বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


তেজগাঁও রেলওয়ে মসজিদে ইতিকাফের ব্যাপক প্রস্তুতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফের দিন। সব বাঁধন ছিন্ন করে আল্লাহর ঘরে পড়ে থাকার নামই  ইতিকাফ। এ ইতিকাফ আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের মাধ্যম। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সম্মিলিতভাবে পালিত হয় এ ইতিকাফ।  এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তেজগাঁ রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদ। এখানে ইতিকাফ করেন শাহ জমিরুদ্দিন নানুপুরী রহ. এর খলিফা, জামিয়া শায়খ জাকারিয়া, কাঁচকুড়া উত্তরা মাদরাসার মুহতামিম ও ইসলামিক ফাউণ্ডেশন এর সহকারী পরিচালক শাইখুল হাদিস মাওলানা  ড. মুশতাক আহমদ। তার সঙ্গে আসন্ন ইতিকাফ নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের  নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ


মোস্তফা ওয়াদুদ: শেষ দশক শুরু হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে  ইতিকাফের গুরুত্ত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

মাওলানা ড. মুশতাক আহমদ: মানুষের জীবনে ইতিকাফের গুরুত্ত অপরিসীম। আল্লাহর নবি ছয় মাস ইতিকাফ করেছেন। আল্লাহর নির্জনতা অবলম্বন করেছেন। আর উম্মতের জন্য মাত্র দশদিন রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।

নবি সারাজীবনে ছয়মাস ইতিকাফ করেছেন। আর আমরা যদি বছরে দশদিন ইতিকাফ করি তাহলে সারাবছর আল্লাহর ইবাদতের প্রতি মনোযোগ থাকবে। সাধারণত আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে হলে নির্জনতা জরুরি। ইতিকাফ মানুষকে আল্লাহ মুখী করে। এ ইতিকাফ আগেও ছিলো। মেমন হযরত ইবরাহিম আ. ইতিকাফ করেছেন।

ইতিকাফের ফজিলত নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে। আম্মাজান আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন, রমজানের শেষ দশক উপনীত হওয়ার পর আল্লাহর রাসুল সা. সংসার ধর্ম পালন ক্ষেত্রে সংযম অবলন্বন করতেন ও ইবাদতের জন্য কোমর বেঁধে নিতেন। সারারাত জেগে কাটাতেন। পরিবারের সবাইকে জাগ্রত থাকতে বলতেন ।(বুখারি ও মুসলিম)

আবার হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করে, আল্লাহ সেই ব্যক্তি ও দোজখের মধ্যে ৩ খন্দক পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করেন।’ (তাবরানি ও হাকেম) প্রত্যেক খন্দক পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের চেয়ে আরো বহুদূর।

এমনিভাবে আলী বিন হোসাইন রা. নিজ পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করে, তা দুই হজ ও দুই ওমরার সমান’ (বায়হাকি)।

ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ইতিকাফকারী গোনাহ থেকে বিরত থাকে। তাকে সব নেক কাজের কর্মী বিবেচনা করে বহু সওয়াব দেয়া হবে’ (ইবনে মাজাহ)।

রমজানের  পবিত্রতম দিনগুলিতে পাপমুক্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মহানেয়ামত অর্জিত হয় শেষ দশকের ইতিকাফের মাধ্যমে। ইবনে কায়িম রহ. বলেন, মহান আল্লাহর সঙ্গে আত্মার সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। সব ব্যস্ততামুক্ত হয়ে আল্লাহর ধ্যানমগ্ন হওয়া। পার্থিব সব ধরনের সংশ্রব ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্যে এসে তাঁর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা।

এখলাস, খাঁটি নিয়ত ও আন্তরিকতাপুর্ণ ইতিকাফ অবশ্যই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, ইতিকাফ জগতের তাবত মায়াজাল ছিন্ন করে নিজেকে মহান আল্লাহর হাতে সমর্পণ করতে হয়। একমাত্র তারই ধ্যানে মগ্ন হতে হয়। তাঁর দুয়ারে পড়ে থাকতে হয়। ইতিকাফের গুরুত্ব তাৎপর্য ও ফজিলত অপরিসীম।

ইতিকাফের উদ্দেশ্য : ইতিকাফের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ। ইতিকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম থেকে অনেক বক্তব্য রয়েছে। যেমন, আল্লামা ইবনুল কাইয়ূম রহ. বলেছেন, ‘আল্লাহর প্রতি মন নিবিষ্ট করা, তাঁর সাথে নির্জনে বাস করা ও স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি থেকে দূরে অবস্থান করা যাতে করে তার চিন্তা ও ভালোবাসা মনে স্থান করে নিতে পারে।’

আল্লামা হাফেজ ইবনে রজব রহ. বলেছেন, ‘ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টির সাথে সাময়িকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক কায়েম করা। আল্লাহর সাথে পরিচয় যত দৃঢ় হবে, সম্পর্ক ও ভালোবাসা তত গভীর হবে এবং তা বান্দাকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে।’

মোস্তফা ওয়াদুদ : কতবছর ধরে আপনি ইতিকাফের আমল করছেন। বিশেষভাবে তেজগাঁও কতবছর ইজতেমায়ী আমল করছেন?

মাওলানা ড. মুশতাক আহমদ: আমি বারোবছর যাবত লাগাতার ইতিকাফ করছি। এর মাঝে শুরুতে তিন বছর তেজগাঁও মসজিদে ইতিকাফ করেছি। এরপর উত্তরখানে ধারাবাহিক ৯ বছর ছিলাম। এবছর আবার তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন মসজিদে ইতিকাফ করবো ইনশাআল্লাহ

মোস্তফা ওয়াদুদ : আপনার ইজতেমায়ি ইতিকাফ সাধারণত আলেম উলামার অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে দেখা যায়। এই আলেমদের বেশি অংশ গ্রহণের কারণ কী?

মাওলানা ড. মুশতাক আহমদ : আমার এখানে অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক সুনির্দিষ্ট প্লানিংয়ের মাধ্যমে দিনগুলো অতিবাহিত করা হয়। হয়তো এ কারণে বেশি হতে পারে।

মোস্তফা ওয়াদুদ : বিশেষ কর্মসূচি কী থাকে?

মাওলানা ড. মুশতাক আহমদ : একজন মানুষের দৈনন্দিন আমল শিখানো হয়। ওজু, নামাজ, গোসল, আখলাক, আদব, কুরআন শিক্ষা, কুরআন মশকসহ যাবতীয় আমলের বিষয় শিক্ষা দেয়া। ২৪ ঘন্টা অত্যন্ত প্লানিংয়ের মাধ্যমে অতিবাহিত করা হয়।

মোস্তফা ওয়াদুদ : এবারের প্রস্তুতি কেমন? আমাদের মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুজিবুর রহমান, ও মসজিদের সভাপতির সমন্বয়ে এবার মসজিদ কর্তৃপক্ষ অনেক সুন্দর ও গোছালো প্রস্তুতি নিয়েছে। এবার প্রায় কয়েকশ মানুষের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।কাদের জন্য অনুমতি রয়েছে?

মাওলানা ড. মুশতাক আহমদ : সবার জন্যই অনুমতি আছে। যে কেউ এখানে এসে এতেকাফে অংশ নিতে পারবে।

মোস্তফা ওয়াদুদ : সারাদেশের মসজিদগুলোতেই ইতিকাফ হচ্ছে। আপনার এখানের খাস খাস কিছু বিষয় যদি বলতেন? খাস করে কোনো বিষয় রাখা হয়নি। মানুষের প্রয়োজনীয় আমলগুলো এখানে শিখানো হয়। জীবনের জন্য খোরাক দিয়ে দেয়া হয়।মহিলাদের ইতিকাফ নিয়ে কিছু বলুন।

মাওলানা ড. মুশতাক আহমদ : মহিলারা ঘরের যে অংশে সাধারণত নামাজ পড়া হয় সেই রকম কোনো অংশে ইতিকাফের জন্য নির্দিষ্ট করে দশ দিন ইতিকাফের নিয়ত করে সেই জায়গায় বসে ইবাদত বন্দেগি শুরু করবেন।

শরয়ি কোনো ওজর ছাড়া সেখান থেকে উঠে অন্যত্র না যাওয়া। রাতে সেখানেই ঘুমাবেন। ইতিকাফ অবস্থায় যদি মহিলাদের মাসিক শুরু হয়ে যায় তাহলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ