মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


ইসলামের প্রসার ও কয়েকজন বিধর্মীর বক্তব্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবূ সাঈদ মুহাম্মদ সায়েম ।।

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার নাম। যার চিরন্তন শিক্ষা মানুষকে সবক দেয় নিরাপত্তা শান্তি উদারতা সহমর্মিতা ও কল্যাণকামিতার। ইহকালিন ও পরকালিন সৌভাগ্যসফলতায় মণ্ডিত হওয়ার উৎসও এই ইসলাম।

ইসলাম সামগ্রিকভাবেই দয়ার ধর্ম। ‘রাহমান-রাহীম—পরম করুণাময়’ এ ধর্মের পূজ্য সত্ত্বার গুণবাচক নাম। আর ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ এর নবী— বার্তাবাহক’ এর উপাধি।

এজন্যে ইসলামের সমস্ত শিক্ষার মাঝেই ভালোবাসা হৃদ্যতা দয়া ও আন্তরিকতার ছাপ প্রবল। ই

সলামের বাণী সর্বব্যাপী, সর্বজনীন। ইসলামই মানবতার সকল অমীমাংসিত বিষয় ও সমস্যার একমাত্র সমাধানস্থল। আর ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বমানবতার জন্যে হিতৈষী রূপে প্রেরিত।

তিনি সকলকে শান্তি নিরাপত্তা ভালোবাসা ঐক্য সমতাবিধান দয়া দাক্ষিণ্য ক্ষমা ন্যায়ানুগ হওয়ার শিক্ষা দান করেছেন। ইসলাম ও তার নবীর এই বিশেষ বৈশিষ্ট ও গুণের কারণেই এই ধর্ম পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত। তার পবিত্র দ্যুতির ছটায় এই পৃথিবীর অন্ধকার পঙ্কিল কোনগুলো উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে ক্রমান্বয়ে।

কালের পরিক্রমা ইসলামের বিস্তারের গতি শ্লথ করতে পারেনি সামান্যও। বরং তা যেন সময়ের সাথে সাথে হয়েছে আরো বেগবান।

ইসলামের এই বিস্ময়কর বিস্তার; সত্যবাদিতা ও ধারাবাহিক বিকশিত সৌন্দর্যের স্বীকারোক্তি অমুসলিম গবেষক এবং পশ্চিমা বিদ্বানদের মুখেও বিবৃত হয়েছে উদারভাবে।

ড. ডব্লিউ আরনল্ড ‘প্রীচিং অফ ইসলাম— ইসলামের দাওয়াত’ শিরোনামে লিখিত প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ইসলামের প্রসার তরবারির জোরে নয় বরং সন্ধি ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে হয়েছে।

ড. গুস্তাওলেবান ফ্রান্সিসি লিখেছেন— আরবে ইসলামের বিজয় ও সফলতার কারণগুলো খতিয়ে দেখলে উপলব্ধ হবে— ইসলাম প্রচারে তরবারির নূন্যতম ব্যবহার হয়নি। কেননা মুসলমানগণ সর্বদা বিজীত লোকদেরকে তাদের ধর্মপালনে স্বাধীন আখ্যায়িত করেছে।

সেসময় যেসব খ্রিস্টীয় ধর্মালম্বী বিজয়ী মুসলমানদের ধর্ম গ্রহণ করে তাদের ভাষাভাষী হয়ে যায়, তার কারণ মুসলমানদের বলপ্রয়োগ নয় বরং নিজেদের পূর্বের শাসকদের অন্যায় অত্যাচার আর নতুন মুসলমান শাসকদের ন্যায় ইনসাফ।

তারা যাচাই করে দেখেছে— আমাদের পূর্বের ধর্ম থেকে ইসলামই বেশি সত্য ও সরল। ইতিহাসের আলোকে প্রমাণিত— কোনো ধর্ম শক্তির জোরে প্রসারিত হতে পারে না। মোট কথা দ্বীনে ইসলাম মৌখিক কথন ও উৎসাহের মাধ্যমেই প্রসারিত হয়েছে।’

প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ উইলজ এর বর্ণনা— পৃথিবীতে ন্যায়ানুবর্তিতা ও ভব্যতার ধারা সৃষ্টির নির্দেশনাসম্বলিত প্রচুর বাণী রয়েছে। যেগুলো অবলম্বনে মানুষের মাঝে ভদ্রতা-শিষ্টাচার ও মহানুভবতার প্রাণ সঞ্চার হবে।

এই শিক্ষা উচ্চস্তরের মানবিক শিক্ষা। যে শিক্ষায় পরিচালিত হওয়া সকলের জন্যেই একান্ত আবশ্যক। ইসলামি আদর্শে পরিচালিত সমাজেই পূর্ববর্তী সকল সমাজ থেকে কম সংকীর্ণতা ও সামাজিক অবিচার রয়েছে।

ইসলাম বিকশিত হয়েছে নম্রতা উদারতা উন্নত চরিত্র এবং ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের মাধ্যমে।

মি. অরনল্ড লিখেছেন, মুসলিম শাসনের সূচনাকালে খ্রিস্টান প্রজাদের প্রতি মুসলমানদের অভাবনীয় ন্যায় ও ধর্মীয় উদারআচরণ প্রত্যক্ষের দ্বারাই উপলব্ধ হয়— ইসলাম তরবারির জোরে প্রসার লাভ করার প্রপাগাণ্ডা অসত্য, অবিবেচনাপ্রসূত।’

উপরোক্ত স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যগুলো একথাই স্পষ্ট করে দেয়, ইসলাম তার সরল আচরণ ও আকর্ষণক্ষমতার দ্বারা প্রসার লাভ করেছে। এখানে শক্তি প্রয়োগ অন্যায় অবিচারের বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই।

তথ্যসূত্র, ইসলামী তাহযীব কে দুরখশাঁ পহলু : ১২৮, নেযামে সালতানাত : ৩১৫,ইসলামী রওয়াদারী ১০-১২

লেখক: আলেম , শিক্ষক

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ