বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস সময়মতো পরিশোধ করা হোক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী

মুসলমানদের বৃহত্তম উৎসব ঈদুল ফিতর দোরগোড়ায়। প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে কলকারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বেতন-বোনাস পাওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ নিয়ে অনেক স্থানে ঘটে যায় তুলকালাম কান্ড। শ্রমিকরা কাজ করে বেতন বা পারিশ্রমিক পাবে না তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। মেনে নেয়া যায় না এসব বিলম্বে বা অনিয়মিতভাবে প্রদানের বিষয়টিও।

বছরে দু'বার মাত্র ঈদ আসে। ঈদে শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের অনেক ধরনের আশা-ভরসা থাকে। তাদের এসব চাহিদা মেটাতে প্রাণপণে চেষ্টা করে শ্রমিকরা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শতকরা কতজন শ্রমিক পারে তাদের এ চাহিদা মেটাতে। ঈদ আসার বেশ আগে থেকে কলকারখানা, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার বেশিরভাগ শ্রমিকের মধ্যে বিরাজ করে বেতন-বোনাস পাওয়া নিয়ে নানা শংকা। এবারো ঈদের আগে বেতন-বোনাস প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমেছেন।

তৈরী পোশাক শিল্প শ্রমিকেরা ঈদের আগে নির্ধারিত সময়ে বেতন-বোনাস প্রাপ্তির দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে শ্রমিকেরা বেতন-বোনাস প্রাপ্তির নির্ধারিত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়িত না হলে তারা আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ বৃহত্তর ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় যেখানে পোশাক শিল্প রয়েছে এর মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গেছে।

চট্টগ্রামে শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধ না করেই কিছু কারখানা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকেরা সেখানে বিজিএমইএ’র চট্টগ্রাম অফিসের সামনে ধরনা দিয়েছেন। রাস্তা অবরোধের চেষ্টাও তারা করেছেন। একই অভিযোগ সারা দেশে কিছু পোশাক মালিকের বিরুদ্ধে রয়েছে। তারা শ্রমিকদের বঞ্চিত করে নিজেদের লাভ বাড়িয়ে নিতে চান।

রমজানের ঈদে সবার বাড়তি চাহিদা থাকে। সাধারণত সারা বছরের পোশাক ও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস এই সময় কেনা হয়। এবার ঈদের সময়টা পড়েছে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ সময় সাধারণত শ্রমিকদের বাসাভাড়া পরিশোধ করতে হয়। বেতন-বোনাস না পেলে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা দূরে থাক তারা অতি প্রয়োজনীয় বাসা ভাড়াও পরিশোধ করতে পারবেন না।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, বেতন-বোনাস যদি একেবারে শেষ মুহূর্তে পান তাহলে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা তারা করতে পারেন না। বিষয়টি মালিকদের মাথায় থাকা উচিত। পোশাক শ্রমিকেরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন। ঈদে তারা মা-বাবাসহ নিকটাত্মীয়দের সাথে মিলিত হন। তার আগে স্বজন ও নিজেদের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে চান। সময়মতো বেতন-বোনাস না পেলে সেটা সম্ভব হবে না।

পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য। কৃষি শ্রমিকের পরই পোশাক শ্রমিকদের অবস্থান। এদের মধ্যে বিরাট একটা অংশ নারী। এমনিতেই অনেকে বলে থাকেন, নারীদের পারিশ্রমিক পুরুষের পারিশ্রমিকের অর্ধেক। আর নারী শ্রমিকদের মধ্যে কেউ যদি হয় কিশোরী বা শিশু, তাহলে তো আর কথাই নেই। মালিকপক্ষের লোকেরা পারে না তো তাদের দিয়ে বিনা মজুরিতে কাজ করায়। আর এ কারণেই তো অনেক কারখানার অবস্থা ভাল যায় না। কারণ এসবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও নারাজ হন।

শ্রমিকদের যথাসময়ে সব ধরনের দাবি-দাওয়া মেটানো গেলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কারখানার উৎপাদনের ক্ষেত্রে। কারণ তখন কাজের স্বাভাবিক পরিবেশও সৃষ্টি হবে। তাছাড়া পবিত্র কুরআন-হাদিসেও বলা আছে, শ্রমিকদের শরীরের ঘাম শুকানোর আগে তাদের পাওনা মিটিয়ে দাও। আমরা যদি এ বিষয়টির ওপরও বেশি জোর দেই তাতে করেও এ সংক্রান্ত কোনো জটিলতাই হয়তো আর দেখা দেবে না। অর্থাৎ এসব ব্যাপারেও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা উচিত। কেননা মালিক-শ্রমিকদের সিংহভাগই মুসলমান।

আমরা মনে করি, সরকার যদি ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পাওয়ার বিষয়টি শক্তভাবে দেখে তবে এ সংক্রান্ত সমস্যা সহজেই দূর হতে পারে। এজন্য প্রতিটি কারখানায় সরকারের মাধ্যমে নোটিশ পাঠানো উচিত। যারা সরকারের নির্দেশ পালন না করবে তাদের বিরুদ্ধে গ্রহণ করা উচিত কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তাহলে এমনিতেই বেতন বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রে কারখানা মালিকরা বেশি সচেতন হবে।

গত বছর কিছু কারখানার মালিক শেষ মুহূর্তে কারখানা বন্ধ করে নিরুদ্দেশ হন। ঈদের পরে তারা বেতন-ভাতা পরিশোধ করে কারখানা চালু করেন। এ বছরও এর পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে দিকে সকলের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

-এএ


সম্পর্কিত খবর