শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


'কল্লা কাটা' গুজব ও কুসংস্কার রোধে আলেমদের পরামর্শ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ
বিশেষ প্রতিবেদক

সম্প্রতি পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি গুজব সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন বয়সী মানুষ অপহৃত হচ্ছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়ায় কিছু এলাকায় মানুষের মধ্যে ভিত্তিহীন আতঙ্ক তৈরি হয় বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবরও বের হয়। তবে এই গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

গুজবটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন জানিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি এ বিষয়ে ইসলাম বিষয়ক স্কলররাও সরব হয়েছেন এমন ভিত্তিহীন তথ্যের বিরুদ্ধে। ‘ব্রিজ নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ এমন আকিদা পোষণ করাকে বিদআত বা সামাজিক কুসংস্কার বললেন তারা।

রাজধানীর শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও দেশের অন্যতম ফকিহ মুফতি মিজানুর রহমান রহমান সাঈদ বলেন, “ব্রিজ নির্মাণ করতে মানুষের মাথা লাগবে। ইসলামে এমন কুসংস্কারের কোনো ভিত্তি নেই। ইসলাম একটি সার্বজনীন ধর্ম। এখানে মানুষের জন্য যা কিছু কল্যাণ, শুধু সেটুকু বলা আছে।”

ইসলামপূর্ব যুগেও অনেক কুসংস্কারের রেওয়াজ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইসলাম আসার পূর্বে কন্যা সন্তানকে অভিশাপ মনে করা হত। ইসলাম এসে কন্যা সন্তানে মঙ্গলের কথা ঘোষণা করেছে। এমনিভাবে খলিফা হজরত ওমর রাযি.-এর যুগে একবার হজরত সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাসকে মিশরের গভর্ণর করে প্রেরণ করা হল। সেখানের ফুরাত নদীতে বছরে দুই মাস জুন ও জুলাইতে পানি থাকত না। সাধারণ মানুষের মধ্যে রেওয়াজ ছিল, জুলাই মাসে কোনো একজন সুন্দরী তরুণীর গলা কেটে রক্ত দিলে পানি আসত। মিশরের গভর্ণর সা'দ রাযি হজরত ওমরের কাছে এ বিষয়ে চিঠি লিখলে ফিরতি চিঠিতে তিনি লিখেন, ‘হে নদী! তুমিও আল্লাহর মাখলুক। আমিও আল্লাহর মাখলুক। তুমি যদি আল্লাহর হুকুমে চলো। তাহলে পানি প্রবাহিত কর, তাঁর হুকুমে না চললে জারি হয়ো না।”

“ইতিহাস সাক্ষী হজরত ওমরের এ চিঠি নদীর শুকনো মাটিতে রাখতে দেরি হয়েছিল কিন্তু নদী থেকে পানি বের হতে দেরি হয়নি। সুতরাং, ইসলাম এসে মানুষের জীবনকে রক্ষা করেছে। প্রচলিত কুসংস্কারকে দূর করেছে। মানুষের মনের ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে।”

এ পর্যায়ে মুফতি মিযানুর রহমান বলেন, “বর্তমান আধুনিকযুগে এসে চৌদ্দশ বছরের পূর্বের কুসংস্কারকে মানুষ কিভাবে বিশ্বাস করে বিষয়টি আমার বুঝে আসছে না। ব্রিজ নির্মাণে মাথা লাগার মতো কোনো কথা আধুনিক বিজ্ঞানও সাপোর্ট করে না। আর শরিয়ত তো এসব বিষয়কে মোটেও প্রশ্রয় দেয় না।”

একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রাখলেই সমাজ থেকে এ ধরণের গুজব ও কুসংস্কার দূর হতে পারে বলে মনে করেন রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল ও উত্তরা বায়তুন নূর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান।

তিনি বলেন, “আমরা মুসলমান। আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমাদের মহান স্রষ্টা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসই পারে এসব গুজবের হাত থেকে রক্ষা করতে। কেননা একজন পূর্ণাঙ্গ মুমিন কখনো এটা বিশ্বাস করবে না যে, ব্রিজের জন্য আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের মাথা বা রক্ত লাগবে। বিষয়টি খুবই অবিশ্বাস্য! এই আধুনিক যুগেও এসব বিষয়ে মানুষের বিশ্বাস রীতিমতো বিস্ময়কর!”

“এসব ব্যাপারে সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য আলেম-ওলামাদের দীন ইসলামের সঠিক শিক্ষা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। ইসলামের সঠিক ম্যাসেজ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। তাহলে এ জাতীয় কুসংস্কার রোধ করা যাবে। সাধারণ মানুষও এসব কুসংস্কার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।” বললেন মাওলানা নাজমুল হাসান।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ