বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আমাকে অনেক কথা বলেছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তানভীর সিরাজ

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থান আমার। আমার স্থলবেষ্টিতে আরকান, পর্তুগিজ আর ব্রিটিশরা রাজত্ব করেছে। তবে আমার জলে আজ পর্যন্ত কারো রাজত্ব চলেনি, চলবেও না, কারণ মানুষের ক্ষমতা চলে কেবল স্থলে, জলে নয়। পানোয়া আর পালঙ্কি আমার প্রাচীন নাম।

আমি চট্টগ্রাম বিভাগে কক্সবাজার জেলার প্রায় প্রান্তদেশে। অবিরাম চলে যাওয়া বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুময় অবস্থান আমার। আমি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। আমি পর্যটন এক শহর।

কক্সবাজার শহর থেকে বদরমোকাম পর্যন্ত একটানা প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার নিয়ে আমার বিস্তার। বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর বলেন আর সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন বলেন তাও আমাকে নিয়েই।

বিশ্বের অন্যতম এক সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেছেন, "তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি কোনো কিছুই বেহুদা ফয়দা করেন নি।

আমি চলছি আর গভীর জলে নেমেছি এবং নিত্যনতুন চিন্তাজগতে বিচরণ করছি, কে আমার ঢেউকে পাঠান? একটি ঢেউ শেষ হতে না হতে অন্যটি পাহাড় হয়ে ধেয়ে আসে! পারের কত ওপরে চড়তে পারি আমি! পর্যটক হাটে আর আমি তার পদতল ছুঁই ছুঁই।

আমি বলি- বনি আদমদের যিনি বানিয়েছেন তিনিই তো আমায় ফয়দা করেছেন। যেন তারা আমার নিত্যনতুন সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে আর ভেবে দেখে যে, আমার ভিন্ন ভিন্ন ঢেউ নিয়ে, অথচ তা একই স্থান থেকে উদ্বেগরহিত, উত্তিত, কিন্তু একটির সাথে অন্যটির কি মিল আছে? নাকি মিল করার আগেই অন্য ঢেউ ভেসে আসে?

আবার আমার প্রতিটা আওয়াজই ইলাহি যিকিরের শামিল, কারণ সামুদ্রিক আমার এ আওয়াজ মানুষ বুঝবে সে ক্ষমতা আমার রব কাউকে দেননি, তবে তাঁর ইচ্ছা ছাড়া। আমার আল্লাহ তাই বলেছেন- কিন্তু তোমরা তাদের তাসবিহপাঠ বুঝ না।

আমি অন্যের খোরাক যোগাই। প্রতিদিন কিছু ব্যক্তি আমার বুকে চষে বেড়িয়ে আপন আহারের সন্ধান খুঁজে সন্ধ্যার বিকেলে। আমার এমন এমন পাহাড়সম বেগময় ঢেউতে খোদা তাদের রিযিক রেখেছেন আর যখনই আমার চরে তারা হেঁটে হেঁটে মাছের আশায় জাল ছড়িয়ে দেয় দূরে অদূরে, তখন অবাক করা এমন পানিঘোলাতেও' আল্লাহ্ তাদের রিজিক দিয়ে দেন, কারণ তারা চেষ্টা করছে।

জিজ্ঞেস করেন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গিয়ে, জেলেদের কাছে প্রশ্ন কর, কী বলে তারা? তারা বলবে আমরা- প্রতিদিন এক থেকে দেড় কেজি বা কখনো কমবেশ পাই। বলবে তারা- ভিন্ন ভিন্ন মাছ আমরা পাই, এই সমুদ্রে, গভীর এই জলরাশিতে।

মানুষ আমার কৃতজ্ঞতা করে না। কক্সবাজার জেলা কেন, গোটা বিশ্ববাসীর জন্য আমি এক নিদর্শন। আল্লাহ্‌ বলেন-
কে আছে আমার এই নিদর্শনকে অস্বীকার করবে?

আমাকে নিয়ে চিন্তা করে কতই মানুষ পথ পেয়েছে। অন্ধকার থেকে আলোতে এসেছে। কুফুর থেকে ফিরে এনেছে। ঈমানদার হয়েছে। হে বনি আদম, আমার কৃতজ্ঞতা কর, আল্লাহর শোকর কর! দেখবে বিধাতা বিস্ময়কর আরও কিছু দেখাবেন।

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি মাধ্যম আমি। বাংলাদেশে কক্সবাজারের এ সৈকত। প্রতিবছর আমাকে নিয়ে কতই লোক ব্যবসা করে চলছে, কিন্তু তারা কি আমার কৃতজ্ঞ করেছে, নাকি অকৃতজ্ঞ হয়েছে আমার প্রতি?

আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা হল সমুদ্রসৈকতে গিয়ে আমার অসম্মান হয় এমন কাজ না করা। সময়মত বিধাতার বিধান পালনে বিলম্ব না করা। মসজিদ খুঁজে নামাজ পড়া।

আমাকে ঘিরে বেশ আনন্দ-ফূর্তি করে তারা, অথচ আমার ইজ্জতের দিকে মোটেই ভ্রুক্ষেপ করে না দেশি বিদেশি পর্যটকরা। কখনো বনভোজন-পিকনিক, কখনো শিক্ষাসফর, কখনো হানিমুন, কখনো টেনশন ফ্রির নামে আসছে তারা ঘুরে ঘুরে।

আমার চরে হেঁটে হেঁটে আমার সাথে কথা বলে বলে আমার কথামালা নিয়ে গেঁথেছে মালা, তাকে তুমি রহম কর! মাওলা!

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ