শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


কুদৃষ্টির তিনটি বড় ক্ষতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা জুলফিকার আহমদ নকশবন্দী: দৃষ্টির লাগামহীনতাই অধিকাংশ অশ্লীলতার প্রধান উৎস। এজন্য গবেষকরা বলে থাকেন, কুদৃষ্টি সকল অনিষ্টের মূল। এদু’টি ছিদ্র দিয়েই ফেতনার বন্যা ছুটে আসে। সমাজের মাঝে অবস্থিত থৈ থৈ করা নগ্নতার মূল কারণও এ দু’টি ছিদ্র। তাই ইসলাম ছিদ্র দু’টির ওপর পাহারাদার নিযুক্ত করে দিয়েছে।

প্রত্যেক মুমিনকে দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ এটাও ইসলামের ফলপ্রসূ শিক্ষারই চমৎকার বহিঃপ্রকাশ। এতে পরনারীর প্রতি দৃষ্টি যায় না, যৌনতার উদ্দামতা দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে না। বাঁশও থাকে না, বাঁশিও বাজে না।

নীতির কথা হল, Nip the evil in the bud. অর্থাৎ মন্দের উৎসটা শেষ করে দাও। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যাদের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত নয় তাদের মাঝে জৈবিকচাহিদার আগুন জ্বলতে থাকে। এই লাগামহীনতাই মানুষকে ধীরে ধীরে বেহায়াপনার অন্ধকার জগতের দিকে ঠেলে দেয়।

কুদৃষ্টির কারণে মানুষের অন্তরে যৌন উদ্দামতার ঝড় সৃষ্টি হয়। মানুষ এ বন্যার তীব্রতায় ভেসে যায়। এর কারণে তিনটি বড় ক্ষতি অস্তিত্বে আসে।

এক. কুদৃষ্টির কারণে মানুষের অন্তরে কল্পিতপ্রিয়ার ছবি তৈরি হয়। সুন্দর চেহারা তার দেল-দেমাগে জেঁকে বসে। সে জানে, কল্পিতচেহারার অধিকারীণী পর্যন্ত পৌঁছতে সে পারবে না, তবুও সে নির্জনে তার কথা ভেবে মজা ভোগ করে। অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার সাথে কল্পনার জগতে গল্প করে। বিষয়টা এ পর্যন্ত গড়ায় যে, কবির ভাষায়-

تمميرےپاسہوتےہوگويا

جبكوئدوسرانہيںہوتا

‘তুমি যেন আমার পাশে তখন থাকো,

যখন কেউ থাকে না।’

কুদৃষ্টিকে বাহন বানিয়েই শয়তান মানুষের মনমস্তিষ্কে জেঁকে বসে এবং তাকে শয়তানি কর্মকান্ড করার প্রতি তাড়া দেয়। ফাঁকা নির্জনস্থানে যেমনিভাবে অন্ধকার তার গাঢ় প্রভাব বিস্তার করে, অনুরূপভাবে শয়তানও ওই ব্যক্তির অন্তরে বিষাক্ত প্রভাব ঢেলে দেয়।  যাতে করে সে তার সামনে নিষিদ্ধ বিষয়গুলো খুবই আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে উপস্থাপন করতে পারে এবং তার সামনে একটি নয়নলোভন মূর্তি তৈরি দাঁড় করিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

এমন ব্যক্তির অন্তর দিবানিশি ওই মূর্তিটার পূজায় লিপ্ত থাকে। ইতরামিপূর্ণ আশা ও কামনা নিয়ে সে মেতে ওঠে। এটাকেই বলা হয় কামপূজা প্রবৃত্তিপূজা নফসপূজা। বরং এটা এক প্রকার মূর্তিপূজাও। এটা শিরকেখফী তথা গোপন শিরিক।

আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আর ওইব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণ থেকে অমনোযোগী করে দিয়েছি। যে তার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।’ (সূরা কাহ্ফ : ২৮)

এসব কল্পিত উপাস্য থেকে নিজের অন্তপ্রাণকে মুক্ত করা ছাড়া ঈমানের স্বাদ ভাগ্যে জুটবে না এবং আল্লাহর নৈকট্যের সিণগ্ধ বাতাস পাওয়া যাবে না। কবির ভাষায়-

بتوںكوتوڑكرتخيلكےہوںكےپتهركے

‘মূর্তিগুলো ভেঙ্গে কল্পনায় হয়ে আছ পাথরের।’

দুই. কুদৃষ্টির দ্বিতীয় ক্ষতি হল, মানুষের মনমস্তিষ্ক বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ঘরে সতী-সাধবী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তার অন্তর স্ত্রীর প্রতি আসক্ত হয় না। স্ত্রী ভাল লাগে না। খুটিনাটি বিষয় নিয়েও স্ত্রীর ওপর রাগ করে। ঘরোয়া পরিবেশ তার কাছে অস্বস্তিকর মনে হয়। বাইরের মহিলাদের প্রতি সে কুকুর যেমন শিকারের দিকে তাকায়, সেভাবে তাকায়।

অনেক সময় কাজকর্মেও তার মন বসে না, ছাত্র হলে পড়ালেখা ছাড়া বাকি সব ভালো লাগে। ব্যবসায়ী হলে ব্যবসা থেকে তার মন ওঠে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমালেও শান্তির ঘুম আসে না। কেউ দেখে মনে করবে যে, সে ঘুমিয়ে আছে, মূলত সে কল্পিতপ্রিয়ার কল্পনায় ডুবে আছে।

তিন. কুদৃষ্টির তৃতীয় বড় ক্ষতি হল, হৃদয় সুন্নাত-বিদআত ও হক বাতিলের মাঝে পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়ে যায়। অন্তর্দৃষ্টিশক্তি চলে যায়। দীনের প্রজ্ঞা ও ইলমিবৈভব থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। গুনাহর কাজ তার কাছে গুনাহ মনে হয় না। এরূপ পরিস্থিতিতে দীনের ব্যাপারে শয়তান তাকে সন্দেহ-সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেয়।

নেককারদের সম্পর্কে তার অন্তরে বদধারণা সৃষ্টি হয়। এমনকি পোশাক-আশাকে ও অবয়বে দীনপালনকারী ব্যক্তিবর্গ তার কাছে ঘৃণার পাত্র মনে হয়। সে বাতিল ঘরানার হয়েও নিজেকে হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত মনে করে। অবশেষে ঈমানহারা হয়ে জাহান্নামী হয়ে যায়।

অনুবাদ: মাওলানা উমায়ের কোববাদী নকশবন্দী

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ