শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


নতুন গিলাফে এ বছরের হজের জন্য প্রস্তুত কাবা শরিফ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম ♦

এ বছরের হজের জন্য কাবা শরিফ পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। কাবা শরিফের গিলাফের দায়িত্বে থাকা রিয়াসাহ আল হারামাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আরব নিউজের বরাতে জানা যায়, আজ শুক্রবার পবিত্র কাবার চারপাশে আবৃত কালো গিলাফ নতুন বছরের হজের জন্য প্রস্তুত করতে কাবা শরিফ ৩মিটার পর্যন্ত উন্মচিত করা হয়েছে। সাদা কাপড় দিয়ে আবৃত করে তাতে নতুন গিলাফ পরিধান করানো হয়েছে।

হজ মৌসুমের পূর্বে প্রতি বছর কিসওয়া বা কাবার গিলাফ পাল্টানো হয়। গিলাফ পাল্টানোর কারণ, কিছু হাজি কাবা তাওয়াফ কালে গিলাফ ধরে টানতে থাকে। এতে গিলাফ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই প্রতিবছর এ গিলাফ পরিবর্তন করা হয়।

দুই পবিত্র মসজিদের দায়িত্বশীল আহমদ বিন মুহাম্মদ আল-মনসুরী জানান, এ গিলাফ নির্মাণ ও টানানোর জন্য প্রায় ৫০ জন প্রযুক্তিবিদ ও বিশেষজ্ঞ তত্ত্বাবধান করেন।

তিনি আরো বলেন, অনেকের ভুল ধারণা থেকে কাবার গিলাফ ছিড়ে নিয়ে যায়, এজন্য গিলাফ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়। তাই আমরা প্রতি হজের মৌসুমের পূর্বে এটি পরিবর্তণ করি।

আল-মনসুরী আরো বলেন, হজ মৌসুম শেষ হওয়ার পর মূল গিলাফ আবারো খুলে দেয়া হবে।

সূত্র: আরব নিউজ

কাবার গিলাফ

কাবা শরীফের গিলাফ একটি বস্ত্রখণ্ড যা দ্বারা কাবাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। বর্তমানে গিলাফ কালো রেশমী কাপড় নির্মিত, যার ওপর স্বর্ণ দিয়ে লেখা থাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ’, ‘আল্লাহু জাল্লে জালালুহু’, ‘সুবহানাল্লাহু ওয়া বেহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিম’ এবং ‘ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান’। ১৪ মিটার দীর্ঘ এবং ৯৫ সেমি প্রস্থবিশিষ্ট ৪১ খণ্ড বস্ত্রখণ্ড জোড়া দিয়ে গিলাফ তৈরি করা হয়।

চার কোণায় সুরা ইখলাস স্বর্ণসূত্রে বৃত্তাকারে উৎকীর্ণ করা হয়। রেশমী কাপড়টির নিচে মোটা সাধারণ কাপড়ের লাইনিং থাকে। একটি গিলাফে ব্যবহৃত রেশমী কাপড়ের ওজন ৬৭০ কিলোগ্রাম এবং স্বর্ণের ওজন ১৫ কিলোগ্রাম। বর্তমানে এটি তৈরীতে ১৭ মিলিয়ন সৌদী রিয়াল ব্যয় হয়।

গিলাফের ইতিহাস যেখান থেকে শুরু
কাবা শরীফকে গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন কখন বা কার উদ্যোগে শুরু হয় সে সম্পর্কে মতভেদ আছে। একটি ঐতিহাসিক সূত্রানুযায়ী নবী হযরত ইসমাঈল আ. প্রথম পবিত্র কাবা শরীফকে গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন করেন।

ভিন্ন আরেকটি বর্ণনায় আছে যে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর পূর্ব পুরুষ আদনান ইবনে আইদ পবিত্র কাবা শরীফকে প্রথম গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদিত করেন। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুসারে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদই সম্ভবতঃ পবিত্র কাবা শরীফ গিলাফ আচ্ছাদনকারী প্রথম ব্যক্তি।

ইসলামের শেষ নবি হযরত মুহাম্মদ সা. এর ইয়াসরিব শহরে (অর্থাৎ, মদিনা শহর) হিজরতের ২২০ বৎসর আগে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদ এই শহরটিতে (ইয়াসরিব) আক্রমণ করেন। তুব্বা আবু কবর আসাদ ইয়াসরিব ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় মক্কায় গিয়ে কাবা শরীফ তাওয়াফ করত: মাথা মুণ্ডন করেন।

তিনি এই শহরে কয়েকদিন অবস্থান করেন। মক্কায় অবস্থানকালে তিনি ঘুমের মধ্যে একদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি কাবা শরীফ গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন করছেন।

এ স্বপ্ন দ্বারা প্রাণিত হয়ে অবিলম্বে খাসাপ দ্বারা কাবাঘরটি আচ্ছাদিত করেন। খাসাপ হচ্ছে তালগাছ জাতীয় গাছের পাতা ও আঁশের তৈরি এক ধরনের মোটা কাপড়। অনন্তর তিনি আবার স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি আরো উন্নতমানের কাপড় দ্বারা কাবা শরীফ আচ্ছাদন করছেন।

তিনি খাসাপের পরিবর্তে মামিজিয়ান, পাপিরাস (মিশর দেশীয় নলখাগড়া বিশেষ পাতা) দ্বারা কাবা ঘর আচ্ছাদন করেন। ইয়েমেনের মামিজ নামক একটি উপজাতীয় গোত্র এই কাপড় তৈরি করতো। এরপরও তৃতীয়বারের মতো তিনি স্বপ্নে আরো উন্নত মানের কাপড় দ্বারা কাবা আচ্ছাদনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তৃতীয় দফা স্বপ্নটির পর তিনি ইয়েমেনের লাল ডোরাকাটা কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবা ঢেকে দিয়েছিলেন।

তুব্বা আবু কবর-এর রীতি অনুযায়ী মক্কার স্থানীয় লোকজন সুন্দর কাপড় বা গিলাফ দিয়ে পবিত্র কাবাঘর আচ্ছাদন করতে থাকে এবং তা নিয়মিত প্রথায় পরিণত হয়। বর্তমানে দামী কালো রং সিল্কের কাপড়ের তৈরি স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি মোটা গিলাফ দিয়ে কাবা শরীফ আচ্ছাদন করা হয়। কাপড়টি কিসওয়াহ নামে আখ্যায়িত।

আব্বাসীয় খলিফা আল আব্বাস আল মাহদী ১৬০ হিজরীতে পবিত্র হজ পালনকালে পবিত্র কাবা থেকে একটি ছাড়া সবগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এখনো এই ধারাই অব্যাহত রয়েছে। ৭ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের আগে মুহম্মদ সা. গিলাফ পরানো শুরু করেননি।

গিলাফ পরানোর সংস্কৃতি অব্যাহত থাকে। বাদশাহ বাইবার্স হচ্ছেন পবিত্র কাবায় গিলাফ পরিয়ে দেয়া প্রথম মিশরীয় শাসক। তারপর ইয়েমেনের বাদশা আল মুদাফফার ৬৫৯ হি. কাবা শরীফে গিলাফ পরান। পরবর্তীতে মিসরের শাসকরা পর্যায়ক্রমে এ কাজ অব্যাহত রাখেন।

বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদ মক্কা-মদীনার দুই পবিত্র মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১৩৪৬ হিজরিতে কাবা শরীফের গিলাফ তৈরির জন্য একটি বিশেষ কারখানা স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন। একই বৎসর মাঝামাঝি সময়ে প্রয়োজনীয় কাপড় তৈরি করে মক্কার দক্ষ শিল্পীর মাধ্যমে তা সুন্দর নকশায় সুসজ্জিত করে কাবা শরীফ আচ্ছাদিত করা হয়। ১৩৫৭ হিজরী পর্যন্ত এই কারখানাটি গিলাফ বা কিসওয়াহ তৈরি অব্যাহত রাখে।

পরবর্তীতে ১৩৮১ হিজরীতে সৌদি হজ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দক্ষ সৌদি কারিগর দ্বারা রেশমী ও সোনালী সুতা দিয়ে গিলাফ তৈরি করে কাবার গায়ে পরিধানের ব্যবস্থা করা হয়।

১৩৮২ হিজরীতে বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আব্দুল আজিজ নতুন ডিক্রিজারির মাধ্যমে নতুন করে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। খাঁটি প্রাকৃতিক রেশমী রং এর সাথে কালো রং-এর কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে কুরআনের কিছু আয়াত শোভা পায়। অক্ষরগুলো সোনালী আভায় উদ্ভাসিত স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ।

প্রতি বৎসর হজের ঠিক আগে কাবা শরীফের গিলাফ সরিয়ে তা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। হাজীদের ইহরামের শ্বেতশুভ্রতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই সাদা গিলাফ পরানো হয়।

হজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১০ জিলহজ্জ তারিখে নতুন গিলাফ পরানো হয়। প্রতিস্থাপতি গিলাফটি খণ্ড খণ্ড করে বিলিয়ে দেয়া হয়। সূত্র: উইকিপিডিয়া

-এটি


সম্পর্কিত খবর