শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


কাশ্মিরে '৩৭০ ধারা' বাতিলের আশঙ্কা, ছড়িয়ে পড়ছে উত্তেজনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ: ভারত শাসিত কাশ্মিরে কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ করে অতিরিক্ত দশ হাজার সেনা মোতায়েন শুরু করার পর গোটা উপত্যকা জুড়ে তীব্র আতঙ্ক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

সরকার যদিও একে রুটিন সেনা মোতায়েন বলেই দাবি করছে। তবে পর্যবেক্ষকরা অনেকেই ধারণা করছেন ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের চেষ্টা হলে কাশ্মীর উপত্যকায় যে অস্থিরতা সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে তার মোকাবিলাতেই সেখানে বাড়তি সেনা নিয়ে আসা হচ্ছে।

ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি বরাবরই কঠোর কাশ্মীর-নীতির পক্ষে। সেই নীতি কেমন, তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরপরই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ। তিনি স্পষ্টভাবেই জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার এবং ৩৫(ক) ধারা বাতিল করতে চান। এটি বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।

৩৭০ ও ৩৫(ক) ধারা বাতিল করলে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইতিমধ্যেই কাশ্মিরে মেহবুবা মুফতি বা শাহ ফয়সলের মতো রাজনীতিবিদরা এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন। কাশ্মির থেকে দলে দলে পর্যটকরা ফিরে আসছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’র (পিডিপি) নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে উপত্যকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো অভাব নেই। রাজনৈতিক সমস্যা সেনাবাহিনী দিয়ে সমাধান করা যাবে না।

তিনি দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ৩৫-এ ধারা নিয়ে গরমিল করা হলে; তা রাজ্যে আগুন জ্বালানোর মতো হবে।

হুররিয়াত কনফারেন্স চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ উমর ফারুক বলেছেন, 'কাশ্মীর অতিরিক্ত সামরিকায়নে ভারাক্রান্ত। এ অঞ্চলকে অসামরিকীকরণের বদলে কেন্দ্র আরও সেনা মোতায়েন করছে। কেন্দ্র হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল, আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।'

জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্টের প্রধান ও সাবেক আমলা শাহ ফয়সল যেমন বলছিলেন, "এই বাড়তি সেনা মোতায়েনের নির্দেশে গোটা কাশ্মির কিন্তু উদ্বিগ্ন! একেবারে নজিরবিহীন, খুব সাংঘাতিক খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে ভেবে তারা শঙ্কিত। সরকারের এখন উচিত মানুষকে সব কিছু খোলাসা করে বলা, পরিষ্কার করে জানানো যে ৩৭০ ধারা বা আর্টিকল ৩৫-এ বিলোপ ঘটতে যাচ্ছে কি না।”

এছাড়া কাশ্মীরের অন্যান্য রাজনৈতিক দলও হঠাৎ বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা কি এবং কেন?

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা জম্মু ও কাশ্মীরকে আলাদা পতাকা ও সংবিধান দিয়েছে। বিজেপি মনে করে, এটি দেশের অখণ্ডতার স্বার্থের পরিপন্থি।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অঙ্গ ছিল না৷ ছিল মহারাজা হরি সিং-এর স্বাধীন রাজতন্ত্র৷ কিন্তু ১৯৪৭ সালের ২২শে অক্টোবর পাকিস্তানি উপজাতি হানাদার বাহিনী কাশ্মীর আক্রমণ করলে, উপয়ান্তর না দেখে রাজা হরি সিং ভারতের কাছে সেনা সাহায্য চান ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন’, অর্থাৎ ভারতভুক্তির শর্তে৷ তাতে জম্মু-কাশ্মীরকে ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা দেবার সংস্থান রাখা হয়৷

এরপর ১৯৫০ সালে জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নেহেরু মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে দক্ষিণপন্থি প্রজা পরিষদ গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন এর বিরুদ্ধে৷ তাঁদের দাবি ছিল, এক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে আরেকটা প্রজাতন্ত্র থাকতে পারে না৷

রাজ্যের শেখ আবদুল্লা সরকার শ্যামাপ্রসাদকে গ্রেপ্তার করে জেলবন্দি করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি নাকি বিনা পার্মিটে রাজ্যে ঢুকেছেন৷ সে সময়ে বিনা পারমিটে কাশ্মীরে ঢোকা যেত না৷ পরবর্তীতে জেলে বন্দি অবস্থায় মারা যান ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ