শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বিনাদোষে জাহালমের সাজায় দুদকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিনাদোষে জাহালমের জেল খাটার বিষয়ে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।

আজ বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে দুদকের দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদকের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) জালাল সাইফুর রহমানের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাহালমকে ভুল আসামি করা ৩৩ মামলা পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আদালতের আদেশে গঠিত দুদকের তদন্ত কমিটি ১১ জুলাই একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। সেখানে বিনা দোষে জাহালমের জেল খাটার বিষয়ে দুদক, মামলার পিপিসহ সব পক্ষের দায় ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে আদালত দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেন।

সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ৩৩টি মামলায় জাহালমের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুদক। এদিকে ওইসময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জাহালম বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি জাহালম। আবু সালেক না। আমি নির্দোষ।’

কিন্তু জুট শ্রমিক জাহালমের কোনো কথাই সেসময় পুলিশ কিংবা দুদক শোনেনি। এর ফলশ্রুতিতে আসল আসামি সালেকের পরিবর্তে জাহালমকেই কারাগারে যেতে হয়।

এ নিয়ে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে “৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে: ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে ২০১৪ সালে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। এর পর সালেককে তলব করে দুদক চিঠি দিলে সেই চিঠি পৌঁছায় জাহালমের টাঙ্গাইলের বাড়ির ঠিকানায়।

নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিক জাহালম তখন দুদকে গিয়ে বলেন, তিনি আবু সালেক নন, সোনালী ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্টও নেই। ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবু সালেকের যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও তার নয়।

কিন্তু দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা সেদিন জাহালমকেই ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেন। পরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোড়াশাল থেকে জাহালমকে গ্রেফতার করে দুদক। পরে আদালতেও জাহালম দুদকের পরিচয় বিভ্রাটের বিষয়টি তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। কিন্তু কেউ তার কথা শোনেননি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কারও কাছে সমাধান না পেয়ে জাহালমের বড় ভাই শাহানূর মিয়া গত বছর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে যান। তার আবেদনে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে জাহালমের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। পরে মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসে, আবু সালেক আর জাহালম একই ব্যক্তি নন।

কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মামলার অন্যতম আসামি নজরুল ইসলাম ওরফে সাগরের সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারে কমিশনের কথা হয়। তিনি জানান, আবু সালেক মিরপুরের শ্যামল বাংলা আবাসন প্রকল্পের মালিক।

প্রতিবেদনটি গত ৩০ জানুয়ারি বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।

২৭ জুন আদালত জাহালমের ঘটনায় দুদকের দায় আছে কি না, তা নির্ণয় করে গঠিত কমিটিকে ১১ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ