বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


সমাজের উপরতলার লোকেরা সন্তানদের কোথায় পড়ায়?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার: না! দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় এই শ্রেণীর মানুষের বিন্দুমাত্রও আস্থা নেই। তাই ধনী ও ক্ষমতাবানদের দুলাল-দুলালিরা যায় বিদেশি সিলেবাসের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। আমাদের দেশে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল কোর্স করে তারা। ব্রিটিশ কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে তাদের পড়াশোনা, পরীক্ষা গ্রহণ চলে।

আর সে পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে দেশের সব রাজনৈতিক দলই হরতালের মতো কর্মসূচিতেও ছাড় দেয়। তার পর তাদের লেখাপড়া হয় বিদেশের মাটিতে। মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশের নিচে এই বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণী, কিন্তু তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের অন্তত ৫০-৬৫ ভাগ সুবিধা ভোগ করে।

সুতারাং মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানরা দেশে প্রাপ্য সুবিধার ৮৫-৯০ ভাগ ভোগ করে। অন্যদিকে, প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য পায় মাত্র ১০-১৫ ভাগ সুযোগ-সুবিধা। অথচ, সরকারের মায়াকান্না সব সময় এই বঞ্চিত ৮০ ভাগ মানুষের জন্যই, যাদের জন্য শাসকগোষ্ঠী কিছুই করে না।
অবশিষ্ট ১০-১৫ ভাগ সুবিধা ভাগাভাগি করে নিতে হয় সমাজের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ, ৮০-৮৫ ভাগ সাধারণ মানুষকে। শিক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার হলেও দেশের এই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই আসলে উচ্ছিষ্টভোগী।

বাংলাদেশের সংবিধানে ‘সমাজতন্ত্র’ একটি ঘোষিত নীতি। এর অর্থ যদি এই হয়ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের মতো মৌলিক বিষয়ে সকল নাগরিক সমঅধিকার ভোগ করবে তাহলে সংবিধানের মৌলনীতি ‘সমাজতন্ত্র’ শুধুই ছেলে-ভুলানো বুলি আর প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।

বিগত সাড়ে চার দশকে শাসক শ্রেণী বাংলাদেশের শিক্ষাকে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করেছে। শাসক শ্রেণীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গত সাড়ে চার দশকে শিক্ষাকে পরিণত করা হয়েছে সবচেয়ে দামি পণ্যে। বিশ্বব্যাংক আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পরামর্শ মেনে তারা শিক্ষাকে লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত করতে উন্মাদ হয়ে উঠেছে।

দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ করে সরকার বাহবা কুড়ায়, যা একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা-ব্যয়ের ১০ ভাগের এক ভাগও নয়। সরকারের কৃতিত্ব হলো বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু সে পুস্তক কতটা যুগোপযোগী, কতটা মানসম্পন্ন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অভিযোগ আছে, সরকার বিপুল অর্থ ব্যয় করে যে পাঠ্যপুস্তক রচনা ও প্রকাশ করে তা ভুলে ভরা।

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গণের সচেতন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাব্যবস্থার অচলায়তনের জন্য পাঠ্যপুস্তকের এ ভুলকেই দায়ী করেছেন। তার ওপর সে পুস্তক ক্লাসরুমে ব্যবহার করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করা যায়নি।

লেখক: শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ