শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


জমি নিয়ে বিরোধ হলে কী করবেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: জমিজমাকে কেন্দ্রীক নানা ধরনের বিরােধ দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, নিজের কেনা জমি অন্য কেউ দখল করে মালিকানা দাবি করছে কিংবা জাল দলিল তৈরি করে জমির দখল নিচ্ছে। আবার অনেক সময় কেউ কেউ আদালতে মিথ্যা মামলাও ঠুকে দেয়। একটু সচেতন হলেই এ ঝামেলা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

জমি নিয়ে ঝামেলা হলে দুই ধরনের প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। একটি ফৌজদারি, অন্যটি দেওয়ানি। ফৌজদারি প্রতিকার: জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন কোনাে ব্যক্তি। জমি বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এর প্রতিকার চাইতে হবে।

মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার কে তা নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজনে স্থানীয় পুলিশকে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন। তাদের দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার কে, সে বিষয়ে রায় দেবেন বিচারক। তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। এর মাধ্যমে শুধু প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করার জন্য প্রতিকার চাওয়া যাবে।

মালিকানা দাবি করবেন যেভাবে: জমির মালিকানা বা স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। জমি অবৈধভাবে দখলচ্যুত হলে পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। এ আইনের ৮ ধারা অনু্যায়ী জমির মালিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে জমিটি পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতিকার চাইতে পারেন।

তবে ধারা অনু্যায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে জমিতে তার স্বত্ব বা মালিকানা আছে কিংবা মালিকানার দাবি রয়েছে, তার ঘােষণা চাইতে হবে। না হলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এটাকে সাধারণত স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলা হয়।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছেন, এমনটা প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনাে ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তার মাধ্যমে দাবিদার কোনাে ব্যক্তি মােকদ্দমার মাধ্যমে এর পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয় বাদী অর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবি করেছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না; বিবাদী তাকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না; বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না।

তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওযার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হবে তাকে। তবে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধারায় প্রতিকার চাওয়া যাবে না। কোথায় ও কীভাবে আইনের আশ্রয় নেবেন জমিজমার মালিকানা নিয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে। মামলার মূল্য মান চার লাখ টাকার কম হলে সহকারী জজ আদালতে এবং চার লাখের বেশি হলে অসীম এখতিয়ার পর্যন্ত যুগ্ম জেলা জজ আদালতে প্রতিকার চাইতে হবে। মামলা করতে হবে আইনজীবীর মাধ্যমে।

মালিকানাসহ দখলের প্রতিকার চাইলে জমির মূল্য বাবদ অ্যাড-ভ্যালােরেম (মূল্যানুপাতে) কোর্ট ফি দিতে হবে। ৯ ধারা অনুযায়ী শুধু দখলের জন্য প্রতিকার চাইলে সম্পত্তির মূল্য অনুসারে যে কোর্ট ফি তার অর্ধেক, অর্থাৎ অ্যাড-ভ্যালােরেম কোর্ট ফির অর্ধেক পরিমাণ কোর্ট ফি দিতে হবে। জমির মালিকানাসহ দখল কিংবা শুধু দখল চেয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে যদি বাদী মনে করেন তার জমিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন পৃথক আবেদনের মাধ্যমে।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ