শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


মুফতি তাকি উসমানির কলমে বিখ্যাত মুহাদ্দিস সুলায়মান আমাশের গল্প

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি তাকি উসমানি
ইসলামি স্কলার

আব্বাজান রহ, একটি গল্প শুনিয়েছিলেন- অতীতে একজন অনেক বড় ও বিখ্যাত মুহাদ্দিস অতিক্রান্ত হয়ে গেছেন, যার নাম সুলায়মান আমাশ; যিনি হজরত ইমাম আবু হানিফা রহ.-এরও ওস্তাদ ছিলেন। হাদীসের সব কিতাব তার বর্ণনা দ্বারা ভরপুর। আরবী ভাষায় আ’মাশ বলা হয় ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিকে।

যেহেতু তার চোখে দুর্বলতা ছিল, যার কারণে পলক পড়ে যেত ও আলাের ঝলকানিতে চোখের সম্মুখে সব অন্ধকার হয়ে যেত। তাই তিনি আমাশ উপাধিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন।

এই বুজুর্গের কাছে একজন ছাত্র এসেছিল। সে ছিল পঙ্গু। আর এই ছাত্রটিও এমন ছিল যে, সর্বদাই সে ওস্তাদের সঙ্গে থাকত। অনেক ছাত্রেরই এরূপ মানসিকতা থাকে। ওস্তাদ যেখানে যায়, ছাত্রও সাথে সাথে সেখানে যায়।

যাই হােক, ইমাম আ'মাশ যখন বাজারে যেতেন, তখন তার ঐ লেংড়া ছাত্রটিও সাথে যেত। লােকজন এই দৃশ্য দেখে প্রবাদ তৈরি করে ফেলল। দেখ ওস্তাদের চোখ নেই, আর ছাত্রের পা নেই।

একবার ইমাম আ’মাশ তার ঐ শাগরেদকে বললেন, তুমি আর আমার সঙ্গে বাজারে যেও না। শাগরেদ বলল, কেন, আমি আপনার সান্নিধ্য ও সঙ্গ ছেড়ে দেব? ওস্তাদ বললেন, মানুষ যে হাসি-ঠাট্টা করে বলে, 'ওস্তাদের চোখ নেই আর শাগরেদের পা নেই'।

শাগরেদ বলল, হজরত! ওরা যা বলে বলতে দিন, আমরা সওয়াব পেয়ে যাব; আর ওরা তাে গােনাহগার হবে। এতে আমাদের ক্ষতি কী? হজরত আমাশ উত্তরে বললেন, “আমরাও গােনাহ থেকে বাঁচব, ওরাও গােনাহ থেকে বাঁচবে- এটা আমাদের বিনিময় লাভ ও তাদের গোনাহগার হওয়া থেকে অনেক ভালাে।"

আমার সঙ্গে তােমার বাজারে যাওয়া তাে কোনাে ফরজ-ওয়াজিব নয় । আর না যাওয়াতে তােমার বা আমার কোনাে ক্ষতিও তাে নেই। তবে উপকার এই হবে যে, লােকেরা ঐ গােনাহ থেকে বেঁচে যাবে।

এরা আমাদের মুসলমান ভাই। সুতরাং, উত্তম হলাে, না আমাদের কোনা গােনাহ হয়, না ওদের। সুতরাং আগামীকাল থেকে তুমি আর আমার সঙ্গে বাজারে যাবে না।

শিক্ষা: সব ক্ষেত্রে মজাকের পরওয়া করা যাবে না। | বিশেষত কোনাে গুনাহের কাজ হলে কারাে পরওয়া করা যাবে না। চাই কেউ হাসি-ঠাট্টা করুক কিংবা বিরত থাকুক; এদিকে মােটেও ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না।

মানুষের ঠাট্টার কারণে কোনাে গােনাহের কাজ করা যাবে না। আর কোনাে ফরজ-ওয়াজিব মানুষের ঠাট্টার কারণে ছেড়ে দেয়া জায়েয নেই। 

হ্যা, যদি এমন হয় যে, একদিকে জায়েয ও মুবাহ কাজ আর অপরদিকে আওলা ও আফজাল কাজ।এমতাবস্থায় মানুষকে গােনাহ থেকে বাঁচাবার জন্য আফজাল কাজকে ছেড়ে দিয়ে জায়েয কাজকে গ্রহণ করাতে কোনাে অসুবিধা নেই; বরং এরূপ করাই যথার্থ।

(পাকিস্তানের মুসলিম স্কলার মুফতি তাকি উসমানি রচিত ‘খাওযার আদব’ বই থেকে সংগৃহীত। বইটি অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বকশী। )

আরএম/

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ