শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

মা-বাবার প্রতি দায়হীনতা ও আধুনিকতার সংকট

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যুবায়ের ইবরাহীম

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ কর্তৃক আপন মায়ের সাথে করা অসদাচরণ ও নির্যাতনের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

তার মায়ের সংবাদ সম্মেলন ও বক্তব্যের ভিডিও সচেতন সভ্য নাগরিক সমাজকে ব্যথিত করেছে। সন্তান হয়ে সম্পদ ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য জন্মধাত্রী মায়ের সাথে এমন আচরণ অবাক করলেও অস্বাভাবিক নয়।

তবে এ খবরে বাড়তি দৃষ্টি ও মনোযোগের কারণ হল, তুরিন আফরোজ সাধারণ কেউ নয়। উচ্চ শিক্ষিত ব্যারিস্টারি পড়ুয়া একজন আইনজীবি। সে সভ্য ও সুশীল সমাজের একজন।

অশিক্ষিত মূর্খ হীন কেউ নয়। আধুনিক শিক্ষার একটি বড় সংকট, এ শিক্ষাব্যবস্থায় মা-বাবা ও পরিবারের সাথে কেমন আচরণ ও উচ্চারণ করতে হবে তার নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। ফলে আধুনিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত একজন তুরিন আফরোজ তার গর্ভধারিণী মায়ের সাথে উত্তম ও কোমল আচরণ ও ব্যবহার করতে পারেনি।

এটি শুধু ব্যারিস্টার তুরিনের ব্যর্থতা নয়। এ ব্যর্থতা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার, জাতীয় নৈতিকতার। এ ঘটনা আধুনিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত এক তুরিনের না, এরকম ঘটনার ফিরিস্তি অনেক লম্বা।

গত বছর আমরা দেখেছি এক লোক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত অধ্যাপক বৃদ্ধাশ্রমে অনাদরে অবহেলায় মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। আরেকটি সংবাদও জাতিকে নাড়া দিতে চেয়েছিল। চার সন্তানের সবাই উচ্চশিক্ষিত ও চাকুরিজীবি। কিন্তু তাদের মা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সহায়তায় অই সন্তানদের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়। তাদের জানানো হয়।

এমন আরো বহু দৃষ্টান্ত ও ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটছে। কিন্তু কেন এমন নির্দয় আচরণ? কেন আধুনিক এই সমাজে এই নির্দয় ও নির্মম ঘটনা ঘটছে? কেন বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা দিন দিন ব্যাপক ও বিপুল হচ্ছে? আমাদের নীতি নির্ধারকগণ কী সময় করে সময় নিয়ে এসব ঘটনার আসল কারণ খোঁজবেন?

আজ আমরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি ঠিক, কিন্তু মানবিক ও নৈতিক হচ্ছি না। এ দায় কার? শুধু শিক্ষার? নীতি ও পলিসির? পরিবেশ ও সংস্কৃতির? আসলে দায় সকলের। তবে আধুনিকতা ও সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থা অন্যতম প্রধান দায়ী। আর মা-বাবাও কম কিসে।

আধুনিকতার নাম দিয়ে বড় হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সন্তানদের ঠেলে দেন। বিগত কয়েক বছর যাবৎ একটা বিষয় দেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ছেলে-মেয়ে শিক্ষিত ও যেকোনো দরকারে দেশের বাইরে থাকে। এদিকে মা বা বাবার কোন একজন হাসপাতালে। মা-বাবার কোন একজন মারা গেলেন।

সন্তানরা বিদেশে। তারা আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া কানাডা জাপান থেকে আসছে, তারপর জানাজা ও দাফন হচ্ছে। মৃত্যুর পর লাশের জায়গা হাসপাতালের হিমঘরে।

রাজধানী ঢাকায় এমন চিত্রও দেখা যায়। গ্রামের বাড়ীতে বৃদ্ধি মা-বাবা কষ্ট করছেন আর চাকুরিজীবি সন্তান ঢাকায় স্ত্রী বা মেয়েবন্ধু নিয়ে ফুর্তি করছে। তাদের দুরবস্থার কথা সন্তানরা ঢাকায় বসে শুনে। অথচ বৃদ্ধ বয়সে কে চায় না একটু আদর শ্রদ্ধা ও মমতার। মা-বাবার জন্য কোমল হওয়া।

কোমলতার সাথে সন্তানের কাছে থাকা। কে চায় না? সবাই চায় একটু কম-বেশি। মা-বাবার প্রতি এ দায়হীনতার কারণ কী? অনেকগুলোর একটি হল আধুনিকতার সংকট।

এ সংকট ভয়াবহভাবে আমাদের ক্ষতি করছে। আধুনিকতা তৈরি করছে চিন্তা ও বিশ্বাসের কৃত্রিমতা ও যান্ত্রিকতা। মানবিক মানুষ হওয়ার বদলে যান্ত্রিক মানুষে পরিণত হচ্ছি। ফলে বাড়ছে মা-বাবার প্রতি অসদাচরণ ও নির্যাতন। মা-বাবার প্রতি এ দায়হীনতা সেকুলার শিক্ষার ও আধুনিক মানসিকতার নগ্ন প্রকাশ। আমাদের সকলের শুভ চিন্তা ও বুদ্ধির উদয় হোক।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ