদের রাসূল সা. শুরুতে ব্যবসা করেছেন। সুতরাং আমি মনে করি ফারেগীন নবীন আলেমদের ব্যবসার দিকে মনোযোগ বাড়ানো জরুরি।

আওয়ার ইসলাম : কওমি ফারেগ তরুণ আলেমগণ শিক্ষা সমাপ্তির পর অনেকেই হতাশায় ভোগেন। তাদের হতাশা দূর করার ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু : আমি ব্যক্তিগতভাবে এ প্রশ্নটির পক্ষে নই। কারণ আপনি দেখবেন বাংলাদেশে কওমি পড়ুয়া শতকরা এমন সংখ্যা কম। যারা বেকার আছে। অথচ বিপরীত চিত্র দেখবেন জেনারেল শিক্ষিত ছেলেদের। তাদের অধিকাংশই বেকার।

কওমি মাদরাসার ছেলেরা আর কিছু না হোক অন্তত মক্তবে পড়াতে পারছে। তাদের কর্মসংস্থান তৈরি হতে সময় লাগে না। তাই আমি মনে করি, আমাদের ছেলেরা আলোর পথেই আছে। তারা হতাশাগ্রস্থ নয়। আমাদের কর্মসংস্থান দিন দিন বাড়ছে।

উদাহরণস্বরুপ বলতে চাই, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মসজিদের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অনেক সময়ই অনেকে শিক্ষক চান। কিন্তু আমরা চাহিদা মোতাবেক শিক্ষক দিতে পারছি না।

আওয়ার ইসলাম : প্রতি বছর কওমি মাদরাসা থেকে প্রায় ২০-২৫ হাজার ছাত্র 'দাওরায়ে হাদীস' (তাকমিল) সমাপণ করছে। কিন্তু প্রতিবছর কি ২০-২৫ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে?

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু : এ প্রশ্নটি জবাব কিছুটা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। আপনি যদি মনে করেন কওমি মাদরাসার ফারেগ শিক্ষার্থী কওমি মাদরাসাকেই কর্মসংস্থান হিসেবে বেছে নেবে। তাহলে হয়তো এতো কর্মসংস্থান নেই।

কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। বরং সমাজের প্রতিটি সেক্টরই তাদের জন্য উন্মুক্ত। তাদের সব ধরনের শিক্ষাইতো এই সিলেবাসে দেয়া হয়েছে। তারা সমাজের সব সেক্টরে ছড়িয়ে পড়বে ও দীনের পরিবেশ তৈরি করবে। এই ক্ষেত্রটি পত্রিকা অফিসও হতে পারে। মিডিয়া হাউজও হতে পারে। যে কোনো ধরনের সমাজ উপযোগী কাজ হতে পারে।

আওয়ার ইসলাম : আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু : আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ