শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী: স্মরণে মননে জুনায়েদ জামশেদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ: জুনায়েদ জামশেদ রাহিমাহুল্লাহ। আজ তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে না থাকলেও সংগীতপ্রিয় এবং বিশ্বাসী মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন চিরদিনের জন্য। বিশ্ববাসী আজ এ শিল্পীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। জুনায়েদ জামশেদ রাহিমাহুল্লাহ একাধারে রেকর্ডিং শিল্পী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন ডিজাইনার, প্রকোশলী ও গায়ক-গীতিকার ছিলেন।

১৯৬৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের করাচিতে তার জন্ম৷ বাবা জামশেদ আকবর খান ও মা নাফিসা আকবরের ৩ ছেলে ১ মেয়ের মাঝে তিনি ছিলেন সর্বপ্রথম৷ তার ভাইদের নাম হুমায়ুন জামশেদ, ওমর জামশেদ৷ আর বোনের নাম মুনিজা জামশেদ৷ তিনি ১ ছেলে ১ মেয়ের জনক ছিলেন৷ মেয়ের নাম আয়েশা জুনায়েদ৷

[caption id="" align="alignnone" width="1200"]'দিল দিল পাকিস্তান' গায়কের 55 তম জন্মদিন জুনায়েদ জামশেদ রাহিমাহুল্লাহর শুরুর জীবন[/caption]

জুনায়েদ জামশেদ ইসলামি সংগীত জগতে নতুন ও নিজস্ব একটি ধারা তৈরি করেছিলেন। এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান, পপ গানের শিল্পী হিসেবেই তাকে এক সময় পাকিস্তানিরা চিনলেও তিনি কখনও সংগীতকে পেশা হিসেবে নিতে চাননি।

তিনি জানান, গান গাওয়ার সময়েই তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর যুদ্ধ বিমানের পাইলট হতে চেয়েছিলেন। চোখের দৃষ্টিজনিত সমস্যার কারণে তার এ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বিমানবাহিনীতে অল্প কিছুদিন বেসামরিক ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন।

বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জামশেদের ছেলে জুনায়েদ লাহোরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গ্রাজুয়েশন করেন৷

[caption id="" align="alignnone" width="714"]'দিল দিল পাকিস্তান' গায়কের 55 তম জন্মদিন পপ গান গাওয়ার সময়[/caption]

এরপর শখের বশেই রাহেল হায়াত ও শাহজাদ হাসানের সঙ্গে ১৯৮৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশাত্মবোধক গান ‘দিল দিল পাকিস্তান’ গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন দেশের প্রথম পপ ব্যান্ড ‘ভাইটাল সাইন'৷ এ যেন দূর্দান্ত সূচনা।

প্রথম এ্যালবাম 'দিল দিল পাকিস্তান' তাকে এনে দেয় আকাশচূম্বী খ্যাতি। এ্যালবামটি দেশের সংগীত চ্যানেল তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। প্রথম Vital Sings গায়ক ভোকালিস্ট হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সংগীত ‘কসম উস ওয়াক্ত কি’ এবং বিমানবাহিনীর ‘পালাটনা ঝাপাটনা’রও শিল্পী তিনি। এ ছিল এক জুনায়েদ জামশেদ। ২০০৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ‘দিল দিল পাকিস্তান’ বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় গান হিসাবে স্থান পেয়েছে।

২০০৩ সালে সংগীতের ঈর্ষনীয় এই সফল ক্যারিয়ারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘না’ বলেন তিনি। রঙ্গিন দুনিয়ার ইতি টানেন। অর্থ আর খ্যাতির বদলে বেছে নেন ঈমানের পথ।

তার পথ পরিবর্তনের অনুভূতি ছিল এ রকম, তিনি বলেন, ‘আমার আগের জীবনযাপনের কোনো দৃষ্টিভঙ্গী এখন আর অবশিষ্ট নেই। আমার নতুন জীবন খুব সরল, পবিত্র ও সুন্দর।’

[caption id="" align="alignnone" width="1200"]'দিল দিল পাকিস্তান' গায়কের 55 তম জন্মদিন জুনায়েদ জামশেদ মাওলানা তারিক জামিল ও আমির খান[/caption]

নতুন জীবনে ইসলামি সংগীত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তার জন্য গান লিখছেন পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেম  মুফতি তাকী উসমানি, জুলফিকার আহমাদ নকশবন্দিসহ কিংবদন্তিজন।

হৃদয়ের গভীর থেকে আসা কথামালা তাঁর দরদী কন্ঠে হয়ে উঠে অসাধারণ! আবেদনীয়!  ফলে তিনি পাকিস্তান এমনকি সারা বিশ্বকে ইসলামী গান দিয়েও তাক লাগিয়ে দিলেন। নতুন করে কোটি মানুষ জানলো দীনের দাঈ ও হামদ-নাত শিল্পী জুনায়েদ জামশেদকে।

একেএকে অসামান্য হিট এ্যালবাম উপহার দিতে থাকলেন। প্রতিটি গান আগেরটির তুলনায় বেশি প্রশংসনীয় হতে লাগল। ১৯৯৯ তে ‘উস রাহ পর’, ১৯৯৩ তে ‘মেরা দিল’, ২০০৫ সালে ‘মুহাম্মদ কা রওজা’, ২০০৬ সালে ‘মেহবুবে ইয়াজদান’, ২০০৮ সালে ‘ইয়াদে হারাম’, ২০১২ সালে ‘দিল দিল পাকিস্তান’, ও ২০১৬ সালে ‘উম্মাতি’ ছিল তার আলোচিত এ্যালবাম।

তিনি জেডট নামে পোশাক তৈরি শুরু করেছিলেন, যা পাকিস্তান সহ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড।

২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের স্থানীয় সময় বিকেল চারটে ৪০ মিনিটে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয় ৪৭ আরোহী৷ বিমানে বিশ্বখ্যাত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জুনায়েদ জামশেদ স্বপরিবারে অবস্থান করছিলেন৷ বিমানের অন্যান্য আরোহীর সঙ্গে স্বপরিবারে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন)৷

জুনায়েদ জামশেদ রাহিমাহুল্লাহর জীবন কনসার্ট হলে শুরু হয়েছিল এবং শেষ হয়েছে একটি পাহাড়ের উপরে গিয়ে। কিন্তু তার কণ্ঠ ও অনুকরণীয় কাজ আজও মানুষের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা তার কবরকে সুশীতল করুন। আমিন।

আরএম/

 

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ