শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


আলেমের প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধার অনন্য নিদর্শন মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী জাদুঘর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বেলায়েত হুসাইন: মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহ. এর জন্মস্থান আফগানিস্তান হলেও সেখানে বসবাস করতে পারেননি তারা। মঙ্গোলীয়দের উপর্যুপরি আক্রমণের ফলে একসময় তার জন্মস্থান বসবাসের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়ে।

এদিকে তৎকালীন সেলজুক সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং ভক্তি করতেন। এ নাজুক পরিস্থিতিতে তিনি মাওলানাকে এ মর্মে সেলজুক রাজধানী কোনিয়াতে আগমনের আমন্ত্রণ জানান, যেন মাওলানা রুমী রহ. তার বাকি জীবন সেখানেই নিরাপত্তার সাথে অতিবাহিত করেন। সুলতানের আমন্ত্রণে মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহ. তুর্কি শহর কোনিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেখানেই স্থায়ী হন।

১২৩১ সালের ১২ জুন মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহ. এর পিতা বাহাউদ্দীন ওলাদের ইন্তেকাল হয়। এসময় সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ নিজের সবচেয়ে প্রিয় বাহারি ফুলে শোভিত চমৎকার একটি বাগান মাওলানা রুমী রহ.কে প্রদান করেন পিতাকে দাফন করার জন্য। আর সবুজে ঘেরা এ বাগানেই তিনি তার পিতার সমাধিকার্য সম্পন্ন করেন।

পরবর্তীতে ১২৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর মাওলানা রুমী রহ. ইন্তেকাল করলে তাকেও সমাহিত করা হয় পিতার সন্নিকটে সেই ফুলবাগানেই । অতঃপর, হিসামুদ্দীন জালবী নামের মাওলানা রুমী রহ. এর একজন শাগরিদ প্রিয় মুরশিদের সমাধিকে কেন্দ্র করে একটি স্মৃতিস্থাপনা নির্মানের ইচ্ছার কথা জানান।

এরই প্রেক্ষিতে ১২৭৪ সালে সেলজুক আমির সুলেমান ব্রাউনাহর স্ত্রী গুরজু খাতুন ও আরেক আমির ইলমুদ্দীন কায়সারের অর্থায়নে মাওলানা রুমী রহ. এর সমাধিকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় স্থাপত্যশিল্পের দারুণ এক স্মৃতিস্থাপনা 'মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী স্মৃতিস্তম্ভ',যা চারটি লম্বাকৃতির পিলারের উপর একটি গম্বুজ বিশিষ্ট সৌধ ছিলো। ফিরোজা পাথরের নকশায় নির্মিত গম্বুজটি ছিলো মনকাড়া ও রুচিকর। ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় এভাবেই ছিলো এটি।

স্মৃতিস্তম্ভ থেকে স্মৃতি জাদুঘর: ১৮৫৪ সালে এসে মূলস্তম্ভে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হয়। সেলিম উগ্লু আব্দুল ওয়াহেদ স্থাপনার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কাজ করেন এবং সৌন্দর্যবর্ধনে হাত লাগান। খোদাইকৃত কাঠ নিয়ে সমাধি কুঠির চারপাশকেও সাজিয়ে তোলেন তিনি।

অষ্টদশ শতাব্দী শেষে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর কিছু পরে, অর্থাৎ ১৯২৬ সালে স্মৃতিস্তম্ভটিকে স্মৃতিজাদুঘরে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, এরই প্রেক্ষিতে সমাধির মূল স্থাপনা ও আশপাশের কিছু জায়গা নিয়ে নির্মান করা হয় জাদুঘর ভবন। সেলজুক ডিজাইনের ভবনটিতে চোখ ধাঁধানো সব স্থাপত্যশৈলীর অনুস্মরণ করা হয়েছে।

এক কথায় বলতে হয় স্থাপত্য সৌকর্যের দিক দিয়ে অসাধারণ ও মুগ্ধকর একটি স্থাপনা মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী জাদুঘর। ১৯২৭ সালের দুই মার্চে দর্শনার্থী ও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় 'মাওলানা জাদুঘর'। দর্শনার্থী ও দেশি বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী জাদুঘর তুরস্কের তৃতীয়তম সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র। এর আগে রয়েছে বহু পুরনো ভবন, আয়া সুফিয়া ও তোপকাপি প্রাসাদ।

যা রয়েছে জাদুঘরে: জাদুঘরের মূল অভ্যন্তরীণ জায়গাটাকে দরবেশ মাওলানা রূমী রহ. এর খানকাহ হিসেবে সবাই চিনে। গম্বুজটি এরই অংশ। গম্বুজের নিচে এক কোনে সমাধির অবস্থান। স্বর্ণ এবং সোনালি রঙের মখমল কাপড় দ্বারা সমাধিকে ঢেকে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। সমাধির পিছনদিকটায় রয়েছে প্রশস্ত একটি কামরা, এখানে মাওলানা রূমী রহ. এর স্মৃতিবিজড়িত ও তার রেখে যাওয়া কিছু ঐতিহাসিক আসবাবপত্র দেখতে পাওয়া যায়।

এর মধ্যে মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী রহ. এর ব্যবহৃত মোচাকার টুপি, নামাজের পাটি, একাধিক পোশাক এবং প্রাচীন কয়েকটি বাদ্যযন্ত্রসহ আরো কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন সামগ্রীর দিকেই মানুষের কৌতূহল বেশি। পারস্য বংশোদ্ভূত আফগানি এই সূফী সম্রাট মানুষের কাছে কি পরিমাণ প্রিয় তা টের পাওয়া যায় সমাধিস্থলে আসা দেশি বিদেশি পর্যটকদের ভীড় ও কোলাহলময় পরিবেশ দেখলে।

বছরের সব মৌসুমেই কোনিয়ার মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী জাদুঘরকে মনে হয় এ যেন কোন তীর্থভূমি, তীর্থযাত্রীদের সমাগমে সবসময় জায়গাটি যেন মুখরিত হয়ে আছে।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ