বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


বিশ্বকাপ সংস্কৃতি: আমাদের অবক্ষয়ের নগ্ন রূপ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যুবায়ের ইবরাহীম

ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তানও খেলছে। তারা কেমন খেলছে জানি না। খেলা দেখি না, খোঁজ-খবর সবই সংবাদমাধ্যম ও রেডিওতে।

বাংলা-পাক-আফগান তিনটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ। বাংলার ও পাকের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থাতে ভয়াবহ বিপর্যয় চলছে। আফগান সকল দিক থেকে বিপর্যস্ত। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। একদিকে দখলদার বাহিনী ও সরকার আরেকদিকে তালেবান মুক্তিবাহিনীর লড়াই চলছে।

বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত গোটা আফগান। জাতির ও জাতীয় মুক্তির এ কঠিন, সংকট ও দূর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে আফগানিদের একটা ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যস্ত। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ পুনর্গঠন হওয়ার আগে ব্যস্ত হয়ে পড়ল অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে।

বিশ্বকাপ খেলাটা অন্তত মুসলিমদের সাথে যায় না। একটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর মুক্তির লড়াই বাদ দিয়ে ক্রিকেটের মতো একটা ফালতু খেলায় ব্যস্ত থাকা আগামীর আফগানকে বিরাট ও বিপুল সাংস্কৃতিক সংকটে ফেলবে।

জাতীয় মুক্তি বিলম্বিত হবে। জয় দীর্ঘসূত্রতা পাবে। আদৌ জয় পাবে কিনা সন্দেহ। আফগানের এই প্রজন্ম মুক্তির লড়াই থেকে বিমুখ হতে থাকবে। পরাধীনতা স্থায়িত্ব লাভ করবে। অর্থনৈতিক উন্নতি মারাত্মকভাবে হোঁচট খাবে। রাজনৈতিক পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। ফলে তালেবানের মুক্তির লড়াই ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

এরই মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সম্প্রসারণবাদের গোলামি আফগানিদের মন মগজে ঢুকে যাবে। যেমন করে বাংলাদেশের মুসলমানদের মন মগজে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সম্প্রসারণবাদে গোলামি ঢুকে গেছে।

বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের ও যুবক-যুবতীদের বিপুল একটি অংশের মন মগজে মানসিকতায় মুক্তির জোশ নেই। দেশ গোল্লায় যাক, তবুও তারা খেলা দেখবে। এভাবে খেলায় আর মেলায় তরুণ-তরুণি মেতে থাকলে সম্প্রসারণবাদের অনেক অনেক লাভ। এ ক্রিকেট খেলা আফগানিস্তানের মুক্তির লড়াইকে দীর্ঘসূত্রতায় ফেলবে। আত্মপরিচয়ে নতুন সংকট ও হীনমন্যতায় ভোগাবে।

আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ যখন ক্রিকেট খেলার মতো ফালতু বিষয়ে লিপ্ত ও মত্ত হয়ে যায়, তখন তাদের জাতীয় মুক্তির বিষয়টি বিশাল এক সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংকটের চোরাবালিতে আটকা পড়ে। ক্রিকেটের পেছনে আফগান সরকার যে পরিমাণ বরাদ্দ ও ভর্তুকি দিচ্ছে, তা দিয়ে তাদের শিক্ষার অনেক উন্নয়ন করতে পারত, এতে কোন সন্দেহ নেই।

একই কথা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশে এখনও চার কোটির অধিক মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে জীবনাতিপাত করছে। সাক্ষরতার কাঙ্খিত মান এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। দূর্নীতি গোটা দেশ ও জাতিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সেখানে এ প্রজন্ম ব্যস্ত ক্রিকেট নিয়ে।

ঘণ্টার পর ঘণ্টার খেলা দেখার প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব ফেলছে আমাদের জাতীয় জীবনে। একটা জাতির তরুণ-যুবসমাজ জাতি গঠনের মৌল কাজ বাদ দিয়ে ফালতু কাজে জড়ানো, জাতির আগামী অন্ধকার তা সহজেই অনুমান করা যায়।

খেলা দেখাকে একটা বিনোদন হিসেবে দেখা হয়। ভালো লাগা কাজ করে। এনজয় করে। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে রয়েছে ক্রিকেট খেলা। আর খেলা দেখা পাচ্ছে শিল্পের মর্যাদা। এর সাংস্কৃতিক মান নৈতিকতার পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে।

ফলে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, ছোট-বড় এককথায় সবাই মিলে আনন্দের সাথে খেলা দেখায় একটা সাংস্কৃতিক অবক্ষয় সহজেই শিল্পের ও নির্দোষ বিনোদনের মর্যাদা ও প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়ে গেছে। তাই পরিবারের সবাই মিলে খেলা দেখাকে দারুণ ভাবে এনজয় করে এবং একে দোষের কিছু মনে করে না।

এটাই ক্রিকেট বিশ্বকাপে আমাদের মানসিক দৈন্য ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের নগ্ন রূপ। জাতি হিসেবে কতটা নির্বোধ ও অথর্ব তা সহজেই অনুমেয়। বিশ্বের কয়টা দেশ বিশ্বকাপ খেলছে? তা হাতে গুণে বলা যায়। অথচ ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলছে না এমন দেশের সংখ্যা কত?

চীন জাপান যখন প্রযুক্তির পর প্রযুক্তি আবিষ্কার করছে, জীবনের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করছে, বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে বাংলা-পাক-আফগানের মতো দারিদ্রপীড়িত অনুন্নত দেশ কিভাবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকে?

একটি জাতির সাংস্কৃতিক সক্রিয়তা ও স্বকীয়তা ফুটে ওঠে তার কাজে ও চিন্তায়। আমাদের উপমহাদেশীয় মুসলিমদের সাংস্কৃতিক সক্রিয়তা ও স্বকীয়তা ফুটে ওঠছে আমাদের দৈনন্দিন যাপিত জীবনে। আমরা দিন দিন ক্ষয় হচ্ছি, ফুতুর হচ্ছি তা ফুটে ওঠছে। তাই বিশ্বকাপ ক্রিকেট মানে আমাদের সাংস্কৃতিক অবক্ষয়।

অতএব, এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। পরিবর্তন ও সংস্কার অপরিহার্য। অপরিহার্য এ কাজটা তরুণদেরই করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে জাতির যুবসমাজকে। আমাদের সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ