বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজনীতি: এ সংকট নিরসন হবে কীভাবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক

বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যার নিন্দা দেশব্যাপী। ধর্ম বর্ণ ও ভিন্নমতের সকলেই এ বিষয়টিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে ধর্মীয় নেতা পর্যন্ত সকলই এ বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন।

তবে দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম মনে করেন, এ সকল অপরাধের শেকড় বহু আগ থেকেই ছাত্র সমাজের রোপন করে দেয়া হয়েছে। ধন সম্পদের লোভ, অবৈধ ক্ষমতার উল্লাস ও বিশেষ করে ধর্ম সম্পর্কে বেখবর থাকায় এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে সরকারি দলসহ অন্যান্য দলের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু এর থেকে উত্তরণের উপায় কী? এ বিষয়ে তিনজন বিজ্ঞ আলেমের মতামত তুলে ধরা হলো-

আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার করলে ভবিষ্যত অপরাধের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে
মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী, ওয়ায়েজ 

সমাজে নৃশংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং খুনের মানসিকতা বিস্তারের মূলে রয়েছে- নীতি, নৈতিকতার অবক্ষয়। এই অবক্ষয়ের দুটি কারণ। প্রথমত ছাত্র ও তরুণ সমাজকে আধুনিক শিক্ষার নামে ধর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। ধর্মীয় অনুভূতি থেকে মানুষ যত দূরে সরে যায়, তার মধ্যে ততবেশি পাশবিকতা প্রাধান্য পেয়ে থাকে। যার মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি রয়েছে, তার মধ্যে আল্লাহ ভীতি রয়েছে। আর এই আল্লাহ ভীতি তাকে ছোট থেকে বড় নানাবিধ অন্যায় অপকর্ম থেকে বিরত রাখে।

তাছাড়া বিচার না হওয়ার যে কালচার বাংলাদেশে শুরু হয়েছে, এ কারণে যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত, তারা মনে করে কোনো বিপদ হবে না। সুতরাং এ নৃশংস মনোবৃত্তি থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে প্রচলিত আইনের শাস্তি কার্যকর করতে হবে। অনেক বেশি প্রয়োজন শিশু, কিশোর, ছাত্র ও যুবকদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।

ইসলাম অন্যায়ভাবে খুনের শাস্তির বিধান দিয়েছে হত্যার বদলে হত্যা। অর্থাৎ কিসাসের বিধানের অর্থ হচ্ছে- কেউ যদি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে তাহলে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে খুনিকে শরয়ী বিচারব্যবস্থায় হত্যা করা হবে। বাংলাদেশ যেহেতু কোরআনি শাসন নেই কিন্তু প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় ও অন্যায়ভাবে খুনের শাস্তি এখানে ফাঁসি হিসেবে বলবৎ রয়েছে। তাই আপনার হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের ফাঁসির দাবি করছি।

অতীতে অনেকগুলো ঘটনা আমাদের সামনে এসেছে। সুতরাং বুয়েটের মেধাবী ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যার ভিডিও প্রমাণও যেহেতু জাতির সামনে চলে এসেছে। সে কারণে এই জঘন্য ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের শাস্তি ফাঁসি হওয়া উচিত। এমন বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যদি না হয়, তাহলে এরকম হত্যাকান্ড অহরহ ঘটতেই থাকবে। যদি প্রচলিত আইন কার্যকর করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বহু অপরাধের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।

জাতীয় ঐক্য গড়ার কাজে একদল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে
ইসলামিক একাডেমী লন্ডনের ডিরেক্টর ড. আব্দুস সালাম আজাদী

ছাত্র সমাজ সব সময় আবেগময়, বিবেকতাড়িত, অনুকরণপ্রিয় এবং স্বাপ্নিক হয়ে থাকে। আমাদের দেশে তাদের বানানো হচ্ছে লড়াই করার পদাতিক বাহিনী কিংবা ঢাল তলোয়ার হাতে নেয়া দুন্দভীর নিনাদে গর্জে ওঠা লাঠিয়াল। ফলে তারাও হয়েছে তাদের স্যারগণের মত অস্থির ও সুযোগসন্ধানী। কাজেই কেও কাওকে সহ্য করতে পারেনা। আমার মনে হয় এই জায়গাগুলোতে হাত দিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ার কাজে একদল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে এই মারমুখো ভাব কমবে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো- ইসলামে এ ধরণের হত্যাকান্ড হলে দুইটা বিষয় সামনে রাখতে বলে: এক: মানুষ সমাজের যাকেই আইন বহির্ভূত হত্যা করা হয়, সেই নিহত ব্যক্তির ব্যাপারে দৃষ্টি রাখা হয়, “সে একজন মানুষ”। হোক সে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ বা খৃস্টান। হোক সে লীগের, দলের, ইউনিয়নের বা শিবিরের। কুরআন বলে অন্যায়ভাবে এক ব্যক্তিকে হত্যা করার মানে তুমি মানবতাকে হত্যা করলে।

একজন মানুষকে হত্যা করা হলে তার আত্মীয়দের আল্লাহ সুযোগ দেন এই হত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার। এই ক্ষেত্রে সরকার থাকে নিউট্রাল। হত্যাকারীরাও সরকারের উপর দায় দায়িত্ব দেয় সঠিক অনুসন্ধান দ্বারা হত্যার আসল কারণ ও হত্যাকারীর সংশ্লিষ্টতার পরিমান নির্ধারণ করা। নিহত ব্যক্তির আত্মীয়রা আশা করে সরকার
তাদের হক আদায়ে নিষ্ঠার পরিচয় দেবে।

বিচারহীন সমাজ হয় পশুদের, আমরা তো জংগলের পশু নই
লন্ডন প্রবাসী আলেম খতিব তাজুল ইসলাম 

প্রথমত বলতে চাই, পৃথিবীর আর কোথাও, কোন দেশে দলীয় রাজনীতি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। হয়তো কোনো একসময় ছাত্র রাজনীতির পথ ধরে এ দেশের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় করা হয়েছিল। তাই এদেশে ছাত্র রাজনীতি করার প্রবণতা বেশি। দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হয়ে শিক্ষা ও সামাজিক সংগঠনমূলক কিছু থাকা বা করা যেতে পারে। ইউরোপের বিভিন্ন ইউনিতে লাল দল, সবুজ দল নাম ধারণ করে ইনডোর বিতর্ক ও রাজনীতির প্রাক্টিস করে তারা। কোন ক্রমেই দলীয় রাজনীতির অনুমোদন নেই।

সবচেয়ে খারাপ নজির হলো যে যতক্ষণ না সরকারের হাইকমান্ডের নির্দেশ আসবে বা নজর হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ ন্যায় বিচার আশা করেনা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়েছে বহুদিন যাবত। বিগত বিএনপি আমল থেকে বিচারহীনতার যাত্রা যা এখনো অব্যাহত আছে। আবরার হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারের দাবি জানাই। বিচারহীন সমাজ হয় পশুদের। আমরা তো জংগলের পশু নই।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ