শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


মক্তব শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সম্মিলিত উদ্যোগ চান আল্লামা আনোয়ার শাহ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ। কিশোরগঞ্জ জামিয়া এমদাদিয়া মাদরাসার মুহতামিম ও কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ অথরিটি আল হাইয়াতুল উলইয়ার অন্যতম সদস্য। শিক্ষকতা পেশায় জীবনের দীর্ঘ একটা সময় ব্যয় করেছেন বিশিষ্ট এ আলেম। আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের মক্তবশিক্ষার সূচনাকাল, মক্তবশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলেন তিনি। আলাপচারিতায় ছিলেন মোস্তফা ওয়াদুদ।


বাংলাদেশে মক্তব শিক্ষার সূচনাকাল সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি?

মক্তব শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমেই এ দেশে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার সূচনা হয়েছে। দেশভাগের পূর্বে পূর্ব-পাকিস্তান আমলে এ দেশে বোগদাদী কায়দা পড়ানো হত সকালের মক্তবগুলোতে। মক্তবে কোমলমতি শিশুদের নামাজের প্রাথমিক সুরা, নিয়মকানুন ও দৈনন্দিন মাসনূন দোয়া শেখানো হত।

'বোগদাদী কায়দা'র মাধ্যমে এ দেশে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সকালের মক্তব ব্যবস্থা চলে আসছিল। বেগদাদী কায়দার প্রচ্ছদ কালার ছিলো লাল রঙ্গের। এটিতে সহিহভাবে কুরআন ও নামাজে প্রয়োজনীয় সুরা, তাশাহুদ, দরুদ শরীফ, দোয়ায়ে মাছুরা ও দোয়ায়ে কুনুত শেখানো হত।

এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার 'মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব সাহেব' উদ্ভাবন করেন 'নাদিয়াতুল কুরআন' পদ্ধতি। এটিও দীর্ঘদিন পর্যন্ত চালু ছিল। তারপর নাদিয়াতুল কুরআন শুধু কুরআন শুদ্ধ করে পড়া যায় এভাবে রচনা করা হল। গত কয়েকবছর ধরে অবশ্য ক্বারী বেলায়েত সাহেব রহ. প্রণীত 'নূরানী কায়দা' দেশের মক্তবগুলোতে পঠিত হচ্ছে।

দেশে ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলোতে নূরানী পদ্ধতির ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়। এ কায়দার বৈশিষ্ট সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

নূরানী কায়দার বৈশিষ্ট হল- এ পদ্ধতিতে কুরআন শরিফ শুদ্ধ শেখানোর পাশাপাশি শিশুদের প্রাথমিক বাংলা, অংক ও ইংরেজি যোগ করা হয়েছে। যা সকালের মক্তবের চেয়ে দেশের নূরানী মাদরাসাগুলোতে বেশি পঠিত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আমি আমাদের নিজস্ব একটি বোর্ডের চিত্র আপনাকে জানাতে চাই। সেটি হলো, আমাদের 'তানজিমুল মাদারিস' নামে একটি বোর্ড রয়েছে। যেখানে নূরানী বিভাগে সহিহভাবে কুরআন শেখার পাশাপশি প্রাথমিক অক্ষরজ্ঞান শিখিয়ে দেয়া হয়। যা শিশু বাচ্চাদের মানসিক বুদ্ধি বিকাশে বেশ সহায়ক হচ্ছে।

বর্তমানে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী মক্তবশিক্ষার পাঠদান পদ্ধতিতে কোন পরিবর্তন আনা প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কি?

বর্তমানে মক্তবে যেভাবে পাঠদান হচ্ছে এ সিস্টেমকে পরিবর্তন করলে ততো বেশি ফলপ্রুসু হবে বলে মনে হয় না। তবে পড়ানোর মান আরো বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। নতুন কোনো পদ্ধতি উদ্ভাবন না করে শিক্ষাব্যবস্থাটি আরো শৃঙ্খলাবদ্ধ করা দরকার।

আপনার দৃষ্টিতে মক্তবকেন্দ্রিক মাদরাসারগুলোর ব্যবস্থাপনাগত কোন ত্রুটি রয়েছে কি?

দেশে অনিয়ন্ত্রিত ও লাগামহীনভাবে মক্তব গড়ে উঠছে। এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক হওয়া জরুরি বলে মনে করি। যত্রতত্র মক্তব গড়ে ওঠার পক্ষে আমি নই। আমি দীর্ঘদিন থেকে এসব ব্যাপারে কথা বলে আসছি। কিন্তু একা বললে এসব কথা কে শোনে? তাই দেশে মক্তব প্রতিষ্ঠার নির্দিষ্ট কোনো কাঠামোও তৈরি হয়নি, লাগামহীনভাবে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক মক্তব প্রতিষ্ঠাও বন্ধ হয়নি।

মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য কওমি মাদরাসা ভিত্তিক শিক্ষাবোর্ডগুলো থেকে নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন কি?

অবশ্যই, মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য কওমি মাদরাসা ভিত্তিক শিক্ষাবোর্ডগুলো নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করতে পারে। এটা শুধু পড়াশোনার মানোন্নায়নের জন্য জরুরি এমনটা নয়, বরং সময়ে সময়ে গঠিত অঘটন থেকেও মুক্তি মিলবে এর দ্বারা। একটি বোর্ডের তদারকি ও বোর্ডের কাছে জবাবদিহিতার তাগিদে হলেও অঘটন থেকে রক্ষা পাবে।

মক্তবের শিশুদের সঙ্গে শিক্ষকদের আচরণ , পাঠদান পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত বা কীভাবে পড়ালে তারা বেশি উপকৃত হবে বলে মনে করছেন?

অবশ্যই আদর-সোহাগ দিয়ে বাচ্চাদের মন জয় করে পড়াতে হবে। যারা ভালো করে পড়বে তাদের উৎসাহ দেয়ার নিমিত্তে বিভিন্ন সময় চকলেট, বিস্কুট, চানাচুর, কলা বা অন্যান্য লোভনীয় খাবার দিয়ে চাঙ্গা রাখতে হবে। তারা আনন্দ পায় এমন কাজ বেশি করতে হবে। আনন্দময়ী পরিবেশ জারি রাখতে হবে।

বাচ্চাদের সামনে কখনো খারাপ আচরণ করা যাবে না। কটু কথা, খারাপ গালি, অসৎ ব্যবহার করা যাবে না। পড়া না পড়লে বাচ্চাদের মারপিট করা যাবে না।

বাচ্চাদের চাহিদানুপাতে খেলার ব্যবস্থা করতে পারলে আরও ভালো হবে। আছরের পর থেকে বাচ্চারা খেলবে। এটা তাদের চিত্ত ও মননকে বেশ তেজোদীপ্ত করে তুলবে। পড়ার সময় তাকে পড়ায় মনোযোগী করে তুলবে। যদি সে পড়ার পাশাপশি খেলাধূলার সুযোগ না পায় তাহলে পড়ার সময় পড়বে। অন্যথায়, পড়ার সময় বাচ্চারা মনোযোগ হারাকে এবং দুষ্টামি করবে।

সাম্প্রতিক মাদরাসাগুলোতে শিশুদের ওপর অমানষিক নির্যাতনের কয়েকটি চিত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, কীভাবে এ সমস্যা থেকে উত্তরোণ সম্ভব বলে মনে করেন?

মাদরাসাগুলোত কোমলমতি শিশুদের সাথে অসদাচরণসহ গঠিত নানারকমের অঘটনের চিত্র আমার সামনে আসছে। এসবের প্রধান কারণ জবাবদিহিতা না থাকা। লাগামহীন, অনিয়ন্ত্রিত মক্তব গড়ে ওঠা। আপনি দেখুন, আজ অনিয়ন্ত্রের কারণে দেশের মহিলা মাদরাসাগুলোর কি অবস্থা? বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কীসব বাজে সংবাদ ভেসে বেড়াচ্ছে। আমার একার বলার দ্বারা তো আর এসব বন্ধ হবে না, এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ