শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


'সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি রোধে মাদরাসাগুলোতে একযোগে আইন করা যেতে পারে'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ
বিশেষ প্রতিনিধি

শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি নতুন বিষয় নয়। দিনদিন প্রযুক্তি যত সহজতর হচ্ছে, মাদরাসাগুলোতেও এর ব্যবহার সমানতালে বেড়ে চলছে। বর্তমানে ৬৬ শতাংশ মাদরাসাছাত্র ও ৫৬ শতাংশ ছাত্রী দিন-রাতের প্রায় ৩ ঘন্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করছেন। মুভ ফাউন্ডেশন নামে এক বেসরকারি একটি সংস্থার জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তিতে পড়াশুনার প্রতি তাদের মনোযোগ কমছে। পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবেও ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ আসক্তি থেকে উত্তোরণের পথ, ক্ষতিকর দিক, সুবিধা-অসুবিধাসহ সোশ্যাল মিডিয়ার নানাবিধ দিক নিয়ে দেশের অন্যতম দুইজন আলেমের পরামর্শ তুলে ধরা হলো।

শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি এবং এ পথ থেকে বের হয়ে আসার উপায় সম্পর্কে বিশিষ্ট আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা মুঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ছাত্র জীবনে আদর্শ ছাত্র হওয়ার জন্য মোবাইল ব্যবহার একটি প্রতিবন্ধক বিষয়। এর থেকে উত্তরোণে সারাদেশের মাদরাসাগুলোতে একযোগে নির্দিষ্ট একটি আইন করা যেতে পারে। কারও কাছে মোবাইল পাওয়া গেলে মাদরাসা থেকে বহিস্কার, অথবা পরামর্শ সাপেক্ষে অন্য যে কোনো আইন তৈরি করে তার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণের কথা বলে থাকেন অনেকে। ‘সমসাময়িক বিষয়ে জ্ঞান না রাখলে সে মূর্খ।’ ইফতার কিতাবে এমন একটি মূলনীতিও রয়েছে। তাহলে সোশ্যাল মিডিয়াকে উপেক্ষা করার সুযোগ কোথায়?

‘আমরা শুধু ছাত্রদের মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধ করছি। যখন সে একটা পর্যায়ে যাবে, যেমন ছাত্র থেকে শিক্ষক হবে তখন ব্যবহার করুক। অথবা মাদরাসার বন্ধের সময়গুলোতে ব্যবহার করুক। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু মাদরাসা তার নির্দিষ্ট কিছু বিষয় লেখাপড়ার জায়গা। নির্দিষ্ট বিষয়ের বাইরে জানতে চাওয়া আদর্শ ছাত্রের লক্ষণ হতে পারে না।’

মাদরাসায় মোবাইল, ট্যাব কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষতির দিকগুলো কী কী?

ক্ষতির দিক অনেক। এটাকে কোনো পরিমাণে বেঁধে দিলে হালকা হয়ে যাবে। ধরুন, ছাত্রটি সারারাত ফেসবুকে কাটিয়েছে। সকালে ক্লাসে বসে ঝিমানো শুরু করলো। সে ক্লাসে মনযোগ দিল না। পর দিন পড়াও আদায় করতে পারলো না। এতে করে সে ভালো আলেম হতে পারবে না। এরকম আরো অনেক দিক আছে।’

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার এখন জাতীয় জীবনের অন্যতম অংশ। এমন পরিস্থিতিতে তা থেকে বিরত থাকা কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আপনি মনে করছেন?

‘আমরা তো সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলছি না। তাছাড়া এসব বিষয় শুধু অপকার বয়ে আনে, কোনো উপকার করে না- বিষয়টি এমনও নয়। কেননা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াতকে মানুষের খুব কাছাকাছি পৌঁছানো যায়। ইসলাম প্রচারে একটি শক্তিশালী মাধ্যমও হতে পারে এটি। সুতরাং আমরা তো ব্যাপকভাবে নিষেধ করছি না। বরং নির্দিষ্ট করে শুধু মাদরাসার চার দেয়ালের ভিতরে এসব ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলছি। অতএব মাদরাসা শিক্ষার্থীরা সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পরে বুঝবে অভিযোগটি সঠিক নয়।’

জেনারেল শিক্ষার্থীদের অনেকেই সাইবার অপরাধে জড়িত। যেটা প্রতিদিনের পত্রিকাগুলোতে আমরা দেখতে পাই। এখন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কিভাবে সাইবার আক্রমণ থেকে নিজেদের ও ইসলামের হেফাজত করতে পারে?

‘আমরা একটা সন্তান যখন মাদরাসায় থাকে। তখন উস্তাদের নেগরানিতে থাকে। সুতরাং তখন সে সাইবার অপরাধ থেকে বিরত থাকবে। আর যখন বাসায় থাকবে তখন সে বাবা মায়ের নেগরানিতে থাকবে। সেখানেও সাইবার অপরাধ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি এর ভয়াবহ আক্রমণ থেকে হেফাজতে থাকবে।’

এ ব্যাপারে লালবাগ মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া আজকাল ভাইরাসের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়েছে। বিষের মতো দেখা দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার। বর্তমান যুগ হিসেবে সেগুলোর প্রয়োজন যদিও অনেক, কিন্তু এর অপব্যবহার রোধও জরুরি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উত্তরোনের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেয়া যেতে পারে। আপনি দেখবেন আমাদের দেশের অফিস আদালতেও অফিস সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিষিদ্ধ। তাই নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দিলে মাদরাসার ছাত্ররা এর আসক্তি থেকে মুক্তি পাবে বলে আমি মনে করি।

বর্তমান আধুনিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া উপেক্ষা করে চলাটা কতটা যুক্তিযুক্ত?

‘বিরত থাকার কথাও বলছি না আমরা। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর সে সোশ্যাল মিডায়া ব্যবহার করে ইসলামের সেবায় এগিয়ে আসুক সেটা আমরাও চাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি। তবে সেটা ছাত্র থাকাকালীন সময়ে করা হয়নি। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ক্যান্সারে রুপ নিয়েছে। এই ক্যান্সারজনিত সমস্যা থেকে বিরত থাকার কথা বলছি আমরা।’

জেনারেল শিক্ষার্থীদের অনেকেই সাইবার অপরাধে জড়িত। যেটা প্রতিদিনের পত্রিকাগুলোতে আমরা দেখতে পাই। এখন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কিভাবে সাইবার আক্রমণ থেকে নিজেদের ও ইসলামের হেফাজত করতে পারে? এ ব্যাপারে আপনি কি পরামর্শ দিবেন?

‘অপরাধীরা সব জায়গায়ই অপরাধ করে। এখন তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরাধ করে। সোশ্যাল মিডিয়ার পূর্বেও তারা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় অপরাধ করতো।

অতএব, সাইবার অপরাধ বা সাইবার আক্রমণ করে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদঘার করছে। তাদের থেকে আমাদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এবং আমাদের জায়গা থেকে যথাযথভাবে তার সমুচিত জবাব দিতে হবে।’

আরএম/


সম্পর্কিত খবর