বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
খাদেম-ক্লিনার ও শিক্ষক নিয়োগ দেবে ‘গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট’ স্বাধীন দেশে অবৈধ অস্ত্রধারী সংগঠন থাকবে না: র‍্যাব মহাপরিচালক  মার্চে ৫৫২ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৬৫, আহত ১২২৮ ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ পুতিনের তেজগাঁও আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুল আমান মাদরাসায় ভর্তি শুরু আগামীকাল   ইরানের হামলার জন্য নেতানিয়াহুই দায়ী: এরদোগান ঝালকাঠিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৪, ট্রাকচালক আটক ইসরায়েলে হামলার বিষয়ে যা বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ঘুমন্ত স্বামীর গোপনাঙ্গ কেটে পালালেন স্ত্রী ইরান-ই’সরায়েল যুদ্ধের পরিস্থিতির আলোকে প্রস্তুতি নিতে মন্ত্রীদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

দুই আল্লামার শেষ সাক্ষাৎ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম

বিংশ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামিক চিন্তাবিদ, ঐতিহাসিক, লেখক আল্লামা আবুল হাসান আলি নাদভি, বিশ্ববিখ্যাত কবি, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষবিদ ও ব্যারিস্টার আল্লামা ইকবাল মরহুমের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলেন।

তিনি লিখেন আমি বিখ্যাত কবি আল্লামা ইকবাল এর সঙ্গে একটি বৈঠকে কথা বলেছি। আমাদের সাক্ষাতটি স্মরণ রাখার মত একটি সাক্ষাত ছিলো।

২২ নভেম্বর ১৯৩৭ সালে আমি আমার চাচা ও তার ছেলেকে কবি ইকবালের সাথে দেখা করতে নিয়ে গিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে কবি তার বাড়িটি বিক্রি করে ছোট পরিসরে থাকছিলেন। কবির রোগটি ছিলো মারাত্মক।

তিনি অসুস্থতা সত্ত্বেও আমাদের প্রচুর সময় দিয়েছিলেন। আমরা তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তার সঙ্গে থাকি। কবির দেখাশোনা করার লোক, আলী বক্স আমাদের কথা বলার মাঝে বহুবার এসেছিলেন। তাকে ডাক্তার কথা বলতে নিষেধ করেছেন সেটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরও তিনি আমাদের সময় দিয়েছেন কথা বলেছেন।

আল্লামা ইকবার আমাদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। বাবার বারণ সত্ত্বেও তিনি আমাদের সঙ্গে অনেক্ষণ কথা বলেছেন।

কবিতা বিষয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন

প্রাক-ইসলামি আরব কবিতার কথা বলার সময় কবি মন্তব্য করেছিলেন, তিনি তার বাস্তবতা ও প্রাণবন্ততা, চেতনা ও বীরত্ব, আত্মকথন, শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে আমি সে কবিতাগুলো পাঠ করতাম। আমার হৃদয়ে আত্মায় সে কবিতাগুলো সারাক্ষণ বাজতো। তিনি রাসুল সা. এর যোগের কিছু কবিতা আমাদের পাঠ করে শুনান।   দর্শনশাস্ত্র সম্পর্কেও তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ইসলাম তার অনুসরীদের প্রতি দৃঢ় পদক্ষেপ এবং সত্যিকারের প্রেম সমৃদ্ধ জীবন কামনা করে।  দুই শতাব্দী ধরে মুসলমানরা কবিতা ও দর্শনের ঐতিহ্যকে জীবিত রেখেছে। পররাষ্ট্রনীতি, প্রধানত হেলেনস্টিকের প্রভাব পর্যন্ত বিশ্বাস, নৈতিকতার অবস্থায় ছিলো।

আল্লামা ইকবাল আরো বলেন, ইউরোপের পুনর্জাগরণ শুধুমাত্র তখনই সম্ভব ছিল যখন এটি গ্রিক পদার্থবিদ্যা এবং শিক্ষার জোয়াল ছুঁড়ে ফেলেছিল। কিন্তু বর্তমান যুগে সমস্যা দেখা দিয়েছে সবক্ষেত্রে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপকেও গ্রাস করে ফেলেছে।

আরব মেজাজ ইসলামের পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত ছিল, কিন্তু ইসলামের সাথে হেলেনীয় চিন্তাও একই রকম ছিল, এ কারণে কখনো কখনো দেখা গেছে খ্রিস্টধর্মের লোকরা বেশির থেকে বেশি ইসলাম ধর্মের প্রভাবে প্রভাবান্বিত ছিলো।

সুফিবাদের উপরও তিনি কথা বলেছেন

সুফিবাদের বিষয়ে আল্লামা ইকবাল মুসলিম রহস্যের মতাদর্শগত অন্তঃসত্ত্বা ও কিছু মানুষের সুফিবাদী ভ্রান্ত ধারণার নিন্দা করেছিলেন। তিনি বলেন, রাসুলের সাহাবিরা যুদ্ধের ময়দানে ঘোড়দৌড় ও শহিদ হয়ে আনন্দিত হতেন। শহিদ হতো তারা মনের সুখে। সেখানে তারা তাদের আদর্শে এ দর্শন ছিলো। কিন্তু তারা বাড়াবাড়ি করেনি কখনো।

কিন্তু বর্তমান সুফিরা তাদের সুফিবাদকে আশ্চর্য এক জায়গায় অবতীর্ণ করেছে। ভারতে ইসলামের পুনরুজ্জীবনের কথা বলার সময় তিনি শেখ আহমদ, শাহ ওয়ালিয়াউল্লাহ দেহলভি, সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রশংসা করেন। কিন্তু তাদের প্রচেষ্টার কারণে ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতি ইসলামকে গ্রাস করেছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আল্লামা ইকবাল মরহুম পাকিস্তান বিষয়েও কথা বলেন, এটি লক্ষনীয় যে তার বক্তব্য ১৯৪৭ সালে তার মৃত্যুর পর বাস্তবায়িত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, কোনও মাতৃভূমি ছাড়া মানুষ তাদের বিশ্বাসকে রক্ষা করতে পারে না। তাদের সংস্কৃতিও বিকাশ করতে পারে না।

ধর্ম ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ রাজনৈতিক ক্ষমতা উপর নির্ভরশীল ছিল। সুতরাং, ভারতীয় মুসলমানদের সমস্যার একমাত্র সমাধান পাকিস্তান ছিল। তাদের অর্থনৈতিক সমস্যাসহ নানান সমস্যা তাদের দেশেশীয় সমস্যা ছিলো যা পরবর্তিতে পাকিস্তান ভাগ বিষয়ে ইতিহাস হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি জাকাত ও বায়তুলমালের ইসলামি প্রতিষ্ঠানসমূহের কথা উল্লেখ করেছিলেন।

ভারতে মুসলমানদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি আমাদের মুসলমানদের প্রচারণা ও অমুসলিমদের মধ্যে ইসলাম প্রচারের জন্য কিছু মুসলিম অধ্যক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি ধর্মীয় সংস্কার ও মুসলমানদের উত্থান, আরবি ভাষার প্রচার এবং বিশ্ব (মুসলিম) ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উপর চাপ সৃষ্টি করছেন।

মুসলমানদের প্রথম শ্রেণীর ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা তাদের পক্ষে সমর্থনের এবং তাদের কথা প্রচার করতে প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছিলেন।

উম্মতের দুর্বল নেতৃত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, দুঃখ জনক হলেও সত্য, প্রশান্ত মহাসাগরসহ বিশ্বজুড়ে মুসলিমগণ তাদের নেতৃত্ব হারাচ্ছে তাদের তাহজিব তামাদ্দুন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে।

বিদায়ের সময় তিনি আমাদের ছাড়তে চাচ্ছিলেন না। কবি কথোপকথন চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। আমরা অনুভব করলাম যে তার অসুস্থতা বেড়ে যেতে পারে। তাই আমরা তাকে আরাম করতে বলে বিদায় নিয়ে চলে আসি। এর কয়েকদিনের মধ্যে আমরা লাহোর থেকে চলে আসলাম। এর কয়েক মাস পরেই ২১ এপ্রিল ১৯৩৮ সালে তিনি ইন্তিকাল করেন। এ সাক্ষাতই আমার শেষ সাক্ষাত ছিলো।

সূত্র: দ্যা সিয়াসাত থেকে অনুবাদ

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ