বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


'অনেক প্রতিকূল পরিবেশে আমরা বাংলা চর্চা করেছি'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন । । 

আমি লেখালেখিতে আসার প্রেরণাটা ঠিক কোথায় থেকে পেয়েছি সেটা এই মুহূর্তে মনে করা কঠিন। তবে যখন একদম প্রাইমারি স্কুলে পড়ি তখন বিভিন্ন ছড়া-কবিতা পাঠ্যবইয়ে যা পড়তাম খাতায় সেই ছড়া বা কবিতাটি না লিখে নিজের মতো করে আরেকটি লিখতাম। এমন একটি বিষয় আমার মধ্যে ছিল। বন্ধুরা দেখে বিস্মিত হতো, বলতো এটা কই পাইলে, এটা তো বইয়ে নেই। মূলত সেটা এমন কোনো কাল ছিল না যখন জীবিত মানুষেরা লেখে এবং সেটা বই হয়।

পরে যখন ফরিদাবাদ মাদরাসায় পড়ি তখন লাজনাতু তোলাবার সন্ধান পাই আমার দুই সিনিয়র ভাইয়ের কাছ থেকে। তাদের একজন মাওলানা তৈয়ব সাহেব। তিনি আরজাবাদ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শামসুদ্দিন কাসেমি সাহেবের বড় মেয়ের জামাতা। আরেকজন মাওলানা আবদুর রহিম সাহেব, এখন জামিয়া ইকরার শিক্ষক।

তারা দুজন একদিন আমাকে বোঝালেন, আমরা উর্দুতে লেখাপড়া করি। কিন্তু বাংলাটা আমাদের জানা দরকার। বাংলা না জানলে এদেশের মানুষের কাছে ইসলাম যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারবো না। তারা আমাকে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে বিষয়টি বোঝান। আমার কাছেও বিষয়টি সহজ ও যৌক্তিক মনে হয়েছে।

তারা বললেন, লাজনাতুত তোলাবা নামে একটি সংগঠন আছে, এই সংগঠনটি আগামী দিনে কর্মজীবনে গিয়ে কীভাবে সমাজের নেতৃত্ব দিতে হবে এ ব্যাপারে কাজ করে। ওই সময়ে লাজনাতুত তোলাবার স্লোগান ছিল ‘তোমাকেই নিতে হবে আগামীর পৃথিবীর ভার’।

আর আগামীর পৃথিবীর ভার নিতে হলে আগামীর পৃথিবীটাকে বুঝতে হবে। আর এর জন্য শুধু পাঠ্য কিতাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। পড়াশোনা বাড়াতে হবে। আর যে ব্যক্তি ও যে দেশের মানুষ ওই দেশের ভাষাটা তাকে ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। মূলত লাজনাতুত তোলাবার মাধ্যমেই আমি নতুন করে বাংলায় আসি।

আপনাদের ছাত্রাবস্থায় লেখালেখির পরিবেশটা ছিল পাষাণ। ফরিদাবাদে আমাদের একটু আগের মানুষ হলেন মাওলানা আবুল ফাতাহ ইয়াহইয়া সাহেব। তাঁর কাছে একবার একটি বাংলা বই পাওয়া গেল। এই বইটি কী বিষয়ের সেটা জানার আগেই উস্তাদদের কেউ বলেছেন, সে কমিউনিস্ট পার্টি করে, কেউ বলেছেন শিবির করে। তিনি একটু ‘মুখা’ মানুষ ছিলেন।

তিনি বললেন, আপনাদের কী কারণে মনে হলো আমি কমিউনিস্ট পার্টি করি বা শিবির করি! এই বাংলা বই পাওয়ার কারণে তিনি বহিষ্কার হওয়ার উপক্রম হয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছেন।

তখন মাদরাসায় বাইরের বইপত্র পড়ার কোনো পরিবেশই ছিল না। আমরা আসরের নামাজের পর চলে যেতাম সদরঘাটে। সেখানে ফুটপাতে ঘুরে ঘুরে বই কিনতাম। তখন এতো প্রকাশনী ছিল না। এজন্য আজেবাজে বইপত্র ছাপা হতো কম। আমরা ভালো ভালো বই কিনতাম।

কিন্তু এসব বই নিয়ে প্রকাশ্যে মাদরাসায় ঢোকা যেত না। এজন্য বইগুলো লুকিয়ে মাদরাসায় ঢুকতাম এবং কোথাও গোপনে রাখতাম। রাতে পড়াশোনা-তাকরার শেষে সবাই যখন শুয়ে যেত তখন এই ‘আধ্যাত্মিক’ জিনিসগুলো নিয়ে বসতাম। অনেক সময় এমন হতো এসব বইপত্র পড়তে পড়তে ফজর হয়ে যেত। এভাবে আমরা অনেক প্রতিকূল পরিবেশে বাংলা চর্চা করেছি।

[লেখা ও লেখকের কথা নিয়ে প্রকাশিত লেখকপত্রের সৌজন্যে। জুলাই ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন: জহির উদ্দিন বাবর]

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ