আওয়ার ইসলাম: আর পাঁচটা মানুষের মতো রোজার মাসে ভোররাতে সেহেরি খেয়ে বিছানায় বিশ্রাম নিচ্ছেন বছর চব্বিশের মুহাম্মদ পানউল্লাহ আহমেদ। চোখটা একটু একটু করে ঘুমে জড়িয়ে আসছে –এমন সময় সহকর্মী তাপসের মন খারাপ নজরে আসে তার।
বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি, সে সমস্যায় আছে। মন খারাপ হবে নাই বা কেন! গতরাতে তাপসের কাছে একটি ফোন আসে ‘ও’ পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু রোগীর পরিবার শত চেষ্টার পরেও রক্তের ব্যবস্থা করতে পারেনি। প্রসঙ্গত, তাপস ও মুহাম্মদ পানউল্লাহ যথাক্রমে একটি বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ও ওয়ার্ড বয়।
সমস্যা শুনেই কোনও কালক্ষেপ না করেই রক্তদান করতে রাজি হয়ে যান আহমেদ। কিন্তু রোজা রেখে রক্তদান করবে প্রথমটায় শুনেই চমকে ওঠে তাপস। আর অবাক হবে নাই বা কেন! আহমেদের আগে অনেককেই রক্ত দেবে বলেছে, কিন্তু সাড়া মেলেনি।
যেখানে সাধারণ মানুষ রক্তদানে এগিয়ে আসেনি, সেখানে একজন রোজাদার রোজা ভেঙে রক্তদানে রাজি হচ্ছে ভেবেই অবাক হয়েছিলেন তাপস। তার কথায়, ‘আমি চাইনি, রোজা ভঙ্গ হোক, কিন্তু আহমেদ নাছোড়বান্দা, তাই অবাক হয়েছিলাম।’
গত বুধবারের ঘটনা এটা। সেদিন অন্য একটি হাসপাতালে রোগ-যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে বছর পঞ্চাশের রঞ্জন গগৈ। ভারতের উত্তর আসমের ধিমাজির বাসিন্দা রণজনবাবু পেটে দুটো টিউমার নিয়ে কদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে অপারেশন করতে হবে বলে জানান।
কিন্তু বাঁধ সাধে শরীরে রক্তের অভাব। পরে তাপসের বন্ধু আহমেদ ওই হাসপাতালে তার ‘বি’ পজেটিভ রক্তের বিনিময়ে ‘ও’ পজেটিভ রক্ত নিয়ে রোগীর অপারেশন করান। কিন্তু রোজার মতো অবশ্যপালনীয় ধর্মাচার করা কি পাপের নয়? সে কথায় কান দিতে নারাজ আহমেদ।
তার কথায়, আমি মানবিকতার খাতিরে এগিয়ে এসেছি। শুধু কি তাই? তিনি কয়েকজন আলেমের সঙ্গে পরামর্শও নিয়েছিলেন, তারাই আহমেদকে রক্তদানে উৎসাহ দিয়েছেন। শারীরিক দুর্বলতার জন্য রোজা ভাঙতে বাধ্য হলেও তার মনে কষ্ট নেই। পরে রোজা করতে পারবেন, কিন্তু একজন রোগীর প্রাণ চলে গেলে তো আর ফিরে আসবে না!
এদিকে, রোগীর আত্মীয়রা তো খুশিতে গদগদ। রঞ্জনের শালা বিনোধ বৈশ্য তো বলে ফেলেন, ‘আমরা আহমেদের ব্যবহারে কৃতজ্ঞ। একজন রোজা ভেঙে রক্তদান করে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে ভাবতেই কেমন মনে হচ্ছে।’
কেপি