শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


চরমোনাই মহিলা মাদরাসার ঈর্ষণীয় সাফল্য: সারাদেশে ৩য় তাজুন্নূর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বেফাকুল মাদারিস আরাবিয়া কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে অনুষ্ঠিত ৪২তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে ৩০ মে রোজ বৃহস্পতিবার।

বেফাকের আওতায় অনুষ্ঠিত হওয়া কিতাব বিভাগের সর্বোচ্চ জামাত ফযিলতে বালিকা শাখায় পুরো বাংলাদেশে মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন চরমোনাই মহিলা শাখার মেধাবী ছাত্রী শরীয়তপুরের তাক্বওয়া তাজুন্নূর।

সদ্য প্রকাশিত ফলাফলের পর গল্পে গল্পে আওয়ার ইসলামে কাছে তুলে ধরেছেন তার ঈর্ষণীয় ফলাফলের পেছনের গল্প। তার জীবনের গল্প জানতে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে তার সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম প্রতিনিধি তাওহীদ আদনান

আওয়ার ইসলাম: আপনার পড়াশোনার শুরু কোথা থেকে?
তাক্বওয়া: আমার জন্ম শরীয়তপুরে হলেও বাবার কর্মস্থল বরিশাল হওয়ার সুবাধে আমার বেড়ে ওঠা হয়েছে বরিশালেই। পড়া-লেখার হাতে খড়ি চরমোনাইতে৷ বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি ও মক্তব ইত্যাদিসহ কিতাব বিভাগের পড়া লেখা সবকিছু চরমোনাইতেই (মহিলা শাখায়) হয়েছে৷

আওয়ার ইসলাম: আপনার পেছনের ক্লাসগুলোর রেজাল্টও কী এমন ঈর্ষণীয় ছিলো, যেমনটা এবার হলো!
তাক্বওয়া: জ্বি আলহামদুলিল্লাহ পূর্বের জামাতগুলোতেও বেফাকের সিরিয়ালে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে ছিলাম৷ আল্লাহর শুকরিয়া যে বরাবরের মতো এবারও আমি পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি৷ আল্লাহর রহমতে যে ফলাফল হয়েছে আমি সন্তুষ্ট৷ তবে ফলাফলা আরো ভালো হলে আরো বেশি খুশি থাকতাম আমি৷

আওয়ার ইসলাম: আপনার সফলতার পেছনে কার বেশি অবদান বলে মনে করেন?
তাক্বওয়া: আসলে সবার বড় হওয়ার পেছনে সবচে বড় অবদান থাকে বাবা-মায়েরই। তাছাড়া আমার বাবা যেহেতু আলেম ছিলেন তাই ইলম অর্জনের মূল প্রেরণা পেয়েছি বাবার থেকেই।

বাবা ছিলেন একাধারে চরমোনাই কওমীয়া ও আলীয়া উভয় শাখার প্রধান শাইখুল হাদিস৷ ছিলেন চরমোনাইর মরহুম পীর সাহেবের খলিফাও। যদিও আমার বাল্যকালেই বাবাকে হারাতে হয়েছ, তবুও ইলম অর্জনের মূল প্রেরণা যুগিয়েছিলেন বাবাই৷ মায়ের অবদানও অনস্বীকার্য৷

তিনি আমার পেছনে মেহনত করেছেন অনেক। বহু কষ্ট করেছেন আমার পড়া-লেখার জন্য৷ দোয়া-মোনাজাতে বহুরাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন তিনি৷ তারপর আমি বলবো আমার পেছনে আমার পরিবারের অন্যানদের, আমার ভাইয়াদের, বিশেষভাবে আমার বড় ভাই মাওলানা ইবরাহীম মাদানী ও মেঝো ভাই মাওলানা ইসমাঈল মাদানীর অবদান ছিলো সবচে বেশি। বাবার ইন্তেকালের পর থেকে আগলে রেখেছিলেন তারাই৷ তাদের প্রেরণার ফলেই এতদূর আসা৷

আওয়ার ইসলাম: আজকের এদিনে বিশেষভাবে কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার নাম বলবেন?
তাক্বওয়া: আমি তো সবার নামই বলবো। কারণ, কোনো শিক্ষিক/শিক্ষিকার অবদানই কোনো অংশে কম ছিলো না। তবে বিশেষ করে স্মরণ করতে চাই চরমোনাই মাদরাসার উস্তাদ বড় ভাইয়া মাওলানা ইবরাহীম মাদানী, মহিলা শাখার যিম্মাদার আলেমা সুমাইয়া আপা ও মাওলানা মুযযাম্মিলুল হক, আলেমা রুকাইয়া আপা প্রমুখ। আমার প্রতি তাদের ইহসান সবচে বেশি।

আওয়ার ইসলাম: ভালো রেজাল্টের পেছনে পড়া-শোনার জন্য অবশ্যই আপনার নির্দিষ্ট একটি রুটিন ছিলো। সে বিষয়ে কিছু বলবেন কি?

তাক্বওয়া: জি। পড়া-লেখার সময়ে আমি রুটিন মাফিকই চলি৷ রুটিনের বাহিরে সময় নষ্ট করি না আমি৷ প্রতিদিনের পড়াগুলো প্রতিদিন ইয়াদ করে নিতাম৷ কোনো এক দিনও অন্য সময়ের জন্য পড়া রেখে দিতাম না৷ সময়েরটা সময়েই করে নিতাম৷ রাত জেগে পড়ার প্রবণতা কম আমার৷

নিয়মতান্ত্রিক পড়তাম৷ তাই বেশি একটা প্রয়োজন হতো না রাত জেগে পড়ার৷ তাকরারের প্রতি গুরুত্ব দিতাম খুব বেশি৷ নিয়মিত তাকরার করতাম প্রতিদিন৷ আম্মু যেভাবে নেজাম তৈরী করে দিতেন সেভাবেই চলতাম৷ সেভাবেই পড়াশুনা করতাম৷ পরীক্ষার রাতে বেশি পড়তাম না। বরং অন্য রাতের তুলনায় অনেক আগে ঘুমিয়ে পড়তাম।

আওয়ার ইসলাম: ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রীদের কাছ থেকে কেমন রেসপন্স পেতেন?
তাক্বওয়া: রেসপন্স খুব ভালো৷ সবাই মিলেমিশে থাকতাম৷ পড়া-লেখায় উদ্দমতা পেতাম একজন অপরজন থেকে। সবাই সবাইকে নিজের থেকে বেশি মর্যাদা দিতাম৷ সবাই সবার পড়া-শুনার প্রতি খেয়াল রাখতাম৷

আওয়ার ইসলাম: আপনি কোন বিষয়ে পড়তে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পান?
তাক্বওয়া: আরবি সাহিত্য পড়ে আমি তৃপ্তি পাই৷ যে ভাষায় এসেছে কুরআন, যে ভাষায় আমাদের রাসূলের হাদিস, সে ভাষাই আমার স্বপ্ন ও কল্পনা৷ সে ভাষা নিয়েই জীবন চালনা৷ আরবি সাহিত্যের মাঝে আমি আমার প্রাণ খুঁজে পাই৷ মনের খোরাক মিলে আরবি সাহিত্যের অধ্যায়ণে৷

আওয়ার ইসলাম: আপনার ভবিষ্যত জীবনের স্বপ্ন কী বা আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
তাক্বওয়া: ইলমে হাদিসের মান সম্পন্ন শিক্ষিকা হওয়া।

আওয়ার ইসলাম: ইলম অর্জনের পেছনে সবচে বেশি কোন বিষয়টা আপনাকে প্রেরণা দিতো?
তাক্বওয়া: আমার আব্বুর নিয়মিত কিতাব পাঠদান এবং সারাক্ষনই ইলমে অহি নিয়ে ব্যস্ত থাকা৷ গভীর রাতে আব্বুর নিরবিচ্ছিন ইবাদত আর গভীর মনোযোগে ইলম আহরণের মুজাহাদাই আমায় প্রেরণা দিয়েছে সবচেয়ে বেশি৷

আওয়ার ইসলাম: আপনার জীবনের সংগ্রামে ফেলে আসা কোনো দুঃখ কষ্ট আছে যা কখনো ভাবিয়ে তোলে আপনাকে?
তাক্বওয়া: দুঃখ কষ্ট বলতে তেমন কিছু নেই আমার জীবনে৷ তবে জীবনে একটি হোঁচট খেয়েছিলাম আমার অল্প বয়সেই আব্বুর ইহকাল ত্যাগ করে চলে যাওয়াতে৷ এখনো মাঝে মাঝে আব্বুর সফেদ পাগড়ী পরিহিত নুরানী চেহারা ভেসে ওঠে আমার হৃদয়ে৷ তখন ভাবনার সাগরে হারিয়ে যাই আমি৷ কষ্টে চৌচির হয়ে যায় হৃদয় আমার৷ স্থির থাকতে পারি না আব্বুকে স্মরণ হলে৷ দোয়া করি এবং সকলের কাছে দোয়া চাই যেনো আল্লাহ পাক আব্বুকে জান্নাতের স্থায়ী মেহমান বানিয়ে নেন, আমিন৷

আওয়ার ইসলাম: বেফাকের অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ জামাতে সারাদেশে তৃতীয় স্থান অর্জনের পর পাঠকরা স্বাভাবিক ভাবেই আপনার অনুভূতি জানতে চাচ্ছেন। এ বিষয়ে কিছু বলার আছে?

তাক্বওয়া: অনুভূতিক কথা আর কী বলবো? আসলে অনুভূতি ব্যক্ত করার কোনো ভাষা নেই আজ আমার৷ কারণ অমুভূতি ব্যক্ত করতে হলে সর্ব প্রথমই শুকরিয়া আদায় করতে হয় আল্লাহ পাকের৷ তিনি তার আসীম দয়ায় আমাকে সফলতায় এ মানদণ্ডে উত্তীর্ণ করেছেন৷

কিন্তু আল্লাহ পাকের যথাযথ শুকরিয়া আদায় করার মতো ভাষা আমার নেই৷ তাই কেমন যেনো অনুভূতির ভাষাও আমার শুণ্য৷ তবুও বলতে গেলে এতটুকুই বলতে পারি যে, আমি এ ফলাফলটা দেখে মনভরে তৃপ্তিসহকারে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছি প্রথমেই৷ চোখে ছিল আনন্দের অশ্রু৷ বেয়ে পড়ছিলো আমার দুচোখ বেয়ে৷ খুশীর কারণে মৌন কান্নায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলাম বারংবারই মহান প্রভুর দ্বারে৷ আজ এই সময়ে আমি সে হিসেবেই সকলের আন্তরিক ও বরকতপূর্ন দোয়া প্রার্থী৷

আওয়ার ইসলাম: ধন্যবাদ পাঠকদের উদ্দেশ্য আপনার জীবনের কথাগুলো বলা ও আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য৷

তাক্বওয়া: ধন্যবাদ আওয়ার ইসলামকে আমার মতো এই অধমকে মূল্যায়ণ করায়৷ আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ৷

আওয়ার ইসলাম: ওয়াআলাই কুমুস সালাম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ৷

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ