মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


জয় হোক মানুষের, জয় হোক কল্যাণের!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইফতেখায়রুল ইসলাম: বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করি সেই ছোটবেলা থেকেই। তখন সুবিধাবঞ্চিত ও সুবিধাভোগী এসবের পার্থক্য বুঝতাম না! শুধু মনে হতো ওদের কিছু শেখাই।

মজার বিষয় হলো আমার চেয়ে ১-২ বছরের ছোট ছেলে বা মেয়েকে আমি বাচ্চা হিসেবেই দেখেছি; হতে পারে বড় ভাই হয়ে থাকার চেষ্টায়! আমার মা বলতেন, আমি বাচ্চাদের সর্দার। আমার খেলাধুলা, বেড়ে উঠা যতটা না বড় ও সমবয়েসীদের সঙ্গে ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল ছোটদের সঙ্গে। ক্রিকেট, ফুটবল, গোল্লাছুট, বরফ পানি আরও কত কী খেলা!

বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে সাধারণ জ্ঞান, খেলাধুলার আয়োজন করে পুরস্কৃত করতাম। এজন্য আমি নিজেও অনুভব করি, বাচ্চাদের মন ও মগজ দুটোই একটু বেশি পড়তে পারার ক্ষমতা, মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে দিয়েছেন। প্রায় সব বাচ্চাই আমার খুব আপন হয়ে যায়! আমি তাদের, তারা আমার....!

ছোটবেলা থেকেই একটা স্বপ্ন মাথায় ঘুরঘুর করতো, তখন শুধু বাচ্চা আর অসহায় প্রাণীদের নিয়ে ভাবতাম। মনে হতো কিছু একটা করতে হবে। একটা সময় পরে বাবাকে হারালাম, তার প্রায় ০৭ বছর পর আমার কলিজার টুকরা মাকেও হারাই!

পেশাগত জায়গা থেকে অসহায় ভুক্তভোগীদের নিজের মা, বাবা, ভাই, বোন এই অবস্থায় থাকলে কি করতাম; সেই চিন্তা থেকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করি, করেছি। যে আমরা ভাই বোনেরা বাবা, মায়ের জন্য পাগল থাকতাম সেই আমি যখন দেখি বাবা, মাকে সন্তান উপেক্ষা করছে তখন তীব্র মনোবেদনায় ভারি হয়ে উঠে হৃদয়!

আর ঠিক এই জায়গাটি থেকে আমার স্বপ্ন বাঁক নেয় অন্য জায়গায় এসে! মনে হতে থাকে অসহায় বাবা, মায়েদের জন্য কিছু করতে হবে। পুরো স্বপ্নটি এখন দাঁড়িয়ে আছে দুঃস্থ শিশু, অসহায় মা, বাবা আর প্রাণীদের নিয়ে।

যদিও জড়িয়ে আছি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে! আমার ভালোবাসার একটি সংগঠন "মজার ইশকুল"। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকার চেষ্টা করি শুধুমাত্র শিশুদের জন্য। এদের মাঝে যে স্বর্গীয় অনুভূতি পাওয়া যায়, তা আর কোথাও মেলে না।

এতকিছু অবতারণা করছি কারণ পেশার বাইরে আমার এসব সমাজসেবামূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে আমি "এসওএস বাংলাদেশ কমিউনিটি চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডে" ভূষিত হয়েছি আরও ০৯ জন চমৎকার মানুষের সঙ্গে, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বনামধন্য! যদিও স্বীকৃতি লাভের আশায় কাজ করি না তথাপি যে কোনো স্বীকৃতি অনুপ্রেরণা দেয়! একটি স্বীকৃতি এগিয়ে চলার পথে আমাকে আরও একটু শক্তি যোগায়!

আমি আমার এই প্রাপ্তি উৎসর্গ করছি মজার ইশকুলের আমার ভালোবাসার বাচ্চাদের সঙ্গে আরও বিভিন্ন সংগঠনের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে। আর ধন্যবাদ ও ভালোবাসা আমার সহধর্মিণী আরেফিন ওসমানকে প্রতিটি মুহূর্তে আমার পাশে ঢাল হয়ে থাকবার জন্য। কৃতজ্ঞতা আমার পরিবারের সবাইকে যারা বিভিন্ন সময়ে আমার এই কাজে সহযোগিতা করেছেন মানসিক ও আর্থিকভাবে!

আমি জানি না যে বড় স্বপ্ন আমি লালন করছি তা কবে নাগাদ আলোর মুখ দেখবে তথাপি এতটুকু জানিয়ে দিতে চাই, স্বপ্ন সাকার করার সে পথে আমি প্রায় আমার অর্ধেক কাজ গুছিয়ে এনেছি আলহামদুলিল্লাহ!

শিশু, বয়স্ক নিগৃহীত মানুষ ও অসহায় প্রাণীদের জন্য একটি সুন্দর ব্যবস্থা রেখে যেতে পারলেই আমার এ জন্ম স্বার্থক! আজ অনেক বছর পর নিজের অন্তরের লালিত স্বপ্নকে উন্মোচিত করলাম!

জয় হোক মানুষের, জয় হোক কল্যাণের!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক : অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন), ওয়ারী।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ