শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


জনপ্রিয় ইউটিউবার জ্যা কিম ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলেন যেভাবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা ইমরান খান

মানবতা ধ্বংসের চুড়ান্ত পর্যায়ে যখন, ঠিক তখনই মানবতার ডাক নিয়ে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে নারীদের অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে শান্তির বার্তা নিয়ে আবির্ভূত হলেন আমাদের নবি সা.। যার সুন্দর ব্যবহার ও কথার মাধূর্যে ইসলামের ছায়াতলে এসে আশ্রয় নিলো দিশেহারা অনেক যুবক। যাদের পরবর্তি ব্যবহারে অনেকে হয়েছেন মুসলমান। এর মাঝেও অনেকে ইসলামের ক্ষতিসাধন করতে চেয়েছিল। প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিল অনেক মিথ্যা অপবাদ ও সত্য গোপনের মাধ্যমে।

বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে তারই প্রতিফলন দেখতে পাই। ইসলাম বিদ্বেষী মহল ও মিডিয়া চালিয়ে যাচ্ছে মুসলমানদের নামে অপপ্রচার। আবার তার বিপরীতে অনকে মুসলমানের আচরনে অনেক ধর্মহীন যুবক ফিরে আসার চেষ্টা করছে ইসলামের ছায়াতলে।

আজ লিখব কোরিয়ার এক ধর্মহীন যুবকের কথা। যে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। জানার জন্য পড়াশুনা করছে ইসলাম নিয়ে।  তার নাম ‘জ্যা কিম’। ইউটিউবে তার অনেকগুলো ভিডিও বার্তার মধ্যে একটি হচ্ছে Why am I interested in Islam?
তারই অনুবাদ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

আমি কেনো ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়েছি?- জ্যা কিম।

অনেকেই আমাকে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ইউটিউব ও মেইলের মাধ্যমে জানতে চায়,- তুমি কি মুসলিম?

আমি তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। না আমি মুসলিম নই। তবে এটা ঠিক যে আমার কোন ধর্ম নেই, আমি কোন নাস্তিকও নই। অনেকেই আমাকে মুসলিম মনে করে, কিন্তু তা নয়। আপনি যদি এ ব্যপারে হতাশ হন তাহলে আমি সরি। তবে হ্যাঁ, আপনি অবাক হতে পারেন কেন আমি ইদানিং প্রায়ই মুসলিমদের পক্ষে কথা বলি। প্রকৃতপক্ষে মুসলিমদের প্রতি আমার আগ্রহের জন্যই আমাকে সবাই এ প্রশ্ন করেন।

আজ আমি বলব কেনো মুসলমান ও তাদের সাংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হলাম।

চলুন দুই বছরের আগের ঘটনায় যাই। অনেকেই জানেন যে আমি vigo live এ্যপ এর মাধম্যে বেশি বেশি বার্তা সম্প্রচার করি। এ এ্যপটি দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ জনপ্রিয়। এর মাধম্যে সৌভাগ্যক্রমে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে ২ জন ভক্ত পেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ঐ সময়ে মুসলমান সম্পর্কে আমার কোন ধারনা ছিল না।

এমনকি আমি এটাও জানতাম না যে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া তে মুসলমান থাকে। আমি জানতাম মুসলমানরা শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই থাকে। যেমন সৌদি আরব।
আমি কল্পনা করতাম পাগড়ী পরিহিত ও লম্বা দাড়ি বিশিষ্ট মানুষ এবং চোখ ছাড়া সকল কিছু ঢেকে রাখা রহস্যময়ী নারীদের নিয়ে। এটাই ছিল মুসলমানদের নিয়ে আমার কল্পনা।

কতটা বোকাই না ছিলাম আমি? আমি স্বীকার করছি, শুনে শুনে মুসলমানদের কে খারাপ ভাবতাম। কারন কোরিয়াতে মুসলমান সম্পর্কে জানার খুব একটা সুযোগ ছিল না।

মিডিয়া তাদের ব্যপারে শুধু ৯/১১ (নাইন ইলেভেন), তালেবান ও আইএস আইএস হিসেবেই প্রচার করত। আমি শুধু খারাপ দিকগুলোই দেখতে পেতাম। এর কারনে সত্যটা বলা সহজ ছিলো না।

যেভাবেই হোক সৌভাগ্যক্রমে আমি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তাতে ভক্তদের সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাই। তাদের কাছে যাওয়ার পর আমি অবাক হয়েছিলাম। তাদের নিয়ে আমার ভুল ধারনা একেবারেই কেটে গেলো।সেখানে ছিলো না কোন রহস্যময়ী নারী ও ভিতীকর মানুষ। তারা ছিল খুবই দয়ালু, আনন্দিত ও ভালো মানুষ। এটি ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ,যা আমার ভাবনার ঠিক উল্টো।

ওহ হ্যা, তাদের খাবার গুলো ছিল সত্যিকার ভাবেই সুস্বাদু। যেমন ন্যসি গোরেং, স্যাতি, বাস্তো ইত্যাদি( ইন্দোনেশীয় খাবার)।

এরপর গত বছর যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো তিউনিসিয়া। সেখানে যাওয়ার পরেও আমার একই অনুভূতি ছিল। তারা খুবই দয়ালু ও ভালো। অনেক সাহায্য করেছিল আমায়।

তারা (মুসলমানরা) কোরিয়ান সাংস্কৃতিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল। সুন্দর বিল্ডিং, সুন্দর শহর, সুন্দর এবং সুস্বাদু খাবার (তিউনিসিয়ান রুটি, কুস্কুস ও অন্যান্য এরাবিয়ান খাবার) সত্যিই খুব ভালো ছিলো।

এভাবেই হোক তাদের ভালোবাসা আমাকে মুসলিম নিয়ে ভুল ধারনা ধ্বংস করে ফেলেছে। এজন্যই আমি তাদের খুব ভালোবাসি। সেখান থেকেই ইসলামকে বেশি করে জানার জন্য পড়া শুরু করেছি। ইতোমধ্যে কোরিয়ান ভাষায় অনুদিত কুরআন পড়া শুরু করেছি। কারন আমি আরবি জানিনা।

ইসলামে ব্যাবহার হয়েছে এমন অনেক শব্দের প্রতি সত্যিই অবাক হয়েছি, যা আমরা সাধারনত যে শব্দ নিয়ে চিন্তা করি (মানবতা,দয়া, শিষ্টাচার, সহযোগিতা ইত্যাদি)

কিছু মানুষ মনে করেন মুসলিমরা হিংস্র। কিন্তু মুসলিমরা প্রকৃতপক্ষে অন্যান্যদের তুলনায় খুবই শান্ত। এমনকি অন্যরা তাদেরকে ঘৃণা করলেও তারা অন্যদের ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে। আবার কেউ কেউ মনে করেন মুসলিমরা নারীদের কে হিজাব করতে বাধ্য করেন। (বরং তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই করে)

প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হিজাবের মাধমে নারীদেরকে রক্ষা করে ও সম্মান করে। তারা ভালো কাজ করা আর খারাপ কাজ না করার কথা বলেন। এটা সাধারন কথা তবে খুবই চমৎকারভাবে তারা বর্ণনা করে। আমি সবসময় ভালবাসা ও শ্রদ্ধার কথা বলি এবং ঘৃণা আর প্রত্যাখানের কত বলি না।

আর আপনি জানেন যে ইসলাম অর্থ ই শান্তি। তাই নয় কি?

তো এটাই কারন যে আমি মুসলমানদের প্রতি আগ্রহী হয়েছি। এ ব্যাপারেই কথা বলি। আমি ভাবছি যদি সত্যিকার বিশ্বাস জন্ম নেয় তাহলে আমি মুসলিম হতে বিবেচনা করব। কিন্তু প্রথমে আমি অনেক শিখতে চাই।

আমি আশা করছি আমার এ উত্তর আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। অতএব আমি মুসলিম কিনা এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা না করাই ভাল। আমি যদি সত্যিই মুসলিম হয়ে যাই তাহলে আপনাদের কে তা বলব। আপনারা জানতে পারবেন। জ্যা কিম

এভাবেই বলছিলেন কোরিয়ার এ যুবক। ইসলামের প্রতি তার আগ্রহের কথা। ইসলামকে ভালো লাগার কথা। তাই আমাদের উচিৎ এমন জ্যা কিম দের খুজে বের করা ও ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেওয়া। সূত্র: ইউটিউব

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ