শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


শাইখুল হাদিস রহ. ছিলেন যুগের ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনাইদ বাবুনগরী। নিয়মিত রাজনীতির সাথে যুক্ত না থাকলেও নবীজির ইজ্জত রক্ষার আন্দোলনে হাদিসের মসনদ ছেড়ে নেমে আসেন রাজপথে। ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে নেতৃত্ব দিয়ে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যান। ৫মে’র রক্তাক্ত ট্রাজেডির পর ইলমে নববীর এই অক্লান্ত সাধক কারারুদ্ধ হন। জালিমশাহীর অন্ধকার কারাগারে বন্দি থেকে আকাবির ও আসলাফের ত্যাগ-কুরবানির চিরন্তন ধারাকে সমুন্নত করেছেন। সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন শাইখুল হাদীস রহ. এর ইলমি মাকাম ও ইসলামি আন্দোলনে অবদান সম্পর্কে। আলোচনাটি ধারণ করেছেন মুহাম্মদ এহসানুল হক। পাঠকদের জন্য আলোচনার চুম্বক অংশ।


এহসানুল হক : শাইখুল হাদীস রহ. এর সাথে প্রথম পরিচয়ের কথা কি মনে পড়ে?

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী : ছাত্রজীবন থেকেই হুজুরের নামের সাথে আমি পরিচিত। বুখারি শরিফের প্রথম বঙ্গানুবাদক হিসেবে হুজুরকে চিনতাম। না দেখে হুজুরকে শ্রদ্ধা করতাম একজন মুহাক্কিক ও সচেতন আলেমেদ্বীন হিসেবে। এবং একজন জলিলুল ক্বদর মুহাদ্দিস হিসেবে। আর শাইখুল হাদীস রহ. এর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হাফেজ্জি হুজুর রহ. এর নির্বাচনের সময়। তিনি হাফেজ্জি হুজুরের নির্বাচনী কাজে চট্টগ্রাম বাবুনগর এসেছিলেন। বড় বড় ওলামায়ে কেরামের একটা মজমা ছিল। চট্টগ্রামের মাওলানা মুফতি ইউসুফ সাহেব রহ., মুফতি আমিনী সাহেবসহ আরও অনেকেই ছিলেন। মুফতি আমিনী সাহেব তখন একেবারেই জোয়ান। আর হাফেজ্জি হুজুর রহ. তো ছিলেনই। ওই মজমায় হাফেজ্জি হুজুরের পরে শাইখুল হাদীসই ছিলেন সবচেয়ে বড় আলেম ও মুরুব্বি। সেদিনই হুজুরকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। এবং তখন থেকেই শাইখুল হাদীস রহ. এর ইলমি ওয়াকার, হাইবাত, আজমত আমার দিলে বসে যায়।

এহসানুল হক : ওই সময়ের আলোচনাগুলোর কিছু কথা কি মনে আছে ?

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী : মূলত রাজনৈতিক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছিলো। কুরআন হাদিস ও ইতিহাসের আলোকে ইসলামি রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো। আমরা সম্পূর্ণ একমত হয়েছিলাম ইসলামি রাজনীতি অত্যন্ত প্রয়োজন। আরও বিভিন্ন ইলমি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ইসলামের শাখাগত কিছু বিষয় নিয়েও কথা হয়েছিল। একটা বিষয় মনে পড়ে। শিয়াদের সম্পর্কে আলোচনা হয়েছিলো। তখন ইরানি বিপ্লব চলছে। আমি হুজুরের কাছে শিয়াদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলাম। হুজুর এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলে তারপর বললেন, আমরা তো এখন অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি। আপনি লালবাগে আসুন। তখন কথা হবে ইনশাআল্লাহ।

এহসানুল হক : হাফেজ্জী হুজুরের আন্দোলনে শায়েখের ভূমিকা কেমন দেখেছিলেন ?

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী : আমরা তখন জানতাম হাফেজ্জি হুজুরের পরে শাইখুল হাদীস সাহেবই হলেন এই আন্দোলনের ধারক বাহক। হুজুরকে আমরা খেলাফত আন্দোলনের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবেই মনে করতাম। মূলত শাইখুল হাদীস রহ. এর দ্বারাই এদেশে ইসলামি আন্দোলন সামনের দিকে এগিয়েছে। কারণ হুজুরের একটা ইলমি অবস্থান ছিল। দেশে বিদেশে হাজার হাজার শাগরেদ ছিল যারা তার কাছে ইলমে হাদিস অর্জন করেছেন। জনপ্রিয়তা গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুই হুজুরের বেশি ছিল। ওলামা মহলেও গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি ছিল হুজুরের। এজন্য হাফেজ্জি হুজুরের পরেই ছিল হুজুরের অবস্থান।

এহসানুল হক : শাইখুল হাদীস রহ. ইলমি মাকাম সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন ?

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী : দেওবন্দী ওলামায়ে কেরামের মধ্যে শাইখুল হাদীস রহ. এর ইলমি মাকাম ছিল অনেক বড়। সংক্ষেপে যদি বলি তাহলে বলবো, দেওবন্দী হালকার ওলামায়ে কেরামের মধ্যে দারুল উলূমের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের পর আমরা যাদেরকে অনেক বড় আলেম মনে করতাম, তাদের মধ্যে ছিলেন হাটহাজারির মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সাহেব রহ. শাইখুল হাদীস মাওলানা আবুল হাসান রহ.। আর ঢাকার দুইজন আলেমকে তাদের সেই মানের আলেম মনে করতাম। একজন হলেন মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ রহ.। অপরজন হলেন আমাদের শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.। লালবাগের এই দুইজন আলেমকে আমরা আকাবেরে দারুল উলূম হাটহাজারির সমপর্যায়ের মনে করতাম।

এহসানুল হক : শায়েখের বাংলা বুখারির ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কি ?

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী : কাজটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। প্রসিদ্ধি আছে যে বাংলা ভাষায় কুরআন শরিফের প্রথম অনুবাদ করেছে একজন হিন্দু। তার বিপরিতে আল্লাহ শাইখুল হাদীস রহ. কে কবুল করেছেন। তার মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ খেদমতটা নিয়েছেন। আমাদের দেওবন্দী হালকার একজন মুহাক্কেক আলেম, জালিলুল কদর মুহাদ্দিস, বুখারি শরিফের অনুবাদ করেছেন। এমন না হয়ে কোনো বেদআতি বা জামাতের কেউও তো করতে পারত। এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর খাস রহমত এবং আমাদের সৌভাগ্য যে আমাদেরই একজন মহান ব্যক্তি এই খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।

এহসানুল হক : ব্যক্তি শায়েখের আওসাফ বা গুণাবলো সম্পর্কে কিছু বলবেন?

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী : আল্লাহ তায়ালা হযরতকে অনেক কামালাত দান করেছেন। ইলমি ময়দানে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আমলের ময়দানেও আমি হুজুরকে বড় একজন শখসিয়ত মনে করি। শাহসওয়ারে ইলম ও আমল ছিলেন। তার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে যতটুকু জানি তার সন্তান সন্ততিসহ পরিবারে প্রায় আশিজন সদস্য হাফেজে কুরআন, মাশাআল্লাহ। এর দ্বারা বুঝা যায়, কুরআনের প্রতি হুজুরের এক ধরনের ইশক-ভালবাসা ছিল। তিনি আশেকে কুরআন ছিলেন। তা না হলে এমনভাবে এলতেজাম করা সম্ভব হত না। শাইখুল হাদীস রহ. এর জীবনের অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য একটা কারনামা ছিল এই, নিজের পরিবার পরিজনকে হাফেজ আলেম বানিয়েছেন। দ্বীনের উপর রেখেছেন। এর পেছনে অনেক বেশি মেহনত করেছেন। অনেক বড় বড় মুহাক্কিক আলেম আছেন, দেখা যায় সন্তানেরা আলেম হয়নি। তার অনুসারি হয়নি। শাইখুল হাদীস রহ. এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম।

তিনি শরিয়তের আহকামের যেমন অনেক বড় আলেম ছিলেন, তেমন তরিকতের লাইনেও অনেক মেহনত করেছেন। মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরি রহ. হাফেজ্জি হুজুর রহ. মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানি রহ. মাওলানা যফর আহমদ উসমানি রহ. এর মত বড় বড় ব্যক্তিদের সুহবতে থেকেছেন দীর্ঘদিন। বিশেষ করে দেওবন্দি হালকার আকাবেরে আহলে ইলমের হাতে তার গঠন হয়েছে। তিনি তরিকতের জগতেও বড় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এ ক্ষেত্রেও তার অবদান অনেক। এই হিসেবে বলা যায়, তার ইলমি কামালাতের সাথে আমলি কামালাতও ছিল।

[caption id="" align="aligncenter" width="409"] সাক্ষাতকার গ্রহণকারী এহসানুল হক[/caption]

এহসানুল হক : শাইখুল হাদীস রহ. এর রাজনীতি ও ইসলামি আন্দোলন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি ?

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী : সিয়াসাতের ব্যাপারে ইমাম গাযালী রহ. ইহয়াউ উলুমিদ্দীন কিতাবের তৃতীয় খন্ড বলেছেন ‘দ্বীন ও রাষ্ট্র জমজ বাচ্চার মত, একটা আরেকটা থেকে পৃথক হয় না।’ আমারও বিশ্বাস এটা। ইসলাম ও রাজনীতি একটা আরেকটার সহযোগী, বিরোধী নয়। সচেতন আলেমদের অনেকেই যে সিয়াসাতের লাইনে খেদমত করেছেন, এটাও ইসলামের একটা বড় খেদমত। বাংলাদেশে এই ময়দানে যারা মেহনত করেছেন তাদের মধ্যে বিশেষভাবে কয়েকজনের নাম উল্লেখযোগ্য। যেমন মাওলানা আতহার আলি রহ., আমাদের চট্টগ্রামের খতিবে আযম রহ., জীবনের শেষের দিকে হযরত হাফেজ্জি হুজুর রহ.। ইসলামি রাজনীতির ময়দানে খেদমতের দিক দিয়ে হযরত শাইখুল হাদীস রহ.ও তাদের কাতারেরই ছিলেন।
বিশেষভাবে বলতে হয় শাইখুল হাদীস রহ. এর রাজনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তার রাজনীতি দুনিয়ার কোনো ক্ষমতার রাজনীতি ছিল না, তিনি কেবল মাত্র দ্বীন ইসলামের খেদমতের উদ্দেশ্যে রাজনীতি করেছেন।

এহসানুল হক : আন্দোলনের ময়দানে শায়েখের বড় কাজ মনে করেন কোনটা ?

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী : অনেক কাজই তো করেছেন। বললে শেষ হবে না। তবে বাবরি মসজিদ অভিমুখে যে লংমার্চ তিনি করেছিলেন এটা ছিল হুজুরের বে নজির, বে মেসাল খেদমত। আমার জানামতে আলেমদের মধ্যে কেউ ইতোপূর্বে এমন লংমার্চ করেনি। আল্লাহর ঘর একটা মসজিদকে হেফাজত করার জন্য তিনি আন্দোলন করেছিলেন। তিনি মসজিদের অবমাননা সহ্য করতে পারেননি। একটা মসজিদের ইজ্জত রক্ষার জন্য তিনি যে ভূমিকা নিয়েছিলেন তা সত্যিই অতুলনীয়। সুবহানাল্লাহ! এটা তার জীবনের অনেক বড় একটা অবদান।

আমি শাইখুল হাদীস রহ. এর জানাজার সময়ও বলেছিলাম। ইমাম আহমদ রহ. চল্লিশ হাজার হাদিস সম্বলিত কিতাব লিখেছেন মুসনাদে আহমদ। আবার হাম্বলি ফিকহের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। সেই তিনিই তার যমানার মু‘তাযিলাদের খলকে কুরআনের মিথ্যা দাবির বিরুদ্ধে মোকাবেলা করেছিলেন। আব্বাসি খেলাফতে মু‘তাযিলাদের প্রভাবের সুযোগে তারা দাবি তুললে সমস্ত আহলে সুন্নত আলেমদের পক্ষে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. প্রতিবাদ করে বলেন, ‘কুরআন আল্লাহর কালাম, এটা কোনো মাখলুক নয়।’ যে কারণে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. কে গ্রেফতার করা হয়। অনেক নির্যাতন তিনি সহ্য করেন। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারি রহ. বলেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. কে ত্রিশটি দোররা মারা হয়েছিল। যার একটি কোনো হাতিকেও যদি মারা হতো তাহলে সেই হাতিও সহ্য করতে পারত না। এমন জুলুমের শিকার হয়েও তিনি বাতিলের সাথে কোনো ধরনের আপোস করেননি। ইবনে কাসির রহ. লিখেন, যখন ইমাম আহমদের জানাজা হলো তখন পঁচিশ লক্ষ মানুষ তাতে শরিক হন। ওই সময় পঁচিশ লক্ষ মানুষ সাধারণ কোনো ঘটনা ছিল না।

শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব রহ. কে আমি এই যমানার আহমদ ইবনে হাম্বল মনে করি। তিনি কিতাব লিখেছেন। দরসের খেদমতও করেছেন। আবার অন্যায়ের প্রতিবাদও করেছেন। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিবাদে লংমার্চও করেছেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগসহ যেকোনো বাতিল সরকারের বিরুদ্ধে তিনি আওয়ায তুলেছেন। তিন সরকারের আমলেই তিনবার জেলে গেছেন। ইমাম আবু হানিফার কারাবরণের সুন্নত পালন করেছেন।

শাইখুল হাদীস রহ. এর ব্যাপারে আমার খুব বড় একটা মুগ্ধতার বিষয় হলো তিনি দুই ক্ষেত্রেই কাজ করেছেন। একদিকে ইলমি খেদমত, অন্যদিকে আবার রদ্দে বাতিলও করেছেন। বিশেষত বাবরি মসজিদের লংমার্চটা আমাকে খুবই আন্দোলিত করেছে। তাদের অনুসারী হিসেবে আমরাও ৬ই এপ্রিলে লংমার্চ করলাম। ওই সময় লালবাগে একটা সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। সেখানে সাংবাদিকরা আমাকে প্রশ্ন করেছে ‘লংমার্চ তো কার্ল মার্ক্সের তরিকা। আপনারা এটা কেনো করছেন?’ হঠাৎ আমার মনে কিছু কথা চলে এল। বললাম, ‘এটা কার্ল মার্ক্সের আদর্শ আপনাদের কে বললো ? এটা আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. এর আদর্শ। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বহু দূর দূরান্তে গেছেন জিহাদের জন্য তাবুক গেছেন, খায়বার গেছেন। বিশাল এলাকা পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন বাতিলের মোকাবিলার জন্য। পায়ে হেঁটে গেছেন তো লংমার্চই তো করেছেন নাকি! লংমার্চ একেবারে আক্ষরিক অর্থেই বাস্তবায়ন করেছিলেন। এই কথা শুনে সবাই চুপ মেরে গেছে। হেফাজতের আন্দোলনের আগে হাটহাজারিতে একটা বিশাল সমাবেশ হয়েছিল। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে আমরা লংমার্চ ও অবরোধ দুটোই করব। আমরা যখন লংমার্চের কথা আলোচনা করছিলাম তখন শাইখুল হাদীস সাহেব রহ. এর লংমার্চের কথা আমার মনে পড়ছিল। আমরা তাদের অনুসারী হিসেবেই লংমার্চ করেছি।

এহসানুল হক : শায়েখের জীবন থেকে কি শিক্ষা নিতে বলবেন?

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী : শায়েখের জীবন থেকে সর্বপ্রথম ছাত্রদের আমি যে শিক্ষা নিতে বলব তা হলো, তারা যেন মেহনত করে পড়াশোনা করে। ইলমি দক্ষতা ও ইলমি রুসুখ অর্জন করে। ইলমি মজবুতি ছাড়া তাবলিগ, রাজনীতিসহ দ্বীনের কোনো খেদমতই ভালোভাবে করা যায় না। ছাত্রদের প্রতি আমার নসিহতÑ ছাত্ররা যেন হযরতের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে ইলমি রুসুখ-গভীরতা অর্জন করে। শাইখুল হাদীস সাহেব তো আর আসবেন না। ছাত্ররাই শাইখুল হাদীসের মত গড়ে উঠুক। আর পড়াশুনা থেকে ফারেগ হওয়ার পর ইলমে বাতেন তথা তাসাওউফের ময়দানেও কিছু মেহনত করা দরকার আলেমদের জন্য। শাইখুল হাদীস রহ. এটাও করে গেছেন। আর ওলামায়ে কেরামের খেদমতে আরজ করব। আলেমগণ যেন শুধু মাদরাসা নিয়ে পড়ে না থাকেন। ইলমের লাইনেও খেদমত করতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার কাওমি মাদরাসাকে বাদ দেয়া যাবে না। সাথে বাতিল গোষ্ঠি তাগুতি গোষ্ঠির মোকাবেলা যখন যেভাবে করা দরকার সেভাবেই করতে হবে। শাইখুল হাদীস সাহেব রহ. এর জীবন থেকে ওলামায়ে কেরামের এই শিক্ষা লাভ করা জরুরি। শায়েখের জীবন থেকে আমাদের এটাও শেখার আছে যে জনসাধারণের সাথে সম্পর্ক রাখা আমাদের জন্য একান্ত জরুরী। তাদের প্রতি সময় সুযোগ মত বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াজ নসিহত করতে হবে। দ্বীনের প্রতি ধাবিত করার চেষ্টা করতে হবে।

শায়েখ নিজের পরিবারকে যে আলেম বানিয়েছেন এবং পারিবারিকভাবে দ্বীনের পরিবেশ কায়েম করেছেন এটা তার অনেক বড় অবদান। এখান থেকেও আমাদের শেখার আছে যে আমাদেরকে নিজের সন্তান সন্ততি হাফেজ আলেম বানানোর দিকে মনোযোগী হতে হবে। দ্বীনের ধারক ও দায়ী ইলাল্লাহ হিসেবে তাদের গড়ে তুলতে পারি। আর তার সন্তানেরাও মাশাআল্লাহ যোগ্য। জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেব । মাওলানা মামুনুল হক সাহেব, বাতিলের বিরুদ্ধে বজ্রকন্ঠ। আমার সাথে তাদের খুবই ভালো সম্পর্ক। আমি তাদের জন্য দোয়াও করি। আল্লাহ যেন তাদেরকে পিতার যোগ্য স্থলাভিষিক্ত হিসেবে কবুল করে নেন। এবং দোয়া করছি আল্লাহ যেন শায়খের শূন্যস্থান তাদের মাধ্যমে পূরণ করেন। আর শায়েখের রেখে যাওয়া দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও দোয়া করি, মাহফুজুল হক সাহেবের ও আসাতিজায়ে কেরামের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগুলোর আরও উন্নতি হোক। এর পাশাপাশি বুখারি শরিফের তরজমা, মসনবি শরিফের তরজমাসহ শায়েখের যত প্রকাশিত অপ্রকাশিত রচনা আছে সবগুলোর সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে সুন্দরভাবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হোক।

- সৌজন্যে মাসিক রাহমানী পয়গাম 

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ